জিজ্ঞাসা–৬৭৫: মসজিদে বায়ু ত্যাগ করলে কি গোনাহ হয়? যদি গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা থাকে তবে?–আহমাদ।
জবাব: আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَا يَزَالُ الْعَبْدُ فِي صَلَاةٍ مَا كَانَ فِي مُصَلَّاهُ يَنْتَظِرُ الصَّلَاةَ ، وَتَقُولُ الْمَلَائِكَةُ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ ، حَتَّى يَنْصَرِفَ ، أَوْ يُحْدِثَ قُلْتُ : مَا يُحْدِثَ ؟ قَالَ : يَفْسُو أَوْ يَضْرِطُ
আল্লাহর কোন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত নামাযের স্থানে নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাযেই থাকে। ফেরেশতারা বলতে থাকেন, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন। তার উপর রহমত নাযিল করুন। যখনি সে স্থান ত্যাগ করে বা অযু ভেঙে যায় তখন আর সে নামাযি গণ্য হয় না এবং ফেরেশতারাও দোয়া বন্ধ করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি হযরত আবু হুরায়রা রাযি. কে জিজ্ঞেস করলাম, অযু ভাঙা মানে কী? তিনি বলেন, বায়ু ত্যাগ করা। (সহীহ মুসলিম ১১০৮)
হাদিসটি ইমাম বুখারি রহ.ও তাঁর সহীহ বুখারীতে (৪৩৬) باب الحدث في المسجدِ ‘মসজিদে বায়ুত্যাগ’ শিরোনামে এনেছেন। এর ব্যাখ্যায় ইবন রজব রহ. ফাতহুল বারীতে লিখেছেন,
مقصوده – يعني : البخاري – : أنه يجوز تعمد إخراج الحدث في المسجد ؛ لأن النبي ﷺ ذكره ، ولم ينه عنه ، إنما أخبر أنه يقطع صلاة الملائكة
‘উক্ত শিরোনাম দ্বারা ইমাম বুখারি রহ.-এর উদ্দেশ্য, ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদে বায়ুত্যাগ করা জায়েজ। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ এটি উল্লেখ করেছেন, কিন্তু নিষেধ করেন নি। তিনি কেবল বলেছেন, এর দ্বারা ফেরেশতাদের দোয়া বন্ধ হয়ে যায়।’
এজন্য ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বলা হয়েছে,
وقال فى الهندية: وَاخْتُلِفَ في الذي يَفْسُو في الْمَسْجِدِ فلم يَرَ بَعْضُهُمْ بَأْسًا وَبَعْضُهُمْ قالوا لَا يَفْسُو وَيَخْرُجُ إذَا احْتَاجَ إلَيْهِ وهو الْأَصَحُّ كَذَا في التُّمُرْتَاشِيِّ
মসজিদে ইচ্ছাকৃত বায়ুত্যাগ করা বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরাম দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের একদল এটাকে কোন সমস্যা মনে করেন নি। অপর একদল ফকীহ বলেন, মসজিদে ইচ্ছাকৃত বায়ুত্যাগ করবে না। বরং প্রয়োজন অনুভব করলে বাইরে চলে যাবে। তুমুরতাশী বলেছেন, এমতটি অধিক বিশুদ্ধ (অর্থাৎ ইচ্ছাকৃত বায়ুত্যাগ থেকে বিরত থাকা। ) (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৯৬)
সার কথা হল, মসজিদে ইচ্ছাকৃত বায়ুত্যাগ করা জায়েয হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটি করা উচিত হবে না। বিশেষ করে যদি সঙ্গে দুর্গন্ধ থাকে তাহলে তো মোটেও উচিত হবে না। বরং প্রয়োজন অনুভব করলে বাইরে চলে যাবে। কেননা, মসজিদ ইবাদতের স্থান। একে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তু থেকে পবিত্র রাখা জরুরী। নবীজী ﷺ বলেছেন,
مَنْ أَكَلَ الْبَصَلَ وَالثُّومَ وَالْكُرَّاثَ فَلَا يَقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَا، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ تَتَأَذَّى مِمَّا يَتَأَذَّى مِنْهُ بَنُو آدَمَ
যে ব্যক্তি পেঁয়াজ, রসুন এবং পেঁয়াজের মতো গন্ধ হয় এমন কোনো সবজী খাবে, সে যেন আমাদের মসজিদের ধারে কাছেও না আসে, কেননা; মানুষ যে খারাপ গন্ধ দ্বারা কষ্ট পায়, ফিরিস্তারাও তদ্রূপ কষ্ট পায়। (সহীহ মুসলিম ১/৩৯৫)
সুতরাং বায়ু তে গন্ধ বের হলে তো আরও বাজে গন্ধ বের হয়। পেঁয়াজ, রসুনের চেয়ে বেশি গন্ধ। অতএব এর তীব্র দুর্গন্ধ মসজিদে ছড়ানো যে নিষিদ্ধ হবে তা তো সহজেই অনুমেয়।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী