মহিলারা মসজিদে যেয়ে নামাজ পড়তে পারবে কি?

জিজ্ঞাসা–১৫৯২: মহিলারা মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে পারে কি?–রাকিবুল হক মল্লিক।

জবাব:

এক. সম্মানিত প্রশ্নকারী ভাই, হাদিসে অবশ্যই মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে বিভিন্ন হাদিসে পরিস্কারভাবে এও বলা হয়েছে, মসজিদে যাওয়া তাদের জন্য জরুরি নয় ;বরং  মসজিদ অপেক্ষা ঘরে নামাজ আদায় করা তাদের জন্য উত্তম। যেমন, হযরত উম্মে  হুমাইদ আস সাআদী রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাই। নবী করীম ﷺ উত্তরে বললেন,

 قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلاةَ مَعِي وَصَلاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ وَصَلاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلاتِكِ فِي دَارِكِ وَصَلاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلاتِكِ فِي مَسْجِدِي قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ حَتَّى لَقِيَتْ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ

আমি ভালো করেই জানি, তুমি আমার পিছনে নামাজ আদায় করতে চাও। কিন্তু তোমার জন্য তোমার রুমে নামাজ আদায় করা অন্য রুমে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার ঘরের কোনো রুমে আদায় করা বাড়িতে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার  বাড়িতে নামাজ আদায় করা কওমের (এলাকার ) মসজিদে আদায় করার চেয়ে উত্তম। আর তোমার কওমের (এলাকার ) মসজিদে নামাজ আদায় করা আমার পিছনে নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম। এরপর ঐ মহিলা তার অন্ধকার কুঠরিতে নামাজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে নেয়। এবং মৃত্যু পর্যমত সেখানেই নামাজ আদায় করতে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৪৫)

দুই. আর অনুমতিটাও আছে অনেক কঠোর শর্ত সাপেক্ষে। যেমন, আরববিশ্বের প্রখ্যাত আলেম শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনাজ্জিদ বলেন,

أذن للمرأة بالخروج للمسجد وفق الأحكام الآتية : 1-أن تؤمن الفتنة بها وعليها . 2- أن لا يترتب على حضورها محذور شرعي . 3- أن لا تزاحم الرجال في الطريق ولا في الجامع . 4- أن تخرج تَفِلَة . أي : غير متطيبة . 5- أن تخرج متحجبة غير متبرجة بزينة . 6- إفراد باب خاص للنساء في المساجد ، يكون دخولها وخروجها منه ، كما ثبت الحديث بذلك في سنن أبي داود وغيره . 7- تكون صفوف النساء خلف الرجال . 8- خير صفوف النساء آخرها بخلاف الرجال . 9- إذا ناب الإمام شيء في صلاته سبح رجل ، وصفقت امرأة . 10- تخرج النساء من المسجد قبل الرجال ، وعلى الرجال الانتظار حتى انصرافهن إلى دورهن ، كما في حديث أم سلمة رضي الله عنها في صحيح البخاري وغيره

নিম্নোক্ত বিধিবিধানের আলোকে মুসলিম নারীকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে:

(১) সে নিজে ফিতনায় পড়া অথবা তার দ্বারা অন্য কেউ ফিতনাগ্রস্ত হওয়া থেকে আশংকামুক্ত হতে হবে। (২) তার সেখানে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কোন বিষয় সংঘটিত হতে পারবে না। (৩) রাস্তায় অথবা মসজিদে পুরুষদের সাথে ভিড় করতে পারবে না। (৪) সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবে না। (৫) পরিপূর্ণ হিজাব পরিধান করতে হবে, যাতে কোন প্রকার সৌন্দর্য প্রকাশ না হয়। (৬) নারীদের জন্য মসজিদের আলাদা প্রবেশপথ থাকতে হবে। যাতে নারীরা সে পথ দিয়ে প্রবেশ করতে পারে ও বের হতে পারে। এই প্রসঙ্গে সুনানে আবু দাউদ ও অন্যান্য গ্রন্থে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। (৭) নারীদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হতে হবে। (৮) নারীদের কাতারের মধ্যে উত্তম হলো সর্বশেষ কাতার। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত। (৯) যদি ইমাম নামাযে কোন ব্যতিক্রম করে তবে পুরুষরা তাসবীহ পাঠ করবে এবং নারীরা ডান হাতের তালু দিয়ে বাম হাতের কব্জির উপর তালি দিয়ে শব্দ করবে। (১০) নারীরা পুরুষদের আগে মসজিদ থেকে বের হবে। নারীরা ঘরে পৌঁছা পর্যন্ত পুরুষরা অপেক্ষা করবে। এ প্রসঙ্গে উম্মে সালামাহ রাযি. থেকে সহীহ বুখারীতে ও অন্যান্য কিতাবে হাদিস প্রমাণিত হয়েছে। (https://islamqa.info/ar/answers/49898)

তিন. প্রশ্নকারী ভাই, এখনও কোথাও এসব শর্ত পাওয়া গেলে মহিলারা মসজিদে যেতে চাইলে অনুমতি দেয়ার অবকাশ অবশ্যই আছে। কিন্তু নবী-যুগের পর যখন উক্ত শর্তগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে তখন সাহবায়ে কেরাম তা উপলব্ধি করতে পেরে মহিলাদের মসজিদে গমনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি  করে দিয়েছেন। আর এটা তো স্বতসিদ্ধ কথা যে, নবীজির কথা কিংবা  চাহিদা সাহবায়ে কেরামের চাইতে বেশি কেউ বুঝেছে বলে দাবি করা কিংবা তাদেরকে আদর্শ মনে না করা নিতান্ত মূর্খতা বৈ কিছু নয়।

নিম্নে সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যসমূহ থেকে কিছু বক্তব্য উল্লেখ করা হল-

১.আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَوْ أَدْرَكَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِي إِسْرَائِيلَ

‘যদি রাসুলুল্লাহ ﷺ বর্তমানকালের মহিলাদের অবস্থা দেখতেন তাহলে তাদেরকে মসজিদে আসতে নিষেধ করতেন। যেমন নিষেধ করা হয়েছিল বনি ইসরাইলের মহিলাদেরকে।’ (সহীহ বুখারী ১/২৯৬)

. আবু আমর শাইবানি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাযি.-কে দেখেছি, তিনি জুমার দিন মহিলাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দিতেন এবং বলতেন, আপনারা বের হয়ে যান। আপনাদের ঘরই আপনাদের জন্য উত্তম। (আলমুজামুল কাবির ৯৪৭৫, মজমাউযযাওয়াইদ ২/৩৫) আল্লামা হাইছামি বলেন, এই রেওয়ায়তের সকল বর্ণনা কারী সিকাহ-নির্ভরযোগ্য।

. জবাইর ইবন আওয়াম রাযি. তাঁর পরিবারের কোন নারিকে ঈদের জামাতে যেতে দিতেন না। ( মুসান্নাফ ইবন আবি শাইবাহ ৫৮৪৬)

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 3 =