ইস্তেখারার সুন্নাহপদ্ধতি

ইস্তেখারার সুন্নাহপদ্ধতি

মূল: শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী

অনুবাদ: শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

হামদ ও সালাতের পর!

عن مكحول الأزدي، قال: سمعت ابن عمر – رضي لله عنهما – يقول: «إن الرجل يستخير الله تبارك وتعالى؛ فيختار له فيسخط على ربه – عز وجل -! فلا يلبث أن ينظر في العاقبة فإذا هو خير له» (الزهد لابن المبارك ص 32)

হাদীসের মর্ম

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি.-এর একটি বাণী এটি। তিনি বলেন, অনেক সময় মানুষ আল্লাহর কাছে ইস্তেখারা করে অর্থাৎ যে কাজটিতে তার জন্য কল্যাণ রয়েছে, তা যেন হয় আল্লাহর দরবারে সে এই কামনা করে তখন আল্লাহ ঐ কাজটি তাকে করার সুযোগ করে দেন, যা তার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু বাহ্যিক দৃষ্টিতে বান্দা কাজটি নিয়ে ব্যথিত হয়। মনের বিপরীত কাজ পেয়ে সে বলে, আমি আল্লাহর কাছে কামনা করেছি আমার জন্য যা ভাল হয় তা, অথচ পেলাম এই কাজ! এখন একাজে তো দেখি শান্তি নাই, স্বস্তি নেই। তারপর কিছুদিন যাওয়ার পরই বিষয়টি তার কাছে স্পষ্ট হয়। তখন সে টের পায়, মূলত আল্লাহ আমার জন্য যা ফায়সালা করেছেন, তাতেই মঙ্গল ও কল্যাণ। অর্থাৎ তাৎক্ষণিকভাবে বুঝে না এলেও বিষয়টি সে পরে বুঝতে পারে। তাছাড়া কোন কাজে কল্যাণ আছে আর কোন কাজে নেই, তা অনেক সময় দুনিয়াতে বুঝা যায় না বরং আখেরাতে তা প্রকাশ পাবে।
উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি বিষয় সবিশেষ প্রনিধানযোগ্য। এগুলো বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। প্রথম কথা হল, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করে, আল্লাহ তখন কল্যাণের ফয়সালা করেন। ইস্তেখারা কাকে বলে? এ ব্যাপারে মানুষের মাঝে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা পাওয়া যায়। সাধারণত মনে করা হয়, ইস্তেখারার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ও আমল। তারপর রয়েছে স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নের ভিতরে এ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয় যে, অমুক কাজটি কর। মনে রাখবেন, ইস্তেখারার যে মাসনূন পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে প্রমাণিত, সেখানে এ ধরনের কোনো কথা নেই।
ইস্তেখারার পদ্ধতি ও দোয়া
ইস্তেখারার মাসনূন পদ্ধতি এই– দুই রাকাত নফল নামাজ ইস্তেখারার নিয়তে পড়বে। নিয়ত করবে এভাবে; আমার সামনে দুটি পথ আছে। এর মধ্য থেকে যেটি আমার জন্য মঙ্গলজনক আল্লাহ যেন আমার জন্য তার সিদ্ধান্ত দান করেন। তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়বে। নামাজের পর ইস্তিখারার মাসনুন দোয়া পড়বে, যা রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি খুব বিস্ময়কর ও তাৎপর্যপূর্ণ। নবীরাই পারেন এমন অন্তপ্রাণসম্পন্ন দোয়া করতে ও শেখাতে। আর কারও পক্ষে এমন দোয়া রচনা করা সম্ভব নয়। মাথার ঘাম পায়ে ফেললেও নয়। দোয়াটি এই–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ
হে আল্লাহ! আপনার মহাজ্ঞানের উসিলায় আমি আপনার কাছেই কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আপনার মহাশক্তিতে শক্তি চাই, আর আপনার মহান অনুগ্রহ থেকে আপনার কাছেই কিছু কামনা করছি। কারণ আপনি তো ক্ষমতা রাখেন, আমি তো কোন ক্ষমতা রাখি না, আপনিই জ্ঞানবান, আমি তো কোন জ্ঞান রাখি না, আপনি তো অদৃশ্য সম্পর্কে মহাজ্ঞানী। হে আল্লাহ! যদি আপনি জানেন যে, এই বিষয়টি (এই স্থানে ওই বিষয়টির নাম বলবে বা মনে মনে ভাববে যার জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে) আমার জন্য, আমার দ্বীন, জীবিকা ও পরিণাম হিসাবে ভাল, তবে এটি আমার জন্য সহজ করে দিন, এরপর এতে আমার জন্য বরকত দান করুন। আর যদি জানেন যে, এই বিষয়টি আমার জন্য, আমার দ্বীন, জীবিকা ও পরিণাম হিসাবে মন্দ, তবে এটিকে আমার থেকে দূরীভূত করে দিন এবং আমাকে এটি থেকে সরিয়ে রাখুন এবং যেখানে আমার জন্য মঙ্গল নিহিত তা আমার আয়ত্বাধীন করে দিন, অতঃপর তা দিয়ে আমাকে আপনি সন্তুষ্ট করে দিন। (তিরমিযী ৪৮০)
দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে দোয়াটি করবে, এতে ইস্তেখারা হয়ে যাবে।
ইস্তেখারার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই
অনেকে মনে করেন ইস্তেখারা করতে হয় ইশার নামাজের পর কিংবা রাতের বেলা শোয়ার পূর্বে। মূলত এমনটি জরুরী নয়। বরং যখনই সুযোগ হয়, তখনই ইস্তেখারা করা যাবে। রাত-দিন কিংবা ঘুম ও জাগ্রত থাকার কোনো শর্ত এখানে নেই।
স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়
অনেকে মনে করেন, ইস্তেখারার পর স্বপ্ন দেখা দিবে। স্বপ্নের মাধ্যমে আমাকে জানিয়ে দেওয়া হবে যে, অমুক কাজটি করো কিংবা করো না। মনে রাখবেন, এক্ষেত্রে স্বপ্ন দেখাও জরুরী নয়। বরং অনেক সময় স্বপ্ন দেখা দেয় আর অনেক সময় দেখা দেয় না।
ইস্তেখারার ফল
কেউ কেউ বলেন, ইস্তেখারার পর অন্তর একদিকে ঝুঁকে পড়ে। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে এমনটি হয়েও থাকে। তখন মন যে দিকে ঝুঁকবে সেটাই করবে। কিন্তু ধরুন, কারো যদি এমন অবস্থাও সৃষ্টি না হয়; বরং ইস্তেখারার পরেও মন দোদুল্যমান থাকে। মনে রাখবেন, তখনও ইস্তেখারার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায়। কেননা, ইস্তেখারা করার পর আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সেটাই ফয়সালা করেন, যা তার জন্য কল্যাণকর। তারপর অবস্থার এমন পরিবর্তন ঘটে, যা বান্দার জন্য মঙ্গলজনক। অনেক সময় মানুষ কোন বিষয়কে খুব কল্যাণকর মনে করে, কিন্তু হঠাৎ একটা বাধা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। আল্লাহ বান্দাকে ওই কাজ আর করতে দেন না। এর অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে এটা তার জন্য কল্যাণকর ছিল না। কল্যাণ কিসের মধ্যে– এটা তো আল্লাহই ভালো জানেন। তাই ইস্তেখারার বরকতে তাকে এমন কাজ করার তৌফিক দেন, যা তার জন্য কল্যাণকর। কিন্তু অনেক সময় বিষয়টি বান্দার কাছে অবোধগম্য থেকে যায়।
তোমার জন্য এটাই ভালো ছিলো
যেহেতু বিষয়টি বান্দা বুঝে উঠতে পারেনা, তাই অনেক সময় সে আল্লাহর কাছে অভিযোগ করে যে, হে আল্লাহ, আমি চাইলাম কী আর আপনি করলেন কী! এজন্যই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলেন, হে মূর্খ! তুমি নিজের সীমিত বুদ্ধি নিয়ে ভাবছো, কাজটি তোমার জন্য মঙ্গলজনক হয় নি। কিন্তু যার ইলেমে রয়েছে গোটা বিশ্ব জগতের সব কিছু, প্রকৃতপক্ষে তিনিই তো জানেন তোমার জন্য কোনটি মঙ্গল জনক।
তিনি যা করেছেন সেটাই তোমার জন্য মঙ্গলজনক। অনেক সময় মানুষের কাছে বিষয়টি পুরো জীবনের জন্য অবোধগম্য থেকে যায়। তারপর পরকালে গিয়েই পরিষ্কার হবে যে, কোন বিষয়টি তার জন্য ভাল ছিল।
শিশুর মতো তুমি
যেমন একটি শিশু। মা-বাবার কাছে বায়না ধরেছে সে অমুক জিনিস খাবে। মা বাবা জানে, জিনিসটি খেলে তার ক্ষতি হবে। তাই তারা জিনিসটি তাকে দিচ্ছে না। এখন শিশুটি নিজের মূর্খতার কারণে মনে করছে, মা-বাবা তার উপর জুলুম করেছে। আমি যা চাই তা দিচ্ছে না। বরং উল্টো তিক্ত ওষুধ খাওয়াচ্ছে। শিশুটি তিতা ওষুধের উপকারিতা জানে না। তাই ভাবছে, এটা আমার জন্য কল্যাণকর নয়।
কিন্তু একদিন সে বড় হবে। তখন সে বুঝবে, আমি তো আমার জন্য বিষ চেয়েছিলাম। আর মা বাবা আমার সুস্থতার কথা ভেবেছিলেন। সুতরাং মা-বাবার কাজটা ছিল সঠিক আর আমারটা ছিল বেঠিক। আল্লাহ তাআলা তো নিজ বান্দার উপর মা-বাবার চেয়ে ভালো। তাই তিনি বান্দার জন্য সেটি ফয়সালা করেন, যা বান্দার জন্য প্রয়োজন ও মঙ্গলজনক। কিন্তু বান্দা হয়ত বিষয়টি বোঝে না। বুঝলেও পরে বুঝে।
হযরত মুসা আ.-এর ঘটনা
ঘটনাটি শুনেছি আমার শায়েখ ডা. আব্দুল হাই রহ.-এর মুখে। হযরত মুসা আ.-এর ঘটনা। আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য তিনি তুর পাহাড়ে যাচ্ছিলেন। পথে এক লোকের সাথে তাঁর দেখা হয়। লোকটি বলল, মূসা! আপনি তো আল্লাহর কাছে যাচ্ছেন। নিজের প্রয়োজনের কথা বলার মোক্ষম সময় তো এটাই হয়। আমি একজন গরীব মানুষ। উপরন্তু নানা মুসিবতে জর্জরিত। আপনি যখন আল্লাহর সাথে কথা বলবেন, তখন দয়া করে আমার কথাও বলবেন। আল্লাহর দরবারে আমার সুখশান্তির জন্য একটু দোয়া করবেন।
হযরত মুসা লোকটিকে ওয়াদা দিলেন। বললেন, ঠিক আছে, তোমার জন্য দোয়া করব।
তারপর তিনি চলে গেলেন তুর পাহাড়ে। আল্লাহর সাথে কথা বললেন। কথা শেষে লোকটির কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ল। তাই আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ, অমুক জায়গায় আপনার এক বান্দা আছে। তার নাম এই। সে আমাকে বলেছিল, আমি যখন আপনার সামনে আসব, তখন তার দূরাবস্থার কথা যেন আপনাকে জানাই। হে আল্লাহ, সেও তো আপনার বান্দা। আপনি তার উপর একটু দয়া করুন। সে যেন সুখশান্তিতে থাকতে পারে এর ব্যবস্থা করে দিন। তাকে আপনারা নেয়ামত দান করুন এবং তার মুসিবত দূর করে দিন। আল্লাহ বললেন, মুসা! তাকে অল্প নেয়ামত দিব না বেশি নেয়ামত দিব? মুসা আ. ভাবলেন, আল্লাহর কাছে চাচ্ছি সুতরাং কম চাইবো কেন! তাই তিনি বললেন, হে আল্লাহ, নেয়ামত যেহেতু দিবেন তো বেশি করে দিন। আল্লাহ বললেন, ঠিক আছে যাও। আমি তাকে অনেক নেয়ামত দিয়ে দিলাম। আল্লাহর কথা শুনে মুসা আ. খুব খুশি হলেন। তারপর যে ক’দিন তুর পাহাড়ে থাকা ছিল, সে কয়দিন সেখানে থাকলেন।
কয়েকদিন পর যখন তিনি তুর পাহাড় থেকে ফিরে এলেন, তখন তার অন্তরে জাগলো, যে বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলাম, তার একটু খোঁজ নেওয়া দরকার। তাই তিনি লোকটির বাড়িতে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখলেন লোকটি নেই। লোকটির বাড়িতে এখন অন্য লোক। মূসা আ. বললেন, আমি অমুক এর সাথে দেখা করতে চাই। তখন তাঁকে জানানো হলো, ঐ লোক তো ইন্তেকাল করেছে। মূসা আ. হিসাব করে দেখলেন, যে সময় তিনি লোকটির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, এর কিছুক্ষণ পরই লোকটি ইন্তেকাল করেছে। এতে তিনি খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং আল্লাহর কাছে আরজ করলেন, হে আল্লাহ, ব্যাপারটা আমার কাছে পরিস্কার নয়। আমি দোয়া করলাম তার সুখ-শান্তির; আর আপনি তাকে মেরেই ফেললেন! আল্লাহ উত্তর দিলেন, মূসা! যখন তুমি আমার কাছে লোকটির জন্য দোয়া করেছিলে, তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী পরিমাণ নেয়ামত দিব–বেশি না কম? তুমি বলেছিলে, বেশি। আর যদি আমি সারা দুনিয়াও দান করতাম তাহলেও তা বেশি হতো না বরং কমই হত। তাই বেশি নেয়ামত দেওয়ার জন্য তাকে জান্নাতে নিয়ে এলাম।
এই ঘটনা থেকে বোঝা গেল, মানুষ সীমিত বুদ্ধি দ্বারা নিজের কল্যাণ নির্ণয় করতে সক্ষম নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই ভালো জানেন কার কল্যাণ কিসে।
ইস্তেখারা করার পর নিশ্চিন্ত হয়ে যাও
এ কারণেই আলোচ্য হাদিসে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলেন, ইস্তেখারা করার পর নিশ্চিন্ত হয়ে যাও। ভাবো, আল্লাহ আমার জন্য উত্তম ফয়সালা করবেন। সে ফায়সালা ক্ষেত্রবিশেষ দৃশ্যত ভালো মনে না হলেও প্রকৃতপক্ষে ভালো। তারপর ‘ভালো’ হওয়াটাও হয়তো দুনিয়াতে প্রকাশ নাও পেতে পারে বরং আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
ইস্তেখারাকারী ব্যর্থ হয় না

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا خَابَ مَنِ اسْتَخَارَ، وَلَا نَدِمَ مَنِ اسْتَشَارَ

যে ব্যক্তি ইসতেখারা করে, সে ব্যর্থ হয় না; আর যে পরামর্শ করে, সে লজ্জিত হয় না। (মাজমাউযযাওয়াইদ খ. ০৬, পৃ. ৯৬)

ইস্তেখারার সংক্ষিপ্ত দোয়া
ইস্তেখারার উল্লেখিত পদ্ধতি কিছুটা দীর্ঘ। অনেক সময় মানুষ সিদ্ধান্ত পৌঁছার জন্য এত দীর্ঘ সময় নাও পেতে পারে। তাই রাসুলুল্লাহ ﷺ একটি সংক্ষিপ্ত দোয়া আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। দোয়াটি এই–
اللَّهُمَّ خِرْ لِي وَاخْتَرْ لِي
‘হে আল্লাহ! আপনিই ঠিক করে দিন যে, আমাকে কোনটি অবলম্বন করতে হবে।’ (কানযুল উম্মাল খ. ০৭ হাদিস নং ১৮০৫৩)
এছাড়া আরেকটি দোয়া হাদীস শরীফে রয়েছে,
اللَّهُمَّ اهْدِنِي، وَسَدِّدْنِي
‘হে আল্লাহ! আমাকে পথ দেখান এবং সোজা পথ দেখান।’ ( সহীহ মুসলিম, যিকর ও দোয়া অধ্যায়)
অনুরূপভাবে এ দোয়াটিও হাদীস শরীফে এসেছে,
اللَّهُمَّ أَلْهِمْنِي رُشْدِي
‘হে আল্লাহ! যে প্রার্থী সঠিক তা আমার অন্তরে ঢেলে দিন।’ ( তিরমিযী, কিতাবুদ দাওয়াত, অধ্যায় নং ৭০)
যদি আরবীতে সম্ভব না হয় তাহলে কমপক্ষে নিজের ভাষায় এ দোয়াগুলো করা যেতে পারে। অনুরূপভাবে যদি মুখে উচ্চারণ সম্ভব না হয় তাহলে কমপক্ষে মনে মনে হলেও এ দোয়াগুলো করুন।
মুফতি শফী রহ.- এর আমল
আমি আব্বাজান মুফতি শফী রহ.-কে সারাজীবনে আমল করতে দেখেছি। যখন এমন কোন বিষয়ে তাঁর সামনে আসতো, যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া মুশকিল হয়ে যেত, তখন তিনি ক্ষণিকের জন্য চোখ বন্ধ করে নিতেন। যারা তাঁর এই আমলের রহস্য জানতো না, তারা বিষয়টি বুঝতো না। কিন্তু মূলত তিনি চোখ বন্ধ করে দিলকে আল্লাহমুখী করে নিতেন এবং মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, হে আল্লাহ, আমার সামনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সিদ্ধান্ত ও সমাধানের ব্যাপারে আমি দোদুল্যমান। আপনি দয়া করে আমার অন্তরে তা-ই ঢেলে দিন যা আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য উত্তম।
এভাবে তিনি মনে মনেই সংক্ষিপ্ত ও ক্ষণিকের ইস্তেখারা করে নিতেন।
উত্তরদানের সময় দোয়ার আমল
হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. বলতেন, একটা আমল আমি সবসময় করি। তা হল, কেউ আমার কাছে কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য এলে আমি সাথে সাথে আল্লাহর দিকে রুজু হই। কারণ আমি তো জানিনা সে আমাকে কী জিজ্ঞেস করবে। তাই দোয়া করতে থাকি, হে আল্লাহ, এই লোক আমাকে যা জিজ্ঞেস করবে, তার সঠিক উত্তর আমার অন্তরে ঢেলে দিন।
মূলত একেই বলা হয়, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা ধরে রাখা।
ডা. আব্দুল হাই রহ. বলতেন, ভাই! নিজের রবের সাথে কথা বল। যে কোন ঘটনার মাঝে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। আল্লাহর দিকে রুজু হও। ওই কাজে আল্লাহর কাছ থেকে হেদায়াত ও নির্দেশনা তলব কর। অভ্যাস নিজের জীবনের জন্য অনিবার্য করে নাও। এতে ধীরে ধীরে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় হবে। ফলে একসময় অন্তরে শুধু আল্লাহর কথাই জাগরুক থাকবে।
তিনি আরো বলতেন, আগেকার বুযুর্গানেদ্বীন যে পরিমাণে রিয়াজত-মুজাহাদা ও কষ্ট-সাধনা করেছেন, তোমরা তা কোত্থেকে পারবে! এজন্য আমি তোমাদেরকে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ কার্যকর প্রক্রিয়া বলে দিচ্ছি। এতে ‘ইনশাআল্লাহ’ আসল উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে। আসল উদ্দেশ্য তো হল, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা। আর তা ইনশাআল্লাহ উক্ত পদ্ধতিতে লাভ করা সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে একথা গুলোর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।