যে সকল কারণে রোজা মাকরূহ হয়

জিজ্ঞাসা–১৭৮৮: রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ জানতে চাই।–আরিফুল ইসলাম।

জবাব: রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ:

১. মিথ্যা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা কসম করা, গীবত করা, চোগলখুরি করা, ধোঁকা দেওয়া, ঝগড়া করা, অশ্লীল কথা বলা, অশ্লীল আচরণ করা, জুলুম করা, কারো প্রতি শত্রুতা প্রকাশ করা, পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা, নাটক-সিনেমা দেখাসহ যে কোনো বড় ধরনের গুনাহে লিপ্ত হলে রোজা মাকরূহ হয়ে যায়। আর এ কাজগুলো যে সর্বাবস্থায় হারাম, তা তো বলাই বাহুল্য। (রোজে কা মাসায়িল কা ইনসাইক্লোপিডিয়া ১০৮)

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزّورِ وَالعَمَلَ بِهِ وَالجَهْلَ، فَلَيْسَ لِلهِ حَاجَةٌ أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ

যে মিথ্যা ও মূর্খসুলভ বক্তব্য ও আচরণ ছাড়ল না, তার পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী ৬০৫৭)

হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

إذا كان يوم صوم أحدكم فلا يرفث ولا يصخب

তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখে তখন সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং শোরগোল, হট্টগোলে লিপ্ত না হয়। (সহীহ বুখারী ১৯০৪)

২. রোজা অবস্থায় কুলি করার সময় গড়গড়া করা এবং নাকের নরম অংশ পর্যন্ত পানি পৌঁছানো মাকরূহ। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৯৯)

লাকিত ইবনে সবিরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

بالغ في الاستنشاق، إلا أن تكون صائما

(অযু-গোসলের) সময় ভালোভাবে নাকে পানি দাও, তবে রোজাদার হলে নয়। (জামে তিরমিযী ৭৬৬)

৩. এমন কাজ করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোযাদার নিতান্তই দুর্বল হয়ে পড়ে। যেমন শিঙ্গা লাগানো। (আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৬ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০০)

৪. রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে বা ইনজেকশন ইত্যাদি দ্বারা রক্ত বের করলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার দ্বারা রোজাদার খুব দুর্বল হয়ে যায়।

সাবিত আল-বুনানী রহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

سُئِلَ أنَسُ بنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عنْه: أكُنْتُمْ تَكْرَهُونَ الحِجَامَةَ لِلصَّائِمِ؟ قالَ: لَا، إلَّا مِن أجْلِ الضَّعْفِ

আনাস রাযি.-কে জিজ্ঞাসা করা হল, রোজাদারের জন্য শিঙ্গা লাগানোকে আপনারা কি মাকরূহ মনে করতেন? তিনি বলেন, ‘না। তবে এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়লে তা মাকরূহ হবে।’ (সহীহ বুখারী ১৯৪০)

৫. রোজা অবস্থায় বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া জায়েয। তবে কামভাবের সাথে চুমু খাওয়া, জড়িয়ে ধরা মাকরূহ। (কিতাবুল ফিকহ ১/৯২৭)

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত,

أنَّ رجلًا سأل النَّبيَّ ﷺ عن المباشَرةِ للصائمِ فرخَّص له وأتاه آخرٌ فسألَهُ فنهاه فإذا الَّذي رخَّص له شيخٌ والَّذي نَهاه شابٌّ

এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি তাকে তা করার অনুমতি দিলেন। এরপর আরো এক ব্যক্তি এসে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এ ব্যক্তিকে তিনি তা করতে নিষেধ করলেন। যাকে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন সে ছিল বৃদ্ধ। আর যাকে নিষেধ করেছিলেন সে ছিল যুবক। (আবু দাউদ ২৩৮৭)

والله أعلم بالصواب