স্ত্রী যদি স্বামীর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়…

জিজ্ঞাসা–৬১৭: স্ত্রী যদি স্বামীর মিলনের চাহিদা পূরণে বার বার ব্যর্থ হয় তবে করণীয় কী?–Rakibul Islam

জবাব: 

এক. যদি স্ত্রীর শরঈ কিংবা যৌক্তিক ওজর বিদ্যমান না থাকে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর চাহিদা পূরণে বাধা দেয়া হারাম। যদি স্ত্রী কোনো শরঈ-ওজর ব্যতিরেকে এমনটি করে তাহলে তা কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হবে এবং স্বামী তখন তার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে না।  কেননা, রাসূলুল্লাহ বলেছেন,

إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ, لَعَنَتْهَا الْمَلَائِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ

স্বামী যখন তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে (সঙ্গম করতে) আহ্ববান করে তখন যদি স্ত্রী না আসে, তবে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতাগণ তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতা তার উপর অভিশাপ করতে থাকেন। (বুখারী ৩২৩৭ মুসলিম ১৪৩৬ আবূ দাউদ২১৪১ আহমাদ ৭৪২২, ৮৩৭৩, ৮৭৮৬, দারেমী ২২২৮)

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ.-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এক ব্যক্তির স্ত্রী তার অবাধ্য। স্বামী সঙ্গমের প্রতি আহবান করলে স্ত্রীও তাতে সাড়া দেয় না। এক্ষেত্রে স্বামী কি এমন স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে বাধ্য? আর এক্ষেত্রে করণীয় কী?

জবাবে তিনি বলেন,

تسقط نفقتها وكسوتها إذا لم تمكنه من نفسها ، وله أن يضربها إذا أصرت على النشوز . ولا يحل لها أن تمتنع من ذلك إذا طالبها به ، بل هي عاصية لله ورسوله

যদি স্ত্রী নিজেকে স্বামীর কাছে ন্যস্ত না করে তাহলে তার ভরণপোষণ রহিত হয়ে যাবে। যদি সে স্বামীর অবাধ্যতার উপর অটল থাকে তাহলে স্বামীর জন্য জায়েয আছে তাকে মৃদু প্রহার করা। স্বামী মিলনের প্রতি আহবান করলে স্ত্রী তাতে বাধা দেয়া তার জন্য বৈধ নয়। বরং এটি হবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল -এর নাফরমানি। (মাজমুউল ফাতাওয়া ৩২/২৭৮)

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللّهُ وَاللاَّتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلاَ تَبْغُواْ عَلَيْهِنَّ سَبِيلاً إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا

নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। (সূরা নিসা ৩৪)

দুই. সুতরাং এরূপ পরিস্থিতেতে স্বামীর প্রতি আমাদের পরামর্শ ও তার করণীয় হল-

১. স্ত্রীর মাঝে সঙ্গমভীতি কেন? প্রথমে তা যাচিয়ে-খতিয়ে দেখুন। এ বিষয়ে তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে নির্দিষ্ট ‘কারণ’ নির্ণয়ের চেষ্টা করুন। যেমন- কেন সঙ্গম করার ইচ্ছে তার মাঝে নেই, মিলনের সময় তার অনুভুতি কেমন হয়, সে বেশি ব্যথা অনুভব করে কিনা, কিসে তার তৃপ্তি আসে বা কেমন সম্পর্ক সে চায়? এমনও হতে পারে স্বামীর অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নতা, মুখের দুর্গন্ধ, ছোট-খাটো ভুল ভ্রান্তির জন্য স্ত্রীকে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ তার এই সঙ্গমভীতির মূল কারণ!  কিংবা হতে পারে স্ত্রীর শারীরিক বা মানসিক কোনো রোগের কারণে তা হচ্ছে।

কারণ যেটাই হোক না কেন, এভাবে আন্তরিক-আলোচনার মাধ্যমে প্রথমে তা নির্ণয় করার চেষ্টা করুন, তাহলে দেখবেন,  সুন্দর ও উপযুক্ত সমাধানও খুঁজে পাওয়া যাবে এবং যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ডাক্তারের সহযোগিতা নেয়াটাও সহজ হবে। ইনশা-আল্লাহ।

২. আল্লাহর ভয় দেখিয়ে নসিহতের মাধ্যমে স্ত্রীকে এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন। তাকে অবহিত করুন যে, সে একাজে এগিয়ে না আসলে ফেরেশতারা তার উপর লানত করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।

৩. নিজ চাহিদা আদায়ের ব্যাপারে উগ্র না হয়ে সহবাসের আগে কম পক্ষে পনের মিনিট স্ত্রীকে চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করবেন, যাতে সে আগ্রহী ও উত্তেজিত হয়। হাদিসে এসেছে,

كان رسول الله يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها

রাসূলুল্লাহ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)

আল্লামা মানাবী রহ. লিখেছেন, সঙ্গমের আগে শৃঙ্গার এবং আবেগপূর্ণ চুম্বন করা সুন্নাতে মু্‌ওয়াক্কাদাহ এবং এর অন্যথা করা মাকরূহ। (ফাইযুল ক্বাদীর ৫/১১৫)

৪. এরপরেও যদি সে আগ্রহী না হয় তাহলে তার বিছানা আলাদা করে দিন।

৫. এরপরেও যদি তার সংশোধন না হয় তাহলে তাকে মৃদু প্রহার করতে পারেন। লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে তা কঠিন না হয়।

৬. এসবই যদি ফলপ্রসূ না হয় তাহলে স্বামী ইচ্ছা করলে তার ভরণপোষণ বন্ধ করে দিতে পারেন।

৭. এরপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে স্বামী ইচ্ছা করলে তাকে তালাক দিতে পারেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

আরো পড়ুন–

স্বামী যদি স্ত্রীর চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার হুকুম কী?

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের লজ্জাস্থানে মুখ লাগানোর হুকুম

স্ত্রীর হায়েজ বা নেফাস অবস্থায় স্বামীর চাহিদা পূরণ করার উপায় আছে কি?

প্রবাসী স্বামী মায়ের কথা শুনে যোগাযোগ করে না; কী করব?

স্বামীর প্রতি অবিশ্বাস থাকায় মানসিক অশান্তিতে আছি; কী করব?

স্বামী স্ত্রীর মাঝে আদর্শিক দ্বন্দ্ব; তাহলে কি তালাকের উপদেশ দিব?

আমার স্বামী ভাল মানুষ; কিন্তু নামাজ পড়ে না; কী করব?

স্ত্রীর অভিযোগ; স্বামী তাকে মারধর করে…

মা-বাবার খরচ চালানো দায়িত্ব ছেলে না মেয়ের এবং স্বামীর অবাধ্য হয়ে মায়ের দেখাশোনা করা যাবে কি?

সব নারীই কি নিজের স্বামীর হাড় থেকে সৃষ্ট?

স্বামী-স্ত্রী কে কোন পাশে ঘুমাবে?

রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে বস্ত্রহীন হয়ে কি ঘুমানো যায়?

‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত’ কথাটা সত্য কিনা?

বৌয়ের দুধ স্বামীর মুখে দিতে পারবে কি?

স্ত্রীকে বোন,স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করা যাবে কি?

নারীর রূপচর্চা : বৈধতা ও অবৈধতার সীমারেখা

বড়দের ঝগড়ার কারণ ও প্রতিকার

যবান সামলান!

সংসার সুখের হয় দু’জনের গুণে

স্ত্রীর হাতে সংসারের খরচের সব টাকা তুলে দেয়া যাবে কি?

প্রিয় বোন! কেন পর্দা করবেন?

হিজাবের বৈশিষ্ট্যাবলি

সুখময় দাম্পত্যজীবনের জন্য স্ত্রীদের প্রতি পনেরটি উপদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

9 − two =