ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে বয়সের বাঁধা পেরিয়ে কীর্তিমান মনীষীগণ

শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

ইলম অর্জনের অভাবিতপূর্ব মর্যাদা ও গুরুত্ব

কুরআন-হাদীস ও তাফসীর গ্রন্থে দীনি ইলম অর্জনের অভাবিতপূর্ব মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা ওঠে এসেছে। দীনি ইলমকে আম্বিয়ায়ে কেরামের উত্তরাধিকার আখ্যা দিয়ে এর মাহাত্মে অনন্য মাত্রা যুক্ত করা হয়েছে। অর্জনকারী ব্যক্তিকে জান্নাতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবী ﷺ। যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন,

‏‏يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ
তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (সূরা মুজাদালাহ ১১)
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন,

مَن سلَكَ طريقًا يلتَمِسُ فيهِ علمًا ، سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طريقًا إلى الجنَّةِ

যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। (সহীহ মুসলিম ২৬৯৯)

দীনি ইলম অর্জনের অসাধারণ ৫ উপকারিতা

তাফসীরে দীনি ইলম অর্জনের অসাধারণ ৫ উপকারিতার কথাও ওঠে এসেছে। দীনি জ্ঞান না থাকলে আল্লাহকে ভয় করার গুণ থেকেও বঞ্চিত হয় মানুষ। আল্লাহর ভয়ই মানুষকে অসৎ কাজ থেকে দূরে রেখে নেক কাজের দিকে ধাবিত করে। যার অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে, কুরআন তাদের জন্যই পথপ্রদর্শক। জগদ্বিখ্যাত তাফসীর বিশারদ ইমাম রাযী রহ. দীনি ইলমকে বৃষ্টির সঙ্গে তুলনা করে এর ৫টি অসাধারণ মর্যাদা তুলে ধরেছেন। তাহলো–

১. বৃষ্টি যেমন আসমান থেকে নাজিল হয় তেমনি দীনি ইলমও আসমান থেকে নাজিল হয়।
২. দীনি ইলম বৃষ্টির ন্যায়। বৃষ্টির কারণে জমিন যেভাবে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয়। তেমনি দীনি ইলম অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণগুলো অর্জিত হয়।
৩. বৃষ্টি ব্যতিত যেমন জমিন থেকে ভালো ফসল উৎপন্ন হয় না, ঠিক দীনি জ্ঞান ব্যতিত মানুষও আল্লাহ তাআলার ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত হতে সক্ষম হয় না।
৪. বজ্রধ্বনি বা বিদ্যুৎ চমকানোর ফলে যেমন বৃষ্টি হয়; তেমনি দীনি জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই মানুষ জান্নাতের প্রত্যাশী হয় এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পায়।
৫. বৃষ্টি যেমন অনেক সময় উপকারী হয় আবার অপকারী হয়, ঠিক দীনি জ্ঞান অনুযায়ী আমল করার মধ্যে যেমন উপকার হয় তেমনি আমল না করলে তা অপকারীও হয়। (তাফসীরে কাবীর ২/১৯৮)

ইলম অর্জনের সুনির্দিষ্ট কোন বয়স নেই

এ ইলম অর্জনের সুনির্দিষ্ট কোন সময় নেই। যখনই জাগ্রত হবে তখনই পদক্ষেপ নিবে। মুমিনের ইলম অর্জনের সময়কাল তার দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী যেভাবে শৈশবেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ হয়, সেভাবে জীবনের একটা  বড় সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও ইলম তলবের ময়দানে অবতীর্ণ হওয়াটাও ঐতিহাসিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। পূর্বসূরী আকাবিরদের অনেকেই শৈশব- কৈশোরের ধাপ পেরিয়ে ইলমের ময়দানে আত্মনিয়োগ করেও ইলমের অতল গভীরে পদচারণা করেছেন। শুধু তাই নয়, ইলমের যথাযথ হক আদায়ের জন্য যে বোধশক্তি ও বিবেক থাকা দরকার তা অনেক ক্ষেত্রে ইলম তলবকারীর প্রাপ্তবয়স দাবি করে। এ কারণে আল্লামা সুয়ুতী বলেন, কোন কোন আলেমের মতে হাদীসে নববী শ্রবণের সূচনা হওয়া উচিত ত্রিশ বছর থেকে। (তাদরীবুর রাবী ১/৪১৪)

পরিণত বয়সে ইলম অর্জন

ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবায়ে কেরাম রাযি. সকলেই ছোট ছিলেন না; বরং তাদের অসংখ্যই ছিলেন বয়সে বড়। বয়স তাদের ইলম অণ্বেষণ ও শিক্ষাগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। অথচ তাঁরাই ছিলেন দীনি ইলম ও শরঈ আহকামের নির্ভরযোগ্য উস্তাদ; কুরআন ও হাদীস অনুধাবনের মূল উৎসও। হযরত সিদ্দীকে আকবর ছিলেন রাসূলে আরাবীর পর উম্মতের সবচেয়ে বড় আলেম। ইলমের ময়দানে তাঁর বিচরণ শুরু হয় প্রায় ৪০ বছর বয়সে। হযরত উমর ফারুক রাযি. ও ৩০ বছর বয়সে ইলমের ময়দানে পা রাখেন। এছাড়া আবু যর রাযি., আবুদ দারদা রাযি., প্রমুখ উম্মতের সবচে জ্ঞানী এ মহামানবগণ ইলম শিখেছেন বয়স অনেক হয়ে যাবার পর। আরো অনেকেই যুবা কিংবা পৌড় বয়সে ইলমে অর্জনে ব্যাপৃত হন। পরিণত বয়সে দীনি ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম হতে পারেন আমাদের প্রেরণার উৎস।

ইমাম বুখারী রহ. ইলম অধ্যায়ে হযরত উমর ফারুক রাযি.-এর এ বক্তব্য উল্লেখ করে পরিচ্ছেদ গঠন করেছেন এভাবে–

باب الاغتباط في العلم والحكمة وقال عمر :  تفقهوا قبل أن تُسوَّدوا

পরিচ্ছেদঃ ইলম ও হিকমতের ক্ষেত্রে সমতুল্য হওয়ার আগ্রহ প্রসঙ্গে। আর উমর রাযি. বলেন, তোমরা বয়স অধিক হওয়ার আগেই ইলম শিখে নাও।

সহীহ বুখারীতে উমর রাযি.-এর উল্লেখিত বক্তব্য উল্লেখ করে ইমাম বুখারী রহ.  নিজেই এর ব্যাখ্যায় বলেন,

وبعد أن تسوَّدوا ، وقد تعلم أصحاب النبي ﷺ في كبر سنِّهم

অর্থ্যাৎ বয়স বেশি হওয়ার পরও ইলম শিক্ষা কর। কারণ সাহাবায়ে কেরাম (অধিকাংশ) তো বয়স অধিক হওয়ার পরই দীনী ইলম শিক্ষা করেছেন। (সহীহ বুখারী পৃ. ৩৯)

বয়সের বাঁধা পেরিয়ে কীর্তিমান মনীষীগণ

যার কারণে পূর্বসূরি বরণীয় উলামায়ে হক্কানীর মধ্যে এমন ব্যক্তিত্বের সংখ্যাও কম নয় যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বয়স অতিক্রান্ত হওয়ার পর ইলমের নূর ধারনে উদ্যোগী হয়েছেন। যেমন,

১. আলী ইবনে হামযা। ইমাম কিসাঈ নামেই যিনি সমধিক প্রসিদ্ধ। ইলমে নাহুর প্রতিটি ছাত্র এই নামের মহান মানুষটির সাথে পরিচিত। আরবী ব্যাকরণশাস্ত্রে যার রয়েছে বিশাল অবদান। ইমাম শাফিঈ যার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন,

من أراد أن يتبحر في النحو فهو عيال على الكسائي

ইলমে নাহুর ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করতে চাইলে কিসাঈ-র পোষ্যবর্গ হতে হবে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ০৭/৫৪)

ইলমে কিরাআতেরও অন্যতম ইমাম তিনি। যে সাত কেরাতের কথা আমরা সবাই জানি, সে সাত কেরাতের এক কেরাত তাঁর দিকেই সম্পৃক্ত। তিনি বয়স অনেক হওয়ার পরই ইলমে নাহু শেখা শুরু করেছেন। আল্লামা কিফতী রহ. বলেন,

 انما تعلم الكسائي النحو بعد الكبر فلم يمنعه ذلك من ان برع فيه

কিসাঈ বয়স অনেক হওয়ার পরই নাহু শেখা শুরু করেন। এ শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জনে অধিক বয়স তার জন্য বাধা হয় নি। (আমবাউর রুয়াত ২ / ২৭১)

২. আল্লামা ইবনে হাযম রহ.। ইসলামের ইতিহাসে যারা অমর হয়ে আছেন তিনি তাদের অন্যতম। আল্লামা যাহাবী রহ. তার ব্যাপারে বলেন,

ومن أشهر من ذكر عنهم الطلب بعد كبر السن ابن حزم الأندلسي

বয়স হওয়ার পর যারা ইলম শেখা শুরু করেছেন তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হলেন ইবনে হাযম আন্দালুসী।

তার ইলমে ফিকহ অন্বেষণের সূচনা হয়েছিল বিশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে। ইবনে হাযম রহ. নিজেই সে ঘটনা বলেছেন। একদিন তিনি এক জানাযায় শরিক হন। তখন এক মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়েন। এক ব্যক্তি তখন তাকে বলল, ওঠ, আগে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামায পড়। তখন তার বয়স ছিল ছাব্বিশ।  তিনি তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যান। জানাযা শেষে ফিরে আসার সময়ও মসজিদে যান। এবার প্রবেশ করা মাত্রই নামায শুরু করে দেন। তখন তাকে বলা হল, আরে বস বস; এখন নফল নামায পড়ার সময় নয়। তখন ছিল আসরের পর। এ ঘটনাটি তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। এরপর থেকেই তিনি ইলম অর্জন শুরু করেন। তার এ অজ্ঞতাই ইলম অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। (মুজামুল উদাবা, ইবনে হাযম রহ.-এর জীবনী)

৩. আবু বকর আল-কফ্ফাল রহ.। শাফেঈ মাযহাবের অন্যতম ইমাম তিনি। আল্লামা সুবুকী রহ. বলেন,

فلما كان ابن ثلاثين سنة أحس من نفسه ذكاء : فأقبل على الفقه

শায়েখ ইমাম আবু বকর আল-কফ্ফাল রহ. বয়সের কোঠা ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়ার পর ইলম অন্বষণের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। এক পর্যায়ে ফিকাহ শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। (তাবাকাতুশ-শাফিইয়্যা ৫/৫৪)

৪. আবু আবদুল্লাহ আসবাগ ইবনুল ফারজ রহ.। মালেকী মাযহাবের বরেণ্য ফকিহ। আল্লামা যাহাবী রহ. তার ব্যাপারে বলেন,

وطلب العلم وهو شاب كبير

তিনি পৌঢ় বয়সে ইলম অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১০/৬৫৬)

৫. ঈসা ইবনু মুসা গুঞ্জার রহ.। উপনাম ছিল আবু আহমাদ আলবুখারী। মা-ওয়ারাউননাহর তথা ট্রান্স অক্সিয়ানা অঞ্চলের সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন। হাকিম রহ. বলেন,

هو إمام عصره ، طلب العلم على كبر السنِّ ، وطوَّف

তিনি ছিলেন নিজ যুগের ইমাম। পরিণত বয়সে ইলম শিখেছেন। ইলম অন্বেষণে অনেক পরিভ্রমণ করেছেন। (শাযারাতুয যাহাব ১/৩৩০)

৬. হারিস ইবনু মিসকিন রহ.। মিসরের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ২৫০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেছিলেন। আল্লামা যাহাবী রহ. তার ব্যাপারে বলেন,

وإنما طلب العلم على كبَر

তিনি পৌঢ় বয়সে ইলম শিখেছেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ১২/৫৪)

৭. ইজ্জুদ্দীন ইবনুস সালাম রহ.। ইলমী আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সত্য কথন ও সাহসী উচ্চারণে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব। আল্লামা ইবনে দাকীকুল ঈদ যাকে সুলতানুল উলামা (উলামা-সম্রাট)  উপাধি দিয়েছেন। বাস্তবিক অর্থেই তিনি ছিলেন সম্রাটতুল্য একজন মানুষ। মানুষের হৃদয়জগতে তিনি ছিলেন সম্রাটের চেয়েও সম্মানিত। পরাক্রমশালী শাসকেরা পর্যন্ত মাথা নত করত তার সামনে। ইজ্জুদ্দীন রহ.-এর জানাযার খাট নিয়ে মানুষ যখন শাহী প্রাসাদের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল তৎকালীন শাসক আলমালিকুয যাহির তখন বলেছিল,

আজ আমার রাজত্ব স্থিতিশীলতা লাভ করেছে। এই শায়েখ যদি জনগণকে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বলতেন তাহলে তিনি আমার থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিতে পারতেন। তবাকাতুশ  শাফিইয়্যাতিল কুবরা ৮/২১৫

এই উলামা-সম্রাটও ইলম শেখা শুরু করেছেন বয়স অনেক হওয়ার পরে। তার জীবনীতে লেখা হয়েছে

كان الشيخ عز الدين في أول أمره فقيرا جدا ولم يشتغل إلا على كبر

ইজ্জুদ্দীন রহ. প্রাথমিক অবস্থায় খুবই গরীব ছিলেন। তিনি ইলম অর্জনে মাশগুল হয়েছেন অনেক বয়সে। (তাবাকাতুশ-শাফিইয়্যাতিল কুবরা ৮/২১৫)

এছাড়াও ফুযাইল ইবনে ইয়ায, ইবনুল আরাবী রহ. প্রমুখের মতো উজ্জ্বল নক্ষত্ররা বয়সের বাধা পেরিয়ে ইলমী অঙ্গনকে শাসন করেছেন।

ইবনু উকাইল রহ. বলেন, আশি বছরের বার্ধক্যে আমি ইলমে যে স্বাদ পেয়েছি তা চল্লিশ বছরে ইলমের স্বাদ অপেক্ষা তীব্র ছিল।

একটি প্রেরণা-জাগানিয়া ঘটনা

বয়সকালে ইলম শেখার ক্ষেত্রে একটি সমস্যার কথা অনেকেই সামনে নিয়ে আসেন। তা হল, বয়স একটু বেশি হয়ে গেলে কিছু আর মনে থাকতে চায় না। কোনো কিছু মুখস্থ করতে হলে অনেক সময় লাগে। কারো কারো ক্ষেত্রে এ সমস্যার বাস্তবতাও পাওয়া যায়। তবে এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলছি, মানুষ যখন কোনো কাজের হিম্মত করে তার জন্য শতভাগ চেষ্টা ব্যয় করে তখন সে কাজটি আল্লাহ তাআলা তার জন্য সহজ করে দেন। একটা উদাহারণ দেই।

শাফেঈ মাযহাবের অন্যতম ইমাম আবু বকর আল-কফ্ফাল রহ.। ইতিপূর্বে বলেছিলাম, বয়সের কোঠা ত্রিশ পেরিয়ে যাওয়ার পর ইলম অন্বষণে ব্রতী হন। আল্লামা সুবুকী রহ. তাঁর ব্যাপারে বলেন,

الإمام الجليل أبو بكر القفال الصغير ، شيخ طريقة خراسان

মহান ইমাম আবু বকর আল-কফ্ফাল। খুরাসানের তরিকতের ইমাম…। (তাবাকাতুশ-শাফিইয়্যা ৫/৫৪)

এ মহান মনীষীর জীবনেও উপরেল্লেখিত সমস্যাটি এসেছিল। তবুও সে প্রতিবন্ধকতা দূর করে তিনি কীর্তিমানদের মাঝে অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন।

ইলম শেখার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথমে তুর্কিমিনিস্তানের র্মাওএলাকার একজন শায়েখের কাছে যান। তিনি তাকে কিতাবুল মুযানীর এ তিনটি শব্দ প্রথম দিন শেখান,

هذا كتاب اختصرته

এ পাঠ গ্রহণ করে তিনি ছাদে চলে যান। এশা থেকে ফজর পর্যন্ত এ তিনটি শব্দই মুখস্থ করতে থাকেন। সারা রাত জেগে থাকার কারণে শেষ রাতে একটু চোখ লেগে আসে। তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।  কিন্তু ঘুম ভাঙতেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সারা রাত ধরে কী পড়েছেন কিছুই মনে পড়ছে না। তিনি এ কথা ভেবে লজ্জিত হচ্ছিলেন যে, শায়েখকে আমি কী বলব।  এ দুশ্চিন্তার মাঝেই হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। এমন সময় প্রতিবেশী এক মহিলা বলল,

يا أبا بكر لقد أسهرتنا البارحة في قولك هذا كتاب اختصرته

আবু বকর! গতকাল রাতে هذا كتاب اختصرته বলে বলে তো সারা রাত আমাদের ঘুমাতে দাও নি।

মহিলার অভিযোগভরা কথার মাঝেই তিনি যেন খুঁজে পেলেন হারানো সম্পদ। শায়েখের কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন।  শায়েখ তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলেন,

لا يصدَّنَّك هذا عن الاشتغال، فإنك إذا لازمت الحفظ والاشتغال صار لك عادة

এ কারণে যেন তোমার ইলম শেখার আগ্রহে ভাটা না পড়ে। কারণ তুমি যখন ইলম চর্চায় নিমগ্ন থাকবে এবং সবসময় মুখস্থ করতে থাকবে তখন তা তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে। (মু’জামুল বুলদান ৫/১১৬)

শায়েখের কথা সত্যি হয়েছিল। কঠিন অধ্যাবসায় ও চেষ্টা-মুজাহাদার মাধ্যমে এমন দুর্বল মুখস্থশক্তির অধিকারী মানুষটিই হয়েছিলেন নিজ যুগের বরেণ্য ইমাম। ৪১৭ হিজরিতে তিনি ৮০ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছিলেন। এ কারণে তাঁর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ আছে,

عاش ثمانين سنة، أربعين جاهلا، وأربعين عالما

অর্থাৎ, আশি বছর বেঁচেছিলেন। ৪০ বছর জাহিল বা মূর্খ হয়ে। আর ৪০ বছর আলেম হয়ে।  (মু’জামুল বুলদান ৫/১১৬)

আসলে যদি দিলে সাচ্চা ইরাদা ও পোখতা হিম্মত থাকে তাহলে সব কঠিনকেই আল্লাহ তাআলা সহজ করে দেন। আর যদি শত চেষ্টার পরও মুখস্থ না হয় বা না বুঝে আসে তবুও এ চেষ্টার কারণে আল্লাহ তাআলা আজর ও সাওয়াব আমাদের দান করবেন।

যারা বয়স হওয়ার পর ইলমী নববীর নূর ধারনে উদ্যোগী হয়েছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের মেহনতের জযবা বাড়িয়ে দিন এবং যত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সবগুলো নিজ অনুগ্রহ ও আপন কুদরতে দূর করে দিন। আমীন।।