ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে ছবি পোস্ট করা জায়েয আছে কিনা?

জিজ্ঞাসা–২২১: সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবি পোস্ট করা ইসলাম সম্মত কিনা?– মোঃ –রকিবুল হাসান: rhassan0025@gmail.com

জবাব:  সম্মানিত দ্বীনি ভাই, প্রাণীর ছবি তোলা ও অঙ্কন করা সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। যেমন এ মর্মে বুখারী ও মুসলিমের একটি হাদীস এই–

আয়েশা রাযি. একটি ছোট বালিশ ক্রয় করেছিলেন। তাতে ছবি আঁকা ছিল। ঘরে প্রবেশের সময় রাসূল এর দৃষ্টি এতে পতিত হলে তিনি আর ঘরে প্রবেশ করলেন না। আয়েশা তার মুখমণ্ডল দেখেই তা বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের নিকট তওবা করছি। আমি কি গুনাহ করেছি? রাসূল জিজ্ঞেস করলেন, এই ছোট বালিশটি কোথায় পেলে? তিনি বললেন, আমি এটা এ জন্য খরিদ করেছি যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন। তখন রাসূল বললেন, যারা এই সমস্ত ছবি অংকন করেছে কিয়ামতের মাঠে তাদেরকে আযাব দেয়া হবে। তাদের বলা হবে: তোমরা যাদের সৃষ্টি করেছিলে. তাদের জীবিত কর। অত:পর তিনি বললেন, যে ঘরে ছবি আছে সে ঘরে ফেরেশতাগণ প্রবেশ করেন না। (বুখারী ও মুসলিম)

এজাতীয় হাদীস থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, ইসলামী শরীয়ায় প্রাণীর ছবি তোলা ও অঙ্কন করা হারাম, একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তা তোলার অনুমতি নেই। কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে পৃথিবীর সব ইমাম ও ফিকহ বিশেষজ্ঞ ও সমকালীন মুফতিদের অভিমত হলো, অতি প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলা, আঁকা এবং তা প্রকাশ করা জায়েয নয়। (ফিকহি মাকালাত; তকি উসমানী : ৪/১২৩)

তবে বর্তমানে ডিজিটাল ছবি প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভূক্ত কি-না; এতে কিছুটা গবেষণার অবকাশ রয়েছে। ভারতবর্ষের সিংহভাগ আলেম এধরনের ছবিকেও হারাম বললেও আল্লামা রফি উসমানী সাহেব দা.বা. ও আল্লামা তাকী উসমানী সাহেব দা.বা. এর মত কিছু মুহাক্কিক ফকীহর দৃষ্টিভঙ্গিতে এগুলো নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভূক্ত হবে না। কেননা ছবি হওয়ার জন্য স্থীরতা ও স্থায়ীত্বের গুণ থাকা শর্ত। আর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত যে, ডিজিটাল ছবির স্থীরতা ও স্থায়ীত্ব নেই। এজন্য তাদের মতে ডিজিটাল ছবি মূলত ছবিরই অন্তর্ভূক্ত নয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ডিজিটাল ছবি বাস্তব ছবির অন্তর্ভূক্ত না হলেও এতে যেহেতু ছবির রূপ পাওয়া যায় এবং এর দ্বারা ছবির উদ্দেশ্য আদায় হয়, পাশাপাশি অধিকাংশ আলেম এটাকে এখনও অবৈধ বলে মনে করেন, বিধায় নিশ্চিত করে হারাম বলা না গেলেও ঢালাওভাবে একে জায়েয বলারও অবকাশ নেই। তবে যেখানে শরয়ী জরুরত বিদ্যমান বলে উলামাগণ মনে করেন সেখানে দ্বীন সুরক্ষার বিশেষ প্রয়োজনে ছবি ধারণ নিষেধ নয়।
বর্তমানে ফেসবুক,ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ছবি আপলোড দেয়া হয়, যেহেতু এগুলোর অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়,তাই ঢালাওভাবে এগুলোর অনুমোদন দেয়া যায় না। একান্ত প্রয়োজনে ব্যবহার করা শরয়ী দৃষ্টিতে আপত্তিকর নয়। দ্বীনি প্রয়োজনে বর্তমান বিশ্বের গবেষক উলামারা এটাকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত মনে করেন না তাদের ফাতাওয়া অনুযায়ী আমল করার অবকাশ রয়েছে। সর্বাবস্থায় একেবারে হালাল মনে করে প্রয়োজন অপ্রয়োজনে এসব ছবির ছড়াছড়ি শরয়ী দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়। অন্তরে আল্লাহর ভয় বিদ্যমান রেখে সে অনুযায়ী আমল করা দরকার।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

ন্তব্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × three =