মা তারাবী নামাজ পড়তে না দিলে সন্তানের করণীয়

জিজ্ঞাসা–১৭৮২: আসসালামু আলাইকুম। হুজুর, আগামী মাসে আমার এস এস সি পরীক্ষা। এই উছিলায় আমার মা আমাকে এই রমজানে তারাবিহ সালাত জোরপূর্বক আদায় করতে দেয় নি। এখন কী আমার কোনো কবিরা গুনাহ হবে?–আবির।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. তারাবীর নামায সুন্নাতে মুআক্কাদা। ইমাম নববী বলেন,

صلاة التراويح سنة بإجماع العلماء

আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবীর নামায পড়া সুন্নত। (আলমাজমূ ৪/৩১)

আর সুন্নাতে মুআক্কাদার মর্যাদা প্রায় ওয়াজিবের মতো। যা ছাড়লে গুনাহ হয়। ইবন নুজাইম রহ. বলেন,

والذي يظهر من كلام أهل المذهب أن الإثم منوط بترك الواجب أو السنة المؤكدة على الصحيح ؛… فالإثم لتارك السنة المؤكدة أخف من الإثم لتارك الواجب

মাযহাবের ইমামদের কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগ করলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী গুনাহ হয়। তবে সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগকারীর গুনাহ ওয়াজিব ত্যাগকারীর চাইতে কম হবে। (আল বাহ্রুররায়েক ১/৩১৯)

দুই. প্রিয় প্রশ্নকারী দীনী ভাই, তারাবী না পড়া তোমার মায়ের নির্দেশ। আর তারাবী পড়া রাসুলুল্লাহ এর সুন্নাত। আর আনুগত্যের সবচেয়ে বড় দাবিদার সন্তানের জন্য বাবা-মা অবশ্যই কিন্তু এ দাবী বিকল হয়ে যাবে, যখন তাঁরা এমন কিছু দাবী করবেন, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নিষেধের সীমা লঙ্ঘন করবে। সৃষ্টির আনুগত্যের এ সীমারেখা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল বলেন,

فَإِنْ أُمِرَ بِمَعْصِيَةٍ، فَلَا سَمْعَ وَلَا طَاعَةَ

অসৎকাজে আনুগত্য নয় ; আনুগত্য কেবলমাত্র সৎকাজের ক্ষেত্রেই হতে হবে। (বুখারী ৭১৪৫  মুসলিম ১৮৪০)

সুতরাং আলোচ্য ক্ষেত্রে তুমি যা করবে তাহল–

১। তুমি তারাবী ২০ রাকাতই আদায় করবে।

২। তোমার মাকে নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে বুঝাবে যে, তারাবী ২০ রাকাত সুন্নতে মুআক্কাদা। আর সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়েও যেতে পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে।

৩। তোমার পড়ালেখার চাপ; এই অজুহাত যেন তোমার সুন্নতে মুআক্কাদাহ পালনে তোমার মা বাধাদানকারী না হয়; এজন্য সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও মহান প্রতিদান তাঁর সামনে তুলে ধরবে। যেমন রাসূল বলেছেন,

 كُلُّ أُمَّتِي يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ إِلاَّ مَنْ أَبَى قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَنْ يَأْبَى قَالَ مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أَبَى

আমার সকল উম্মতই জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে যারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে তারা ব্যতীত। জিজ্ঞাসা করা হল, কারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে? তিনি বললেন, যে আমার অনুসরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমাকে অমান্য করে সেই অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছে। (বুখারি: ৭২৮০)

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দুআ করবে, যেন তোমার মায়ের মন-মানসিকতার পরিবর্তন হয়।

والله أعلم بالصواب