মুদারাবা বিনিয়োগে মুনাফার পরিমাণ নির্ধারণ করা

জিজ্ঞাসা–১৮৬৪: আসসালামুআলাইকু ওরাহমাতুল্লাহ! মুহতারাম! কেমন আছেন? আশা করি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমার জানার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের একটি কোম্পানি ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এবং হোস্টিং স্পেস বিক্রয়ের ব্যবসা করে। তাঁরা চুক্তির মাধ্যমে কিছু সংখ্যক বিনিয়োগকারী নিয়োগ দিচ্ছে। বিনিয়োগের চুক্তির পদ্ধতি হচ্ছে, কেউ যদি ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে, প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে ২৫০০ টাকা লভ্যাংশ প্রদান করবে এবং চুক্তির মেয়াদ শেষে সম্পূর্ণ ১ লক্ষ টাকা ফেরত দিবে। তাদের লভ্যাংশের হার নির্ধারিত হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে যে, যেহেতু তাদের আয় নির্ধারিত তাই লভ্যাংশের হারও নির্ধারিত। তাছাড়া হোস্টিং স্পেস বিক্রয়ের ব্যবসায় ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। উল্লেখযোগ্য যে, এটা যেহেতু অনলাইন ব্যবসা, এখানে লোকসানের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বললে চলে। এখন আমার জানার বিষয় হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করে লভ্যাংশ গ্রহণ করা কি বৈধ হবে নাকি সুদ হবে? বিষয়টি জানালে আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকব।جَزَا كَ اللّٰهُ خَيْرًا:–মুহাম্মদ নূরুল হাকীম।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, প্রশ্নেল্লেখিত মুনাফা বণ্টনের পদ্ধতি বৈধ হবে না। কেননা, ফিকহের পরিভাষায় চুক্তির এই পদ্ধতিকে ‘মুদারাবা’ বলে। আর মুদারাবার ক্ষেত্রে মুনাফার পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হলে চুক্তি বৈধ হয় না। সুতরাং প্রশ্নেল্লেখিত ক্ষেত্রে এক লক্ষ টাকায় আড়াই হাজার টাকা নির্ধারণ করা একটি অবৈধ পদ্ধতি।

মুদারাবা বিনিয়োগে বৈধ পদ্ধতি হল, পার্সেন্টিস নির্ধারণ করা। পার্সেন্টিস হিসেবে যতটুকু উভয় চুক্তিকারী সম্মত হয়, ততটুকু মুনাফা গ্রহণই জায়েজ আছে। এখানে কোনো পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই। কিন্তু মুনাফার পার্সেন্ট উভয় চুক্তিকারীর সম্মতিক্রমে হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে মুনাফার হার সমান হওয়া জরুরি নয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৬/৮৬)

সুতরাং যত পার্সেন্ট নির্ধারণ করলে এক লক্ষ টাকায় আড়াই হাজার টাকা আসতে পারে তত পার্সেন্ট উভয়ের সম্মতিক্রমে নির্ধারণ করে নিলে কারবারটি বৈধ হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত, মুদরাবার ক্ষেত্রে নিয়ম হল, ব্যবসায়ে মুনাফা হলে পূর্ব চুক্তি অনুসারে উভয়পক্ষের মাঝে মুনাফা বণ্টিত হয় এবং ব্যবসায় লোকসান হলে বিনিয়োগকারী বা সাহিব-আল-মাল উক্ত লোকসান বহন করে। অন্যদিকে, ব্যবসায় পরিচালনাকারী বা মুদারিব তার মেধা ও শ্রমের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক পায় না, যা তার লোকসান হিসেবে গণ্য হয়। তবে যদি মুদারিব কর্তৃক নিয়ম লঙ্ঘন, অবহেলা বা চুক্তিভঙ্গের কারণে লোকসান হয় তাহলে মুদারিবকেই লোকসানের দায় বহন করতে হয়। (বাদায়েউস সানায়ে ৫/১১৯ মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ ১৩৬৯ রদ্দুল মুহতার ৫/৬৪৮)

সুতরাং প্রশ্নেল্লেখিত ক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ শেষে সম্পূর্ণ এক লক্ষ টাকা ফেরত পাবে; এধরণের শর্তের কোনো ভ্যালু নেই।

والله أعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন