اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا. بارك الله لنا ولكم في القرآن العظيم ونفعني وإياكم بما فيه من الآيات والذكر الحكيم وجعلني وإياكم من الصالحين. أقول قولي هذا وأستغفر الله لي ولكم فاستغفروه إنه هو الغفور الرحيم. اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى الِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
নিজেদের সংশোধন করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তিনি আমাদেরকে এখানে জমায়েত হওয়ার তাওফিক দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
দীনের অন্যতম সৌন্দর্য্য
সুপ্রিয় শ্রোতা! আমাদের এই দীনের অন্যতম সৌন্দর্য্য হল, পবিত্র জীবন যাপন করা, ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপন করা। আবু সুফিয়ান তখনও মুসলিম হন নি, গিয়েছিলেন তৎকালীন পরাশক্তি হিরাক্লিয়াসের দরবারে। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করেছিল, আরবের নবী তোমাদেরকে কী শেখায়? আবু সুফিয়ান উত্তর দিয়েছিল,
يَأْمُرُنَا بِالصَّلَاةِ وَالصَّدَقَةِ وَالْعَفَافِ وَالصِّلَةِ
তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন নামাযের, সদকার। আর নির্দেশ দেন, পবিত্র জীবন যাপনের, ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপনের এবং আত্নীয়তদের সঙ্গে সদ্ব্যহারের। (বুখারী ৫৫৪৯)
দেখুন, এই দীন যখন এসেছে তখন একজন অমুসলিমও মনে করত যে, ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপন-এই দীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এজন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ لِكُلِّ دِينٍ خُلُقًا وَخُلُقُ الإِسْلاَمِ الْحَيَاءُ
নিশ্চয় প্রত্যেক ধর্মের আলাদা সভ্যতা রয়েছে। আর ইসলামের সভ্যতা হল, লজ্জা। (ইবনু মাজাহ ৪১৮১)
অপর হাদিসে তিনি বলেন, বরং بَلْ هُوَ الدِّينُ كُلُّهُ দীনের পুরাটাই হল, লজ্জা। (মাকারিমুল আখলাক ৮৩)
আপনার প্রতি জিজ্ঞাসা
মা-শা-আল্লাহ, আমরা এখানে যারা এসেছি, প্রায় সকলেই সুলুকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখি। আমার ধারণা মতে আজকের এই মজলিসের প্রায় সকলেই তাহাজ্জুদ, মোরাকাবা, মোশাহাদা, মুজাহাদা, যিকর ও শোগলের সঙ্গে কিছুটা হলেও পরিচিত। তাই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এই পরিবেশে ব্যভিচার সম্পর্কে ওয়াজের দরকার কী? আমরা তো এই গুনাহয় লিপ্ত নই। তাহলে আপনার প্রতি আমার জিজ্ঞাসা- আপনি কি পরনারীর প্রতি কুদৃষ্টি দানে অভ্যস্ত? ইমো, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদিতে অবৈধ চ্যাটিং করেন কিনা? গান শুনতে ভালো লাগে কিনা? পরনারী দেখলে মন ইতিউতি করে কিনা? সিরিয়াল, হিন্দি ফ্লিম কিংবা আরও বিশ্রী কিছুর প্রতি আপনি আসক্ত কিনা? আপনি গোপন গুনাহ যেমন, মাস্টারবেশন (হস্তমৈথুন) বা পর্ণ মুভি দেখায় অভ্যস্ত কিনা? বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায় সেক্স্যুয়াল আলোচনা আপনার ভালো লাগে কিনা? অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে আছেন কিনা? মেয়েদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে আপনার ভাল লাগে কিনা?
আর মাস্তুরাতের মজলিসে যারা আছেন তাঁদের প্রতি অতিরিক্ত আরো কিছু জিজ্ঞাসা- আপনি কি বেপর্দায় অভ্যস্ত? আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা? পরপুরুষ দেখার পর আপনার মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় কিনা? সাজগোজ করে রাস্তায়, মার্কেটে, অফিসে কিংবা বেড়ানোর উদ্দেশে আপনি বের হন কিনা? হিন্দি সিরিয়ালের নেশা আপনার আছে কিনা? দেবর বা কাজিনদের সামনে আপনি নির্বিঘ্নে চলে আসেন কিনা?
উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে…
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে এর অর্থ হল, আপনি ব্যভিচারে লিপ্ত। কেননা আপনার আমার নবী ﷺ বলেছেন,
اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه
‘দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, যবানের ব্যভিচার হল অশোভন উক্তি, হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’ (মেশকাত খন্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩২)
আল্লাহর বান্দারা আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, ইবাদতে মন বসে না, গুনাহ ভালো লাগে ইত্যাদি। আসলে বৃষ্টি শরীরকে ভিজিয়ে দেয়, রোদ শরীর থেকে ঘাম বের করে আনে। অনুরুপভাবে এসব বিচিত্র ব্যভিচারের কিছু অনিবার্য ফলাফল আছে। তাহল, নামাযে মনোযোগ না বসা, জায়নামাযে বেশি সময় থাকতে না পারা, নেক কাজ ভালো না লাগা, অন্যান্য গুনাহর প্রতি উত্যুঙ্গ আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।
যাই হোক, আশা করি, এতক্ষণে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি যে, এ গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত আমরা কেউ নই; বরং কোন না কোনভাবে আমরা গুনাহটির সঙ্গে জড়িত।
গুনাহটির মূল কারণ
আল্লাহর বান্দা! গুনাহটির মূল কারণ তো হল, অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকা, আল্লাহর প্রতি মহব্বত না থাকা। তাঁর সামনে উপস্থিতির লজ্জা অন্তরে না থাকা।
পরনারীকে ‘খালাম্মা’ কিংবা ‘বোন’ বলছি, আর অন্তরে রাখছি ভিন্ন চিন্তা! কাজের মেয়েকে মা বলে ডাক দিচ্ছি অথচ অন্তরে লুকিয়ে আছে ভিন্ন কল্পনা! এমনও দেখা যায়, স্কুল ছুটি হলে বুড়ো মিয়া স্কুলের মেয়েদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে! এক পা কবরে চলে গেছে এখনও খবর শোনার আড়ালে অন্তরে লালন করে পরনারীর প্রতি নেশা! এগুলো কি আল্লাহর সামনে উপস্থিতির লজ্জা অন্তরে না থাকার আলামত নয়? আল্লাহ তো বলেছেন,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُهْلِكَ عَبْدًا، نَزَعَ مِنْهُ الْحَيَاءَ
আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ধ্বংস করতে চান, তার থেকে লজ্জা তুলে নেন। (ইবনু মাজাহ ৪০৫৪)
এজন্য আল্লাহর এক আরেফ বলেন,
فَاستَـحْيِ مِن نَظرِ الإِلَهِ وَقُل لَـهَا — إِنَّ الَّذِي خَلَقَ الظَّلَامَ يَـرَانِـي
লজ্জা কর রবের দৃষ্টিকে। নফসকে বল, যিনি অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাকে দেখেন।
(চলবে)
আরো পড়ুন–