সালাম কখন দেয়া যাবে এবং কখন দেয়া যাবে না?

জিজ্ঞাসা–২০৪: হুজুর, আসসালামু আলাইকুম। আপনাকে খুব মহব্বত করি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সালাম দেওয়া সঠিক নিয়ম অর্থাৎ কোন সময় সালাম দেয়া যাবে এবং কোন সময় সালাম দেয়া যাবে না? জানালে উপকৃত হব।–রেজাউল

জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله আমাকে যতজন মহব্বত করেন, সকলের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে এই দোয়া করি, তিনি যেন এই মহব্বতকে তাঁর মহব্বত লাভের উসিলা বানান। আমীন।

হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وجبت محبتي للمحتابين فيّ ، والمتجالسين فيّ، والمتزاورين فيّ، والمتباذلين فيّ

আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসাকারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত। (আহমদ:২১৭১৭)

সম্মানিত দীনি ভাই, খোশ মেজাজে সালাম দেওয়া উত্তম। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا أو لا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم.

“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। (মুসলিম)

তবে সকল ইবাদতের মত সালামেরও কিছু আদব-কায়দা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র এমন আছে যে সব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া মাকরূহ। সে ক্ষেত্রগুলোকে আল্লামা গায্যি রহ. নিম্নোক্ত কাব্যকারে উল্লেখ করেছেন।

سلامك مكروه على من ستسمع
ومن بعد ما أبدي يسن ويشرع
مصل وتال ذاكر ومحدث
خطيب ومن يصغي إليهم ويسمع
مكرر فقه جالس لقضائه
ومن بحثوا في الفقه دعهم لينفعوا
مؤذن أيضًا مع مقيم مدرس
كذا الأجنبيات الفتيات أمنع
ولعاب شطرنج وشبه بخلقهم
ومن هو مع أهل له يتمتع
ودع كافرًا أيضًا وكاشف عورة
ومن هو في حال التغوط أشنع
ودع آكلا إلا إذا كنت جائعًا
وتعلم منه أنه ليس يمنع
كذلك أستاذ مغن مطير
فهذا ختام والزيادة تنفع

অর্থাৎ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে সালাম দেয়া মাকরূহ। এ ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া সুন্নত ও বৈধ।

১) নামাজ পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

২) কোরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৩) জিকির ও মোরাকাবায়রত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৪) খাবার খাওয়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৫) হাদিস-ফিকাহ বা অন্যান্য তালীমি মজলিসে মশগুল এমন অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৬) ওয়াজ ও নসীহত শুনা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৭) বিচারক বিচার কার্যে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৮) আযানরত, ইকামতরত কিংবা পাঠদানরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

৯) অপরিচিত যুবতী নারী [যাদের সালাম দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে] তাদের সালাম দেওয়া কোনক্রমেই উচিত নয়।

১০) যারা দাবা খেলায় মগ্ন তাদের ও তাদের মত (অন্য খেলায়) মত্ত লোকদের সালাম দেওয়া উচিত নয়।

১১) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

১২) অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

১৩) ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় অথবা সতরবিহীন অবস্থায় থাকলে ওই ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − six =