যৌবন সকলের আছে
মুহতারাম উপস্থিতি, মূলত যৌবন সকলের আছে। দেখুন, রাসুলুল্লাহ ﷺ যেমনিভাবে যুবকদের ব্যাপারে বলেছেন,
يَا شَبَابَ قُرَيْشٍ ، احْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَلا تَزْنُوا ، أَلا مَنْ حَفِظَ فَرْجَهُ فَلَهُ الْجَنَّةُ
হে কুরাইশের যুবকেরা! তোমরা লজ্জাস্থান হেফাজত কর এবং ব্যভিচার করো না। মনে রেখ, যে ব্যক্তি লজ্জাস্থান হেফাজত করবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (বাইহাকি ৫০১৫)
অনুরূপভাবে বৃদ্ধদের ব্যাপারেও তিনি বলেছেন,
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَلَا يُزَكِّيهِمْ ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ، شَيْخٌ زَانٍ ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ
তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছে- ১. বৃদ্ধ ব্যভিচারী ২. মিথ্যাবাদী শাসক এবং ৩. অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি। (মুসলিম ১৫৯)
অন্যথায় বৃদ্ধ লোকটির নাটক-সিনেমার প্রতি এত আসক্তি কেন! কেন সংবাদ দেখার বাহানায় টেলিভিশন থেকে মুখ ফেরাতে চায় না! কেন স্কুল ছুটি হলে দোকানের ব্যাঞ্চে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে! তাছাড়া বুড়ার জন্য বুড়িও তো আছে!
উম্মতের প্রতি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর উইশ
এজন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ উম্মতের প্রতি উইশ ব্যক্ত করেছেন, তিনি উম্মতের সকলের কামনা করেছেন তারা যেন ব্যভিচার থেকে দূরে থাকে। তিনি বলেন,
مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنُ لَهُ الْجَنَّةَ
কে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্ত্তর এবং তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্ত্তর জিম্মাদার হবে? তবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। (বুখারী ৬১৩৬ )
যৌবন সম্পর্কে পুরুষদের চাইতে নারীরা বেশি সতর্ক থাকতে হয় কেন?
পবিত্র জীবন তথা ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপনের প্রচেষ্টা পুরুষদের চাইতে নারীদের মাঝে এক্টু বেশি থাকতে হয়। কেননা, নারী সাধারণত এক্টু সহজ-সরল হয়। মনে করে, অমুক আমাকে তো মেয়ে হিসেবে দেখে। ছেলেটা তো আমাকে খালা ডাকে। লোকটি তো আমাকে বোন ভাবে। এই জাতীয় ভাবনার কারণে পরপুরুষের সামনে অনায়াসে চলে যায়। কিন্তু সে তো জানেনা, ওই পুরুষটি যে তাকে এই পবিত্র শব্দগুলোর আড়ালে মনে মনে ভোগ করে যায়। দুনিয়ার চোখে সে সাদা মানুষ থাকে, কিন্তু অন্তরে লুকিয়ে রাখে ব্যভিচার। আমাদের শায়খের ভাষায়; বাহ্যিক দৃষ্টিতে ‘বান্দা’,কিন্তু অন্তর অনেক ‘গান্দা’। গান্দা মানে দুর্গন্ধময়।
তাছাড়া একজন নারী বেপর্দায় চললে বহু পুরুষের গুনাহর ‘কারণ’ সে হয়। যেমন ধ্রুন, একজন নারী বাসা থেকে বের হল। গেল আধা মাইল। যাওয়ার পথে তার প্রতি একশ’ পুরুষ কুদৃষ্টি দিল। তাহলে এর অর্থ হল, সে একজন। তবে তার কারণে চোখের ব্যভিচার ও মনের ব্যভিচারে লিপ্ত হল একশ’ জন। এভাবে একশ’ পুরুষ গোপন গুনাহ করে নিল শুধু তার কারণে।
এই জন্য যে নারী বেপর্দায় চলে তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ ﷺ দুই বার বলেছেন, সে এমন, সে এমন অর্থাৎ সে ব্যভিচারিণী। রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর ভাষায়-
كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ ، وَالْمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا
প্রতিটি চোখ ব্যভিচারী। কোন মহিলা যদি পারফিউম লাগিয়ে কোন মজলিসের পাশ দিয়ে যায় তবে সে এমন, সে এমন অর্থাৎ ব্যভিচারিণী। (তিরমিযী ২৭৮৬)
তাহলে বুঝা গেল, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি থেকে সতর্ক থাকার গুরুত্ব পুরুষদের চাইতে নারীদের জন্য বেশি জরুরি।
নারীদের কাছ থেকে আলাদা বাইয়াত
আর এই জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে আল্লাহ তাআলা আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি নারীদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করুন, তারা যেন ব্যভিচার না করে। এমনিতে তো রাসুলুল্লাহ নারীপুরুষ সকলের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করতেন। বাইয়াত মানে কমিটম্যান্ট বা অঙ্গীকার। তিনি কখনও বাইয়াত নিতেন এ মর্মে যে, শিরক করা যাবে না, নামায কায়েম করবে ইত্যাদি। এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বাইয়াত নিতেন। পুরুষদের কাছ থেকে নিতেন আর পর্দার আড়াল থেকে নারীদের কাছ থেকেও নিতেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি স্বতন্ত্রভাবে নারীদের কাছ থেকে বাইয়াত নিন যে, তারা যেন ব্যভিচার না করে। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ
হে নবী, ঈমানদার নারীরা যেন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের বাইয়াত নেয় যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না। (সূরা মুমতাহিনা ১২)
লজ্জাবতী নারীর প্রশংসা আল্লাহ নিজে করেছেন
লজ্জা তো থাকবে নারীপুরুষ সকলের মাঝে। কিন্তু নারীর মাঝে এটা থাকতে হয় আরো বেশি পরিমাণে। এজন্যই তো বলা হয়, লজ্জা নারীর ভূষণ। যার কারণে এক লজ্জাবতী নারীর প্রশংসা আল্লাহ কোরআন মজিদে করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ পুরুষদের জন্য এরকম স্বতন্ত্র প্রশংসা করেন নি। হযরত শোয়াইব আ. এর দুই মেয়ে ছিল। তাদের একজনকে তিনি মুসা আ. এর নিকট কোনো এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। তখন আসা-যাওয়ার মধ্যে তার লজ্জা এতটাই ছিল যে, আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন,
فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ
বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পা ফেলে ফেলে তার কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। (সূরা কাসাস ২৫)
মুফাসসিরে কেরাম লিখেছেন, যে নারী পর্দার সাথে চলবে, আপাদমস্তক লজ্জাবতী হবে তার জন্যও এ প্রশংসা প্রযোজ্য হবে। মা-বোনেরা, একটু ভাবুন তো, আপনার প্রশংসা যদি আরশ থেকে হয়, তখন না জানি আল্লাহ আপনার মাকাম কোথায় রেখেছেন!
(চলবে)
আরো পড়ুন–