স্বামী যদি তার স্ত্রীকে অতীত রিলেশন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে…

জিজ্ঞাসা–১৪০২: আসসালামু আলাইকুম,সুরা নিসার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ” মন্দ কাজের প্রচার আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর জুলুম করা হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ সবোশ্রোতা, সবোজ্ঞ।” এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে অতীত রিলেশন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, অতীত বলতে বাধ্য করে তাহলে কি স্ত্রীর উপর জুলুম করা হয়? এই স্ত্রীর করণীয় কি? কোরআন এবং হাদিসে তো এই ধরনের পাপ গোপন রাখতে বলা হয়েছে।–নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক. প্রিয় প্রশ্নকারী বোন, বান্দার উপর আল্লাহ তাআলার অন্যতম পরম অনুগ্রহ এই যে, তিনি বান্দার গুনাহগুলো গোপন রাখেন। সুতরাং বান্দার উচিত নয়, কারো কাছে গুনাহগুলো প্রকাশ করা। এজন্যই রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

اِجْتَنِبُوْا هَذِهِ الْقَاذُوْرَاتِ الَّتِيْ نَهَى اللهُ عَنْهَا، فَمَنْ أَلَمَّ بِهَا فَلْيَسْتَتِرْ بِسِتْرِ اللهِ، وَلْيَتُبْ إِلَى اللهِ، فَإِنَّهُ مَنْ يُبْدِ لَنَا صَفْحَتَهُ نُقِمْ عَلَيْهِ كِتَابَ اللهِ تَعَالَى

তোমরা ব্যভিচার থেকে দূরে থাকো, যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপরও যে ব্যক্তি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে তা করে ফেলে সে যেন তা লুকিয়ে রাখে। যখন আল্লাহ তাআলা তা গোপনই রেখেছেন। তবে সে যেন এ জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা করে নেয়। কারণ, যে ব্যক্তি তা আমাদের (তথা বিচারকের) নিকট প্রকাশ করে দিবে তার ওপর আমরা অবশ্যই আল্লাহ তাআলার বিধান প্রয়োগ করবোই। ( হাকিম ৪/২৭২)

উক্ত হাদিস এবং এজাতীয় আরো কিছু হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয়, স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে নিজেদের অতীত ব্যভিচার কিংবা অন্য কোনো গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবে না; এমনকি জিজ্ঞেস করলেও নয়।

দুই. আর যদি স্বামী স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী স্বামীকে জিজ্ঞেস করে বসে তাহলে সরাসরি মিথ্যা বলা থেকে বাঁচার জন্য ইসলাম যে তিনটি ক্ষেত্রে ‘তাওরিয়া’ তথা কৌশলী-উত্তর দেয়ার অবকাশ দিয়েছে, তন্মধ্য থেকে একটি হল, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ও মিল সৃষ্টি বা রক্ষা করার জন্য। রাসূলুল্লাহ বলেন,

لاَ يَحِلُّ الْكَذِبُ إِلاَّ فِي ثَلاَثٍ يُحَدِّثُ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ لِيُرْضِيَهَا وَالْكَذِبُ فِي الْحَرْبِ وَالْكَذِبُ لِيُصْلِحَ بَيْنَ النَّاسِ

তিনটি ক্ষেত্র ব্যতীত অসত্য বলা হালাল নয়–১। স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে যেয়ে কিছু বলা ২। যুদ্ধের প্রয়োজনে অসত্য বলা ৩। এবং পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে কিছু অসত্য বলা। (তিরমিজী ১৯৪৫)

সুতরাং এক্ষেত্রে তারা পরস্পরের কাছে ‘তাওরিয়া’ তথা কৌশলী-উত্তর দিবে। যেমন, এভাবে উত্তর দিতে পারে যে, ‘আমার তো কারো সঙ্গে এরকম সম্পর্কই ছিল না।’ উক্ত বাক্য বলার সময় মনে মনে চিন্তা করবে যে, ‘বিয়ের পর থেকে সম্পর্ক ছিল না’। অথবা এভাবে উত্তর দিতে পারে যে, ‘আমি কক্ষনো ব্যভিচার করি নি’। আর মনে মনে উদ্দেশ্য নিবে যে, ‘আমি বিয়ের পর থেকে কক্ষনো ব্যভিচার করি নি’।

والله اعلم بالصواب

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten − six =