জিজ্ঞাসা–৪৩১: আসসালামু ‘আলাইকুম। দেশে অ্যাডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, মাইক্রোসফট অফিস ইত্যাদির মত জনপ্রিয় পাইরেটেড কপি ব্যবহার করা হয়- ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করে অফিস-আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত। এসব সফটওয়্যারের বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে অনেক দাম পড়ে যায় (https://www.adobe.com/creativecloud/plans.html, https://products.office.com/en/buy/compare-microsoft-office-products-for-mac) যা অনেকেরই সাধ্যাতীত যদি বৈধভাবে লাইসেন্স কিনে ব্যবহার করতে চায়। এসব সফটওয়্যার দিয়ে যত ভালভাবে কাজ করা যায়, এর বিকল্প যেগুলো বিনামূল্যে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়, সেগুলো দিয়ে ততটা ভালভাবে বা সুন্দরভাবে কাজ করা যায় না। আমি এ ব্যাপারে কিছুটা ঘাটাঘাটি করে দেখেছি। আমার অস্বস্তির জায়গা হচ্ছে এই যে দামী সফটওয়্যারগুলো চোরাইভাবে ডাউনলোড করে ব্যবহার করা হচ্ছে, এতে কি আমরা গুনাহগার হচ্ছি না? আর ব্যবহার না করেও উপায় থাকছে না কারণ ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, মাইক্রোসফট অফিসের প্রচুর কাজ হয় প্রতিদিন। তাহলে উপায় কি?–মির্জা রাশেদ কায়সার
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله
প্রিয় দীনি ভাই, প্রচলিত সফটওয়্যার-পাইরেসি তথা অনুমতি ছাড়া ডাউনলোড করার সাধারণতঃ তিনটি রূপ রয়েছে । যথা-
১- ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে পাইরেসি তথা সফটওয়্যার বিক্রয় ও পরিবেশন করে ব্যবসায়িকলাভের উদ্দেশ্যে পাইরেসি। এটা নাজায়েয। কেননা, এর দ্বারা নির্মাতা বা আবিস্কারকের লাভের অধিকারকে হরণ করা হয়। আর হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, لا ضرر ولا ضرار ‘ক্ষতি ও ক্ষতি সাধনের কোন অনুমতি নেই।’ (সুনানে দারাকুতনী ৩০৭৯)
২- ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে পাইরেসি তথা সফটওয়্যারটি নিজে ব্যবহার করা কিংবা বিক্রয় বা পরিবেশন না করে নিজেদের ব্যবস্যায়িক বা আর্থিক কাজে লাগানো। এ প্রকারের পাইরেসির ক্ষেত্রে যদি কপিরাইট অধিকারীর মৌন সম্মতি থাকে, তাহলে তা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মৌন সম্মতির পাশাপাশি যদি জেনুইনটি কেনার মোটেও সামর্থ্য না থাকে তাহলে মুফতিগণ এর ব্যবহার জায়েয বলে থাকেন। (ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ fatwa ID : 903-917/N=8/1435-U)
আর অ্যাডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, মাইক্রোসফট , ফ্লাশ বিল্ডার, ফায়ারওয়ার্কস-সহ কিছু সফটওয়্যার এমন আছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে কপিরাইট অধিকারীর মৌন সম্মতি পাওয়া যায়; অর্থাৎ, তারা এগুলো পাইরেসি হতে দেখেও এর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় না মানে এক্ষেত্রে তাদের মৌন সমর্থন থাকে। তারা জানে, নিরাপত্তা, প্রাইভেসি ও ব্যবহারের যে সুবিধা জেনুইন প্রোডাক্টসে পাওয়া যায়, তা পাইরেটেড কপিগুলোতে পাওয়া যায় না। যার কারণে কর্পোরেটরা সাধারণত তাদের জেনুইন প্রোডাক্টস কিনতে বাধ্য থাকে। এতেই তাদের মুনাফা যা হওয়ার হয়ে যায়। এজন্য ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য পাইরেসির ক্ষেত্রে তাদের একপ্রকার মৌন সমর্থন থাকে। (https://www.microsoft.com/en-us/legal/পাইরেসিt) সুতরাং এগুলোর ব্যবহার -বিশেষ করে জেনুইনটি কেনার মোটেও সামর্থ্য না থাকলে- নাজায়েয হবে না। (দরসুল ফিকহ, দারুল উলুম হাটহাজারী ২/৩৮৪, ৩৮৫)
৩- ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়; বরং সর্বসাধারণের নাগালে রাখার জন্য কপিরাইটেড সফটওয়্যার ক্র্যাক করে ফ্রী বা ওপেনসোর্স করে রাখা। যদি এ ধরণের পাইরেসি দ্বারা সফটওয়্যার কোম্পানির বড় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে জায়েয হবে না। তবে যদি কোন ক্ষেত্রে এমন হয় যে, কোম্পানি সফটওয়্যার বিক্রয় করে উপযুক্ত লাভ অর্জন করে নিয়েছে। এখন ক্র্যাক করার প্রতি কোম্পানির মৌন সমর্থন রয়েছে বা এর দ্বারা কোম্পানির কোন ক্ষতি হবে না, তাহলে এ ধরণের পাইরেসিও জায়েয হবে। (প্রাগুক্ত)
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
যদি সফটওয়্যার এমন কোন কোম্পানির হয় যাদের দেশ মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত সেই ক্ষেত্রে পাইরেসি জাইয়েজ আছে ।
https://islamqa.info/amp/en/answers/174626
ওয়েবসাইটের কিছু থিম বা প্লাগিন ফ্রি পেয়েছি, একটা সাইট থেকে কিছু প্রডাক্ট কিনায়। আমি কি থিম গুলো বিক্রি করতে পারবো? বি দ্রঃ তাদের মৌন সম্মতি আছে।
মৌন সম্মতির পাশাপাশি যদি জেনুইনটি কেনার মোটেও সামর্থ্য না থাকে তাহলে মুফতিগণ এর ব্যবহার জায়েয বলে থাকেন। (ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ fatwa ID : 903-917/N=8/1435-U)
আমি একটি পেইড কোর্স করেছি,,
কিন্তু সেটি একটি ওয়েবসাইট থেকে বিনামুল্যে ডাউনলোড করেছি, পেজের এডমিন কে নক দেয়ার পর জানতে পারি তিনি এই কোর্স টি কিনেছেন তারপর তিনি সেটি ডাউনলোড করে তার ওয়েবসাইট এ আপ্লোড করেছেন,
এবং সেখান থেকে আমি ডাউনলোড করলাম,
এবার সেই কোর্স্ টি করে যে দক্ষতা অর্জন করেছি তা কি হালাল?
বিঃদ্রঃ কোর্সটি অনেক দামী,
এই দামে একটা কোর্স কিনা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না
ডাউনলোড করার অনুমতি ছিল কিনা? যদি না থাকে তাহলে অনুমতি নিয়ে নিবেন। তাহলে আর কোনো অসুবিধা থাকবে না।
যে ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেছিলাম সে ওয়েবসাইট এর অনুমতি ছিলো,তবে উনি যেখান থেকে এনে আমাকে ডাউনলোড করতে দিয়েছেন সেখানে কপিরাইট এর মতো কোনো ধরাবাঁধা ছিলো না
তাহলে কোনো অসুবিধা নেই
জাযা-কাল্লাহ।
এ বিষয়টা নিয়ে আসলে অনেকদিন ধরেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম। ফটোশপ আর ইলাস্ট্রেটরের কাজ কিছু শিখেছিলাম কিন্তু মনের খটকার কারণে প্র্যাক্টিস, কাজ সবই থামিয়ে দিয়েছি।
সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
জাযা-কাল্লাহ। আমাদের সাথে থাকার জন্য…