মা পর্দা না করলে ছেলে কি দাইয়ুস হবে?

জিজ্ঞাসা–১৮৩৩: আমি কি দাইয়ুস হবো এক্ষেত্রে? আমার মা সরকারী চাকরিজীবি, আমার বয়স এখন ২৩, মায়ের ৪৩-৪৪। আমার বয়স যখন ১, তখন থেকে ঐ চাকরি করে। চাকরিতে পুরুষ কর্মীও আছে, আবার নারী ও আছে, পুরুষদের সাথে কথা বলতে হয় চাকরি ক্ষেত্রে, প্রয়োজনে নারী পুরুষ একসাথে মিটিং হয়, মিটিংয়ের দায়িত্বে আমার মা, যেহেতু মা সেক্রেটারি,তাই। আমার আব্বা দুই বছর হল মারা গেছেন। আমি একটা ছাত্র কলেজে পড়ি, আমি একটাই ছেলে। আমার ইনকাম নেই।শুনেছি এমন চাকরি করা যাবেনা যেহুতু পুরুষ আছে। এখন অমি কি দাইয়ুস হয়ে যাবো?–নাম প্রকাশ করা হয় নি। 

জবাব:

এক- নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে কাজ করতে গেলে পর্দাহীনতা, পারস্পরিক সহাবস্থান, অন্তরের আকর্ষণসহ সমূহ ফেতনার আশঙ্কা প্রবল থাকার কারণে ওলামায়ে কেরাম এজাতীয় পরিবেশে কাজ করাকে নাজায়েয বলেছেন। আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটির ফতওয়া সংকলন ফাতাওয়াতুল লাজনাতিতদ্দায়িমা (১২/১৫৬)-তে এসেছে,

الاختلاط بين الرجال والنساء في المدارس أو غيرها من المنكرات العظيمة ، والمفاسد الكبيرة في الدين والدنيا ، فلا يجوز للمرأة أن تدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

”শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অন্যান্য স্থানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ঘটলে দীন ও দুনিয়ার ক্ষেত্রে বড় বড় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও পাপাচার সংঘটিত হবে। সুতরাং নারীর জন্য জায়েয নয় নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা কিংবা চাকুরি করা। আর অভিবাবকের জন্য জায়েয নয় তাকে এর অনুমতি দেয়া।”

দুই- প্রিয় ভাই, সুতরাং আপনার মা যদি চাকরি করতে চান তাহলে তাকে এমন পরিবেশ গ্রহণ করতে বলুন, যেখানে মেয়েদের আলাদা ব্যবস্থা আছে। অন্যথায় এ চাকরি ছেড়ে দিতে বলুন। কারণ, পার্থিব লাভালাভ অর্জনের চাইতে দীনদারি রক্ষা করার গুরুত্ব অবশ্যই বেশি। যদি তিনি এমনটি করতে পারেন তাহলে আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। (সূরা তালাক ২,৩)

তিন- আর যদি আপনার মা উক্ত মিশ্রিত পরিবেশে চাকরি করতেই চান কিংবা এ ছাড়া যদি তার প্রয়োজন পূরণের ফেতনামুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকে তাহলে তাকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলার পরামর্শ দিন,

১- তিনি উক্ত পরিবেশে আল্লাহ তাআলাকে যথাসাধ্য ভয় করে চলবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

২- পর্দা পালন, নেকাব পরিধান, হাত মোজা পরিধান, নির্জনবাস না ঘটা, পুরুষদের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা-সহ ইত্যকার শরিয়তের যাবতীয় বিধান মেনে চলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন।

৩- পরপুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনে কথা বলার ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি হল, কণ্ঠস্বর কঠোর রাখা, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে না বলা। সুতরাং তিনি ইসলামের এই মূলনীতি মেনে চলবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الََّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلا مَعْرُوفًا

তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সুরা আহযাব৩২)

উক্ত আয়াতের তাফসিরে আছে, আয়েশা রাযি. এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি কণ্ঠ বিকৃত করে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয়। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

চার- প্রিয় ভাই, যদি আপনি আমাদের উপরোক্ত পরামর্শ মেনে চলেন এবং আপনার মায়ের মিশিত পরিবেশে চাকরি করাটাকে পসন্দ না করেন তাহলে আশা করা যায়, আপনি দাইয়ুসের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। কেননা, দাইয়ুসের পরিচয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

الدَّيُّوثُ الَّذِي يُقِرُّ فِي أَهْلِهِ الْخَبَثَ

ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে, তার পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়। (মুসনাদে আহমাদ ৫৩৭২)

একারণে ইবনু হাজার হাইথামি রহ. বলেন,

قال العلماء : الديوث الذي لا غيرة له على أهل بيته

‘আলেমগণ বলেছেন, দাইয়ুস বলা হয়, যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতার ব্যাপারে দায়িত্ববোধহীন বা আত্মমর্যাদাহীন।’ (আযযাওয়াজির ২/৩৪৭)

والله أعلم بالصواب