মৃত বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপায় আছে কি?

জিজ্ঞাসা–১৭২২: আমার বাবা মারা গেছেন তিন বছর আগে। আমার বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি আমার বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে পারি নি। না বুঝে আমি বাবাকে কষ্ট দিয়েছি। বাবার কাছে ক্ষমা না চাইতে পেরে অত্যন্ত আফসোস হয়। বাবাকে কষ্ট দেয়ার জন্য যে গুনাহ হয়েছে সে গুনাহ ক্ষমা হবে?–আব্দী আহাদ।

জবাব:

এক- প্রিয় দীনি ভাই, মৃত্যুর পরেও বাবা-মা’র সাথে সদাচারণ করা যায়। সুতরাং আপনি আপনার বাবাকে যে কষ্ট দিয়েছেন, যদি এর কারণে আপনি বাস্তবেই লজ্জিত হন এবং এ গুনাহর প্রায়শ্চিত্ত করতে চান তাহলে আপনার উচিত এখন থেকে আপনার বাবার সঙ্গে সদাচারণ করা। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু উসাইদ রাযি. বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! বাবা-মা’র মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যব্যবহার করার কোন অবকাশ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। চারটি উপায় আছে–

الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا، وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا، وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا، وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا، وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا

১. তাঁদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা, ২. তাঁদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করা, ৩. তাঁদের বন্ধুদের সাথে সুন্দর আচরণ করা এবং ৪. তাঁদের আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় এবং সুন্দর আচরণ করা। (আল আদাবুল মুফরাদ ৩৫)

দুই- আর আপনি যদি আপনার বাবার মৃত্যুর পর তার উপকার করতে চান তাহলে উপরোক্ত আমলগুলোর পাশাপাশি নিম্নোক্ত আমলগুলো করতে পারেন–

১। তাঁর জন্য দান-সদকা করা। হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَجُلا قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ ﷺ إِنَّ أُمَّهُ تُوُفِّيَتْ ، أَفَيَنْفَعُهَا إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا ؟ قَالَ : نَعَمْ ” . قَالَ : فَإِنَّ لِي مَخْرَفًًا ، فَأُشْهِدُكَ أَنِّي قَدْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَنْهَا

ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা মৃত্যুবরণ করেছে। যদি আমি তার পক্ষে সদকা (দান) করি তাহলে এতে তার কোন উপকার হবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, হ্যাঁ। এরপর লোকটি বলল, আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি আমার একটি ফসলের ক্ষেত তার পক্ষ থেকে সদকাহ করে দিলাম। (নাসায়ী ৩৫৯৫)
২। তাঁর পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় করে এর সওয়াব তাঁকে উৎসর্গ করা। (বুখারী ১৮৫২)
৩। তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানী করা। (মুসলিম ৫২০৩)
৪। তাঁর ঋণ পরিশোধ করা। যেমনিভাবে জাবের রাযি. রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ -এর নির্দেশে তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ বিন হারাম এর ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। (বুখারী ২৭৮১)
৫। তাঁর ভাল কাজসমূহ জারী রাখা। কেননা এসব ভাল কাজের সওয়াব তাদের আমলনামায় যুক্ত হতে থাকে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেছেন,

مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ

যে ব্যক্তির ইসলামের ভাল কাজ শুরু করল, সে এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। অথচ তাদের সওয়াব থেকে কোন কমতি হবে না। ( মুসলিম ২৩৯৮)
৬। তিনি কোন গুনাহের কাজ করে গেলে তা বন্ধ করা। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ ﷺ বলেছেন,

وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا

এবং যে মানুষকে গুনাহের দিকে আহবান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ গুনাহ তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের গুনাহ থেকে কোন কমতি হবে না। (মুসলিম ৬৯৮০)

তিন- আপনার বাবার ছুটে যাওয়া নামায-রোজার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পরিবর্তে এবং প্রতি দিনের রোজার পরিবর্তে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম সদকা করবেন।
ইকরিমা রহ. বলেন, আমার মা প্রচন্ড তৃষ্ণা-রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং রোজা রাখতে সক্ষম ছিলেন না। তাঁর সম্পর্কে আমি তাউস রহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, প্রতি দিনের পরিবর্তে মিসকীনকে এক মুদ (বর্তমান হিসাবে পৌনে দুই কেজি) পরিমাণ গম প্রদান করবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭৫৮১)
আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, আপনার বাবার সঙ্গে কৃত বেয়াদবি ক্ষমা করে দেন এবং আপনার বাবাকেও মাগফিরাত দান করেন।

والله اعلم بالصواب