বড়দের কথায় আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার সুযোগ আছে কি?

জিজ্ঞাসা–১৮৩৪: আমার মা মারা গেছে ৫ বছর হয়। আমার মায়ের বাড়ির আত্মীয়রা আমাদের কোন খোঁজখবর নেয় না। আমরাই বরং তাদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা আমাদের পরিবার এবং আমার গুজব নিয়ে সর্বদা একে অন্যের মাঝে এবং আমার স্বামীর কাছে সমালোচনা করে। এতে আমার স্বামী এবং বাবা দু’জনেই আমাদের এবং আমাকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বারণ করছে। তারপরেও আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করে থাকি। ফলে আমার স্বামী আমার উপর মাঝে মাঝে ভীষণ খুব্ধ হয়। সে বার বার বুঝাতে চায়, তাদের কারণে আমার মান-সম্মানে আঘাত হানে এবং তারা আমাদের ক্ষতি চায়। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, আমি কি আমার মায়ের বাড়ির আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখবো কি না? কারণ, হাদিসে আছে আত্মীয় ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আবার এদিকে স্বামীর আদেশ, এখন আমার করণীয় কি?–Sadman Sifat

জবাব:

কোরআন-সুন্নাহর বহু বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। যেমন এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ

আত্নীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহীহ মুসলিম ৬২৯০)

সুতরাং আপনার স্বামীর ও আপনার বাবার প্রশ্নোক্ত নির্দেশ নিঃসন্দেহে অন্যায়। আপনার জন্য জরুরি নয় তাঁদের উক্ত নির্দেশ হুবহু মেনে চলা। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,

فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ

অসৎকাজে আনুগত্য নয় ;আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫ মুসলিম ১৮৪০)

সুতরাং আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হল,

১. আপনি প্রথমত হেকমত ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন যে, নিজেকে উভয়মুখী সংকট থেকে দূরে রেখে কমপক্ষে সালাম দেয়া ও নেয়ার মাধ্যমে উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে নূন্যতম সম্পর্ক ধরে রাখার। হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন,

تزول الهجرة بمجرد السلام ورده

আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি কেবল সালাম দেয়া ও সালামের উত্তর দেয়া দ্বারা দূর হয়ে যায়। (ফাতহুল বারী ১০/৪৯৬)

২. এরপরেও যদি আপনার প্রবল আশংকা এই হয় যে, আপনি উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে আপনার দীনের ক্ষতি হবে, আপনি গীবত মিথ্যাচার কিংবা অন্য গুনাহয় জড়িয়ে পড়তে পারেন তাহলে এমতাবস্থায় দীনের ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে উক্ত আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুমতি আছে। যেমন ইবনু আব্দিল বার রহ. বলেন,

وأجمع العلماء على أنه لا يجوز للمسلم أن يهجر أخاه فوق ثلاث إلا أن يكون يخاف من مكالمته وصلته ما يفسد عليه دينه ، أو يولد به على نفسه مضرة في دينه أو دنياه ، فإن كان ذلك فقد رخص له في مجانبته وبعده ، ورب صرم [أي : مقاطعة وهجر] جميل خير من مخالطة مؤذية

আলেমগণ একমত হয়েছেন যে, কোনো মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা জায়েয নেই। তবে যদি কথা বলা কিংবা সম্পর্ক রক্ষার কারণে নিজের দীনদারি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ভয় থাকে কিংবা দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতির ভয় থাকে তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করার অনুমতি আছে। কেননা, অনেক সময় সম্পর্ক রক্ষার চাইতে দূরে থাকাটাই অধিক নিরাপদ হয়। (আততামহীদ ৬/১২৭)

৩. সর্বোপরি আপনি আপনার উক্ত আত্মীয়ের হেদায়েতের জন্য দোয়া করতে কখনও ভুলবেন না। কেননা, এটাও একপ্রকার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ دَعَا لِأَخِيهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ قَالَ الْمَلَكُ الْمُوَكَّلُ بِهِ : آمِينَ ، وَلَكَ بِمِثْلٍ

মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে দোয়াকারীর মাথার কাছে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা থাকে। যখনই তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা তার দোয়া শুনে আমীন বলতে থাকে এবং বলে, তুমি যে কল্যাণের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ অনুরূপ কল্যাণ তোমাকেও দান করুন। (মুসলিম ২৭৩২)

والله أعلم بالصواب