আয়াতুল কুরসির ফজিলত

জিজ্ঞাসা–৬৮৬: আয়াতুল কুরসি পাঠ করার কারণে বা যারা আমল করে তাদের থেকে শয়তান দূরে থাকে এবং তাদের উপর কোন প্রকার যাদু কাজ করে না। বিভিন্ন বিপদ আপদ থেকে বেঁচে থাকে। আর‌ও কি ফযিলত আছে?– Abdul Ali Roni

জবাব: হাদিস শরিফে আয়াতুল কুরসির যে  সকল  ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তা থেকে নিম্নে কয়েকটি পেশ করা হল-

. কোরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত

عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ : ” يَا أَبَا الْمُنْذِرِ ، أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ مَعَكَ أَعْظَمُ ؟ قَالَ : قُلْتُ : اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ ، قَالَ : يَا أَبَا الْمُنْذِرِ ، ” أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ اللَّهِ مَعَكَ أَعْظَمُ ؟ قَالَ : قُلْتُ : اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ سورة البقرة آية 255 ” ، قَالَ : فَضَرَبَ فِي صَدْرِي ، وَقَالَ : وَاللَّهِ لِيَهْنِكَ الْعِلْمُ أَبَا الْمُنْذِرِ .

উবাই বিন কা’ব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ উবাই বিন কা’বকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কোরআন মজিদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুআল্ হাইয়্যূল কাইয়্যূম…) তারপর রাসূলুল্লাহ্ নিজ হাত দ্বারা তার বক্ষে আঘাত করে বলেন, আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ। (মুসলিম ১৩৯৬)

.শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচার আয়াত

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّ أَبَاهُ أَخْبَرَهُ ، أَنَّهُ كَانَ لَهُمْ جَرِينٌ فِيهِ تَمْرٌ ، وَكَانَ مِمَّا يَتَعَاهَدُهُ فَيَجِدُهُ يَنْقُصُ ، فَحَرَسَهُ ذَاتَ لَيْلَةٍ ، فَإِذَا هُوَ بِدَابَّةٍ كَهَيْئَةِ الْغُلامِ الْمُحْتَلِمِ . قَالَ : فَسَلَّمْتُ فَرَدَّ السَّلامَ ، فَقُلْتُ : مَا أَنْتَ ، جِنٌّ أَمْ إِنْسٌ ؟ فَقَالَ : جِنٌّ ، فَقُلْتُ : نَاوِلْنِي يَدَكَ ، فَإِذَا يَدُ كَلْبٍ وَشَعْرُ كَلْبٍ ، فَقُلْتُ : هَكَذَا خُلِقَ الْجِنُّ ، فَقَالَ : لَقَدْ عَلِمَتِ الْجِنُّ أَنَّهُ مَا فِيهِمْ مَنْ هُوَ أَشَدُّ مِنِّي ، فَقُلْتُ : مَا يَحْمِلُكَ عَلَى مَا صَنَعْتَ ؟ قَالَ : بَلَغَنِي أَنَّكَ رَجُلٌ تُحِبُّ الصَّدَقَةَ ، فَأَحْبَبْتُ أَنْ أُصِيبَ مِنْ طَعَامِكَ ، قُلْتُ : فَمَا الَّذِي يَحْرِزُنَا مِنْكُمْ ؟ فَقَالَ : هَذِهِ الآيَةُ ، آيَةُ الْكُرْسِيِّ ، قَالَ : فَتَرَكْتُهُ . وَغَدَا أَبِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ، فَأَخْبَرَهُ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” صَدَقَ الْخَبِيثُ  

উবাই বিন কা’ব রাযি. থেকে বর্ণিত, তাঁর এক খেজুর রাখার থলি ছিল। সেটায় ক্রমশ তার খেজুর কমতে থাকত। একরাতে সে পাহারা দেয়। হঠাৎ যুবকের মত এক জন্তু দেখা গেলে, তিনি তাকে সালাম দেন। সে সালামের উত্তর দেয় । তিনি বলেন, তুমি কি? জিন না মানুষ? সে বলে, জিন। উবাই রাযি. তার হাত দেখতে চান। সে তার হাত দেয়। তার হাত ছিল কুকুরের হাতের মত আর চুল ছিল কুকুরের চুলের মত। তিনি বলেন, এটা জিনের সুরত। সে (জন্তু) বলে, জিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আমি সবচেয়ে সাহসী। তিনি বলেন, তোমার আসার কারণ কি? সে বলে, আমরা শুনেছি আপনি সাদকা পছন্দ করেন, তাই কিছু সাদকার খাদ্যসামগ্রী নিতে এসেছি। সাহাবী বলেন, তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? সে বলে, সূরা বাকারার এই আয়াতটি (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহ হুআল হাইয়্যূল কাইয়্যূম), যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে। সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ -এরকাছে আসেন এবং ঘটনার খবর দেন। রাসূলুল্লাহ্ বলেন, খবীস সত্য বলেছে। (সহীহ ইবন হিব্বান ৭৯১)

. ফেরেশতা নিযুক্তকারী আয়াত

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ، قَالَ : وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ ، فَأَتَانِي آتٍ ، فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، وَقُلْتُ : لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، قَالَ : إِنِّي مُحْتَاجٌ ، وَعَلَيَّ عِيَالٌ ، وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ ، فَخَلَّيْتُ عَنْهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ النَّبِيُّ : ” يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ ؟ ” ، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، شَكَا حَاجَةً شَدِيدَةً ، وَعِيَالا ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : ” أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ ، وَسَيَعُودُ ” فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ ، لِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ : ” إِنَّهُ سَيَعُودُ ” فَرَصَدْتُهُ ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ : لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ، قَالَ : دَعْنِي ، فَإِنِّي مُحْتَاجٌ ، وَعَلَيَّ عِيَالٌ ، لا أَعُودُ ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ : ” يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ ؟ ” قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، شَكَا حَاجَةً وَعِيَالا ، فَرَحِمْتُهُ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : ” أَمَا إِنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ ، وَسَيَعُودُ ” فَرَصَدْتُهُ الثَّالِثَةَ ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ ، فَأَخَذْتُهُ ، فَقُلْتُ : لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ، وَهَذَا آخِرُ ثَلاثِ مَرَّاتٍ ، إِنَّكَ تَزْعُمُ لا تَعُودُ ، ثُمَّ تَعُودُ ، قَالَ : دَعْنِي أُعَلِّمْكَ كَلِمَاتٍ يَنْفَعُكَ اللَّهُ بِهَا ، قُلْتُ : مَا هُنَّ ؟ قَالَ : ” إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ ، فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ سورة البقرة آية 255 حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ ، فَإِنَّكَ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلا يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، فَأَصْبَحْتُ ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ : ” مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ ؟ ” ، قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَاتٍ يَنْفَعُنِي اللَّهُ بِهَا ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ ، قَالَ : ” مَا هِيَ ؟ ” ، قَالَ : قَالَ لِي : إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ ، فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ مِنْ أَوَّلِهَا حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ سورة البقرة آية 255 ، وَقَالَ لِي : لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ ، وَلا يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ ، وَكَانُوا أَحْرَصَ شَيْءٍ عَلَى الْخَيْرِ ، فَقَالَ : ” أَمَا إِنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ ، تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ؟ ” ، قَالَ : لا ، قَالَ : ” ذَاكَ شَيْطَانٌ

আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্   যাকাতের সম্পদ পাহারা দেয়ার দায়িত্ব এক রমজান মাসে দিয়েছিলেন। তখন দেখতে পেলাম একজন আগন্তুক সদকার মাল চুরি করছে তখন আমি আগন্তুকের হাত ধরে ফেললাম এবং বললাম, আল্লাহর কসম ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব। তখন আগন্তুক বলল, আমি খুব অভাবী আর আমার অনেক প্রয়োজন। তার এ কথা শুনে দয়া করে তাকে ছেড়ে দিলাম। পরদিন সকালে রাসূলুল্লাহ্ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি উত্তর দিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, লোকটি নাকি অনেক অভাবী তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ্ বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। পরদিন আমি আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব।  সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি খুব অভাবী, আমার পরিবার আছে, আমি আর আসব না। তখন আমি তাকে দয়া করে এবারও ছেড়ে দিলাম। পরদিন আবারও রাসূল রাসূলুল্লাহ্ আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল তোমার অপরাধী কী করেছে? আমি এবারও উত্তর দিলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, লোকটি নাকি অনেক অভাবী তাই তাকে দয়া করে ছেড়ে দিয়েছি। এবারও রাসূলুল্লাহ্ বললেন, অবশ্যই সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে আর সে আবার আসবে। তৃতীয় দিনও আমি চোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। যখন সে আবারও চুরি করতে আসল তখন তাকে পাকড়াও করে বললাম, এবার অবশ্যই ,আমি তোমাকে আল্লাহর রাসূলের কাছে নিয়ে যাব, তুমি বার বার ওয়াদা কর আর চুরি করতে আস। তখন (অবস্থা বেগতিক দেখে) সে বলল, আমাকে মাফ কর। আমি তোমাকে এমন কিছু কথা বলে দিব যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন। আমি বললাম, সেগুলো কী? তখন সে বলল, যখন ঘুমাতে যাবে তখন আয়াতুল কুরসী পড়ে ঘুমাবে তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন যে তোমার সাথে থাকবে আর কোন শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না। এটা শুনে আবু হুরায়রা রাযি. তাকে ছেড়ে দিলেন । পরদিন রাসূল আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসূল বললেন, যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে । রাসূল  আবু হুরায়রা রাযি. কে আরো বললেন, তুমি কি জান সে কে? আবু হুরায়রা রাযি. বললেন, না । রাসূল আবু হুরায়রা কে বললেন , সে হচ্ছে শয়তান । (সহীহ বুখারী ২৩১১)

. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করুন

আবু উমামাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

  مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلَّا أَنْ يَمُوتَ

যে ব্যাক্তি প্রতেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতিত আর কোন বাঁধা থাকবে না। (নাসায়ী ৯৪৪৮ তাবারানী ৭৮৩২)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 13 =