বিয়ে করলে সংসারে ঝামেলা হতে পারে; তাহলে কি বিয়ে করবে না?

জিজ্ঞাসা–১৮৭০: কোনো ছেলে যদি পারির্শ্বিকতা দেখে এটা বুঝতে পারে যে, বিয়ে করে বউ ঘরে আনলে সেই মেয়েটিকে তার পরিবার যথাযথ সন্মান দিবে না বা ছেলের আত্নীয়রাই সংসার ভাঙ্গার চেষ্টা করবে সম্পত্তিজনিত কারণে তখন ঐ ছেলের পক্ষে বাকি জীবনে বিয়ে করা ঠিক হবে?–ধন্যবাদ–ঢাকা থেকে। 

জবাব:

এক.

পরিবারের বৈরি পরিবেশের কারণে বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং যদি নিজের উপর হারাম কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকা করেন তাহলে তার উচিত বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়া। কেননা যে ব্যক্তির অবস্থা এমন তার বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত ভুল। হ্যাঁ, মানুষ বিয়ে না করেও মুত্তাকী হতে পারে; তবে এটি খুবই বিরল। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা বিয়ে করে না তারা দুই শ্রেণীর মানুষ হতে পারে: অক্ষম কিংবা ব্যভিচারী। ওমর বিন খাত্তাব রাযি. জনৈক অবিবাহিতকে লক্ষ্য করে এমনটিই বলেছেন। তিনি বলেন,

ما يمنعُك من النِّكاحِ إلَّا عجزٌ أو فجورٌ

তোমাকে বিয়ে করতে বাধা দিচ্ছে- হয়তো অক্ষমতা; নয়তো পাপাচারিতা। (আলইসাবা ৪/৭৮)

কুরআন মজিদেও বিয়েকে পোশাকতুল্য বলা হয়েছে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এ কথা বুঝানো যে, সামর্থ্য থাকার পরও কোনো নারী-পুরুষের জন্য অবিবাহিত থাকা দোষণীয়। (হুকুকুল জাওযাইন ১৬৬)

আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘বিয়ে সুন্নত না ফরয?’ তখন তারা উত্তর দিয়েছিল,

وقد يكون في حق بعض الناس فرضا إذا خشي على نفسه من الوقوع في الفاحشة واستطاع مؤنة النكاح

কিছু লোকের ক্ষেত্রে বিয়েটা ফরয হয়ে যায়; যদি খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয় করে এবং বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে। (ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা লিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, ফাতওয়া নং ৯৬২৪)

দুই.

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, পরিবারের বৈরি পরিবেশের কারণে যা কিছু আশংকা করা হচ্ছে তা না-ও হতে পারে। কেননা, অনেক সময় এমন হয়, আজ যে জিনিস পাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব থাকি, দু’ দিন পরই তা পেয়েছি বলে উৎকণ্ঠিত হই। আবার আজ যা থেকে দূরে সরে থাকার ব্যাপারে চেষ্টিত থাকি, কয়েক দিন পর তা পেয়েছি বলে আনন্দিত হই। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারা ২১৬)

সুতরাং অহেতুক আশংকা না করে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করুন। وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। (সূরা তালাক ৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ : ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ

অর্থাৎ, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তায়ালার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ্ তায়ালার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহিত ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়। (তিরমিযী ১৬৫৫, নাসায়ী ৩২১৮)

তিন.

কারো কারণে সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা করে থাকলে নিম্নের দোয়াগুলো বেশি করে পড়ুন–

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنْ جَهْدِالْبَلَاءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوْءِ الْقَضَاءِ و شَمَاتَةِ الْاَعْدَاءِ

অর্থাৎ, হে আল্লাহ, অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরাবস্থা, দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দভাগ্য এবং দুশমনের হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি। (বুখারি ৬৩৪৭)

اَللّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِيْ نُحُوْرِهِمْ وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখী করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ।

আবু মুসা আল-আশআরী রাযি.থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ যখন কোন সম্প্রদায় দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করতেন তখন দোয়াটি বলতেন। (আবূদাউদ ১৫৩৭)

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন