জিজ্ঞাসা–৫৩৬: নামাজে আলস্যতা আসে। নামাজ পড়ার তাগিদ ভেতর থেকে চলে আসে ওয়াক্ত হলেই, কিন্তু কোনো না কোনো তালবাহানায় একদম শেষ ওয়াক্তে গিয়ে হয়ত নামাজ পড়া হয়। তার উপর নামাজে মনোযোগ এখন একেবারেই বসে না। নামাজে দাঁড়ালেই হাত পা অবসন্ন হয়ে আসে, ক্লান্ত লাগে, মাথা ভার হয়। দুনিয়াবি যত কথা আছে সব তখনই মাথায় আসে। সূরা, দুয়া পড়ি কিন্তু মনে হয় যেনো ওগুলা রেকর্ডেড। ভেতর থেকে, ভালোবাসা দিয়ে আসতেছেনা। এমনকি নামাজ শেষ হলেই দুয়া না করে উঠে যাই। আমি আমার এসব কাজে চরম অনুতপ্ত। এগুলো থেকে বাচতেঁ ও সহীহ শুদ্ধ ভাবে মনযোগ সহকারে নামাজ আদায় করতে কি করতে পারি? – নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
জবাব: মুহতারামা, আপনাকে পেয়ে বসেছে অলসতা ও উদ্যমহীনতা। এটি একটি মনোরোগ। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল্লাহর সাথে সম্পর্কের দুর্বলতা, তাকওয়ার ঘাটতি, ইবাদতে অলস ও দুর্বল ব্যক্তিদের সাথে চলাফেরা, দুনিয়া ও দুনিয়ার ভোগ নিয়ে মেতে থাকা, দুনিয়ার শেষ পরিণতি নিয়ে না ভাবা এবং যার ফলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতির মধ্যেও দুর্বলতা এসে পড়ে।
এ রোগ প্রতিরোধ করার বেশ কিছু পন্থা রয়েছে-
১. যখন আপনার মাঝে রোগটি দেখা দিবে, ঠিক ওই মুহূর্তে ভাবুন, এটা তো মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়; বরং এটা তো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে এমনটাই বলেছেন। তিনি বলেন,
৩. তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত, আওয়াবিনের মধ্য থেকে যেকোনো একটি নফল নামাজ নিয়মিত পড়ুন। উদ্যমহীনতায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, আবেগ তাড়িত হয়ে প্রথম ধাপে অতি বেশি নেক আমল করা। এটি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর আদর্শ নয় এবং উম্মতের প্রতি তাঁর ওসিয়ত নয়। আয়েশা রাযি. রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর আমলকে বিশেষিত করতে গিয়ে বলেন, ( ديمة) তাঁর আমল ছিল নিয়মিত। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ নিজে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে,
أحب الأعمال إِلَى اللَّهِ تَعَالَى أدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ
আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল- নিয়মিত আমল; যদিও সেটা পরিমাণে কম হোক না কেন। (মুসনাদে আহমাদ ৬/১৬৫)
অতএব, উদ্যমহীনতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে ধরেই বেশি আমল নয়; বরং নিয়মিতভাবে অল্প অল্প আমল করার চেষ্টা করুন। কেননা, অনিয়মিত বেশি আমলের চেয়ে নিয়মিত কম আমল ভাল।
৪. জীবনে যারা নেককার, উদ্যমী, আমলকারী ও আল্লাহওয়ালা ছিলেন এমন ব্যক্তিবর্গের লেখা ও জীবনী পড়ুন। যাতে আল্লাহর রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু উত্তম আদর্শ থাকে। এ বিষয়ে আরও জানার জন্য পড়ুন, জিজ্ঞাসা নং–৫২১।
৫. আমরা আপনাকে দোয়া করার পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে নেক আমল করতে পারার জন্য তাঁর রবের আশ্রয় ও সাহায্য প্রার্থনা করে সে বিফল হয় না। যেমনটি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ করতেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)
(উল্লেখ্য, বাংলা উচ্চারণ পাঠকের সুবিধার্থে দেয়া হয়েছে। মূলতঃ বিশুদ্ধ উচ্চারণ এভাবে লেখার মাঝে আসে না। সুতরাং একজন আলেমের কাছ থেকে বিশুদ্ধ উচ্চারণে দোয়াগুলো শিখে নিতে হবে। তারপর আমল করতে হবে।)
আমরা দোয়া করছি- আল্লাহ আপনাকে তাঁর সন্তোষজনক আমল করতে পারার তাওফিক দিন। আপনাকে উত্তম কথা, কাজ ও আচরণের তাওফিক দিন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন– নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার উপায় আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি; কী করতে পারি? নামাজের জন্য উত্তম পোশাকের ব্যবহার বাজে চিন্তার কারণে নামাজ নষ্ট হয় কি? তাহাজ্জুদ কত রাকাত এবং এর ফজিলত কী? নামাজে দৃষ্টি কোথায় রাখবে? ঘুমের কারণে দেরিতে ফজরের নামাজ পড়লে গুনাহ হবে কি? চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া যাবে কি? পুরুষ ও নারীর সিজদা-পদ্ধতি: একটি বিভ্রান্তির জবাব আমার স্বামী ভাল মানুষ; কিন্তু নামাজ পড়ে না; কী করব? জীবনে যে রোজা, নামাজ কাযা হয়েছে তা কিভাবে আদায় করব? কী কারণে সাহু সিজদা দিতে হয় এবং কিভাবে দিতে হয়? নামাযে নারীর ইমামতি তাহাজ্জুদ, ইশরাক ও বিতির নামাজ পড়ার নিয়ম মহিলারা সবখানে যেতে পারলে মসজিদে কেন পারবে না? গর্ভবতী-মায়ের নামাজ এবং কিছু পরামর্শ নারী-পুরুষের নামাজের ভিন্নতা প্রসঙ্গে নামাজ সম্পর্কে চমৎকার বয়ান