১. ভূমিকা
২. আলোচ্য বিষয়
৩. হেদায়াত
১. ভূমিকা
২. আলোচ্য বিষয়
৩. হেদায়াতের গুরুত্ব
৪. হেদায়াতের এ পরিমাণ গুরুত্ব কেন?
৫. হেদায়াত না পাওয়ার চারটি অর্থ
৬. একটি প্রবাদ
৭. হেদায়াতের সম্পর্ক নাজাতের সাথে
৮. ঈসা আ. এর ঘটনা
৯. হেদায়াত পাওয়া না পাওয়ার দিক থেকে মানুষ তিন প্রকার
১০. একই ইবাদতের বিভিন্ন প্রকার সওয়াব
১১. আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার ইবাদতের প্রতিদান পাবে না কেন?
১২. হেদায়াতের উপর না থাকার ছয়টি আলামত
১৩. বিজ্ঞ বচন
১৪. ১নং আলামত : অহংকারের সাথে গুনাহ করা
১৫. দৃষ্টান্ত : মেয়ে বিয়ে
১৬. ২ নং আলামত : নেক কাজ করাটাকে লজ্জার মনে করা
১৭. দৃষ্টান্ত ১ : টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা
১৮. দৃষ্টান্ত ২ : পর্দা না করা
১৯. ৩ নং আলামত : উম্মতের নেককার জামাতের সাথে বিদ্বেষ রাখা
২০. উম্মতের নেককার জামাত কারা?
২১. একটি দ্বন্দ্ব ও তার নিরসন
২২. হাকিমুল উম্মতের অভিজ্ঞতা
২৩. আলেম ওলামার মতপার্থক্য কেয়ামতের আলামত
২৪. আলেম ওলামার ঐক্য থেকে সরে যাওয়ার পরিণতি গোমরাহী
২৫. আলেম ওলামার ঐক্য কাদিয়ানীরা কাফের
২৬. আলেম ওলামার ঐক্য জামাতে ইসলামী ইসলামী দল নয়
২৭. আলেম ওলামার ঐক্য আহলে হাদীসরা হাদীসের অনুসারী নয়
২৮. আলেম ওলামার ঐক্য সাদ তাবলীগ থেকে বের হয়ে গেছে
২৯. দলিল
৩০. দৃষ্টান্ত
৩১. আলেম ওলামার ঐক্য তিন হযরতজীর তরীকা সঠিক
৩২. তাবলীগ বিদ্বেষীরা গোমরাহ
৩৩. মারা-মারি নয়; মারা হয়েছে
৩৪. তালিবে ইলমের প্রতি উমর রাযি.-এর বিনয়তা
৩৫. তালিবে ইলমের প্রতি অঅবু হুরাইরা রাযি.-এর শ্রদ্ধা
৩৬. শনিবারের ঘটনা
৩৭. উম্মতের আলেম হবে কম; অনুসারী হবে বেশি
৩৮. দীন যিন্দা হোতা হায় হার কারবালা কে বা’দ
৩৯. জাপানের ঘটনা
৪০. ফিৎনাবাজদের অবস্থান সুনিশ্চিত
৪১. সাদপন্থী আলেমরা সর্ব নিকৃষ্ট আলেম
৪২. আহমদ ইবনে হাম্বল রহ.-এর উক্তি
৪৩. ইবনে আসাকির রহ.-এর উক্তি
৪৪. আল্লামা নিজামুদ্দিন শামযী রহ.-এর উক্তি
৪৫. ৪ নং আলামত : নসীহতকে বিরক্তিকর মনে করা
৪৬. দৃষ্টান্ত
৪৭. সুদখোরের কাণ্ড
৪৮. ৫নং আলামত অন্তরে হিংসা থাকা
৪৯. দৃষ্টান্ত
৫০. হাফেয ইবনুল কাইয়্যুম রন-এর বাণী
৫১. লোভ তিন প্রকার
৫২. হিংসা থেকে বাঁচার উপায়
৫৩. অহংকার থেকে বাঁচার উপায়
৫৪. লোভ থেকে বাঁচার উপায়
৫৫. হেদায়াতের উপর আসার রাস্তা
৫৬. আমার শায়খ ও মুর্শিদ
الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه ونعوذبالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا.من يهده الله فلا مضلّ له ومن يضلله فلاهادي له, واشهد أن لا اله الا الله وحده لا شريك له اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ. بارك الله لنا ولكم في القرآن العظيم ونفعني وإياكم بما فيه من الآيات والذكر الحكيم. اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى الِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
অত্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল মাআরিফ আল ইসলামিয়ার উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের চলতি অধিবেশনের সম্মানিত সভাপতি উপস্থিত ওলামায়ে কেরাম মুরুব্বিয়ানে ইযাম, দূর দূরান্ত থেকে আগত সর্বস্তরের মুসলমান ভাইয়েরা, পর্দার আড়ালে অপেক্ষারত আমার মা ও বোনেরা!
ভূমিকা
বর্তমান দুনিয়াতে ঐ জিনিসের সব চেয়ে বেশি অভাব, যে জিনিসের দাম আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি। আল্লাহ এ পর্যন্ত যত নবী এবং রাসূল পাঠিয়েছেন, সমস্ত নবী-রাসূলকে পাঠিয়েছেন মানব জাতির হেদায়াতের জন্য। শেষ নবী আমাদের নবী। শ্রেষ্ঠ নবী আমাদের নবী বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা ﷺ। তাঁর উপর নাযিলকৃত কুরআন আল্লাহ কেন পাঠিয়েছেন? আল্লাহ বলেন هدي للناس ‘মানুষের হেদায়েতের জন্য।’
আমরা প্রতিদিন ১২ রাকাত নামায সুন্নত পড়ি। ১৭ রাকাত ফরয হিসেবে পড়ি। বিতর ৩ রাকাত পড়ি ওয়াজিব হিসেবে। এই সুন্নত নামাযগুলো যদি আদায় না করে কেউ। ফজরের আগে ২ রাকাত, যোহরের আগে ৪ রাকাত পরে ২ রাকাত, মাগরিবের পরে ২ রাকাত, এশার পরে ২ রাকাত। ফকীহগণ লিখেছেন সে ব্যাক্তি গোনাহাগার হয়। অর্থাৎ, সর্বমোট ৩২ রাকাত নামায প্রতিদিন একজন মুসলমান পুরুষ নারী পড়তে বাধ্য। আর এই ৩২ রাকাত নামাযে আমরা সূরা ফাতেহা পড়ি। আর ৩২ বার আল্লাহর কাছে দোয়া করি। اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ হে আল্লাহ আপনি আমাদের হেদায়াত দান করুন।
হেদায়েতের গুরুত্ব
হেদায়াতের কী পরমিাণ গুরুত্ব হলে আল্লাহ এর জন্য তার সমস্ত নবীকে, সমস্ত রাসূলকে পাঠিয়েছেন। আর কী পরিমাণ গুরুত্ব হলে আল্লাহ প্রতিদিন ৩২বার আমাদের বাধ্য করেন তার কাছে হেদায়াত চাওয়ার জন্যে।
হেদায়েতের এ পরিমাণ গুরুত্ব কেন?
মূলত হেদায়াতের এ পরিমাণ গুরুত্ব কেন? কারণ এই জগতে এর নাম হেদায়াত হলেও জগৎ পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে এর নাম হয় নাজাত।
অর্থাৎ, এক ব্যক্তি এই জগতে হেদায়াত পেয়েছে, এ কথার অর্থ হলো আখেরাতে সে নাজাত পেয়েছে। আর এক ব্যক্তি এই জগতে হেদায়াত পায় নাই এ কথার সোজা অর্থ হলো, আখেরাতে তার নাজাতের কোনো ব্যবস্থা হয় নাই।
যেমনিভাবে স্থান পরিবর্তন হয়ে গেলে জায়গা পরিবর্তন হয়ে গেলে মুদ্রার নাম পরিবর্তন হয়। যেমন বাংলাদেশের মুদ্রার নাম টাকা। স্থান পরিবর্তন হয়ে ইন্ডিয়াতে এর নাম হয় রুপী। ইউরোপে গেলে ইউরো। আর এমেরিকাতে গেলে এর নাম হয় ডলার। সৌদি আরবে রিয়াল। কুয়েতে দিনার। ঠিক তেমনিভাবে এই জগতে নাম হলো হেদায়াত। আর একজন মানুষ যখন এ জগত থেকে পরিবর্তন হয়ে ইন্তেকাল হয়ে আখেরাতে পৌঁছায় তখন তার নাম হয় নাজাত।
কোনো ব্যক্তি হেদায়াত পেয়েছে এ কথার অর্থ হলো, তার নাজাতের ব্যবস্থা হয়ে তার ঠিকানা জান্নাত হয়েছে। আর কোনো ব্যক্তি হেদায়াত পায় নাই এ কথার অর্থ হলো- তার নাজাতের কোনো ব্যবস্থা হয় নাই।
হেদায়াত পাওয়ার চারটি অর্থ
একজন মানুষ হেদায়াত পায় নাই দুনিয়ার জগতে এর চারটি অর্থ। হেদায়াত পায় নাই এই কথার অর্থ হল-
এক. হয় এই লোকটা কাফের।
দুই. অথবা এই লোকটা মুশরিক
তিন. এই লোকটা বেদাতি
চার. অথবা এই লোকটা ফাসেক।
একটি প্রবাদ
আপনি কোন লোককে যদি জিজ্ঞেস করেন- তুমি হেদায়াতের উপর আছো কি না? বলবে- আছি অথবা কাউকে যদি আপনি গোমরাহ বলে পথভ্রষ্ট বলে গালি দেন তাহলে সে সাথে সাথেই ক্ষেপে যাবে। তাহলে এই কথার অর্থ হল দুনিয়ার জগতে আমরা সকলেই দাবী করি যে আমরা হেদায়াতের উপর আছি। আসলে একজন মানুষ হেদায়েতের উপর আছে কিনা এর ৬ আলামত।
একটি প্রবাদ আছে চকচক করলেই সোনা হয় না। একজন লোক মাটির নিচে একটা চকচকে জিনিস পেল সে মনে করলো- আমি তো ধনী হয়ে গেছি! কিন্তু যখন ওই বস্তুটা স্বর্ণকারের কাছে নিয়ে জহুরির কাছে নিয়ে কষ্টিপাথরে ঘষা দিয়ে দেখা গেল যে- ঐ বস্তুটি আসলেই সোনা নয়। ঠিক তেমনিভাবে হেদায়াতের উপর আছি মনে করলেই হেদায়াতের উপর আছি একথা ধরা যাবে না; বরং এর ৬টি আলামত। এর ভিত্তিতে বলা হবে এই লোকটা হেদায়াতের উপর আছে অথবা এই লোকটা হেদায়াতের উপর নাই।
আলোচ্য বিষয়
আমার মূল উদ্দেশ্য হলো, এই ৬ টি আলামত আপনাদের শুনানো এবং প্রত্যেকেই আমরা মিলিয়ে দেখব। আমার মাইকের আওয়াজ যে পর্যন্ত যাচ্ছে প্রত্যেকেই আমরা নিজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখব যে, এই আলামতগুলোর ভিত্তিতে আমি হেদায়াতের উপর আছি কিনা?
হেদায়াতের সম্পর্ক নাজাতের সাথে
যেহেতু হেদায়াতের সম্পর্ক নাজাতের সাথে সেহেতু আমাদের জিন্দেগীর কার কার হেদায়েতের দরকার আছে, আল্লাহকে দেখান! সবার দরকার আছে? আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়াত দান করুন! সকলে বলি, আমিন!!
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম এর ঘটনা। এই হেদায়াতের সম্পর্ক মূলত অন্তরের সাথে। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম একবার তার সাহাবীদের নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। ঈসা আলাইহিস সালাম এর সাহাবীদের ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় হাওয়ারী। কোরআনের ভাষায় তাদের নাম হাওয়ারী।
ঈসা আলাইহিস সালাম হাওয়ারীদের নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একটা কবরস্থানের মধ্যে একটা মাথার খুলি পাওয়া গেল। ওই মাথার খুলিটা নিয়ে তার কানের ভেতর দিয়ে কিছু একটা জিনিস ঢুকানোর চেষ্টা করলেন; কিন্তু ঢুকলো না। তাই অত্যন্ত তাচ্ছিল্যের সাথে এই মাথার খুলিটা তিনি ফেলে দিলেন।
আরেকটু দূর অগ্রসর হওয়ার পর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আরেকটা মাথার খুলি পেলেন। ঈসা আলাইহিস সালাম ওই খুলিটা নিয়ে তার ভেতরে কিছু একটা জিনিস ঢুকানোর চেষ্টা করলেন। এবার ওই বস্তুটা ঢুকলো কিন্তু ভেতরে থাকলো না, বের হয়ে গেল। ঈসা আলাইহিস সালাম মাথার খুলিটা তাচ্ছিল্যের সাথে ফুটবলের মত ফেলে দিলেন।
কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর আরেকটা কবরস্থানে তিনি মাথার আরেকটি খুলি পেলেন। এবার ওই মাথার খুলির ভেতরে তিনি কিছু একটা জিনিস ঢোকানোর চেষ্টা করলেন। যেই ঢুকানোর চেষ্টা করলেন ওটা ঢুকলো এবং ভেতরে রয়ে গেল। ঈসা আলাইহিস সালাম মাথার খুলিটা যত্ন সহকারে তার ব্যাগের ভেতর রাখলেন। তারপর তিনি একটা পবিত্র জায়গা দেখে ওই মাথার খুলিটা দাফন করলেন।
হাওয়ারীরা জিজ্ঞেস করল- ওগো আল্লাহর নবী! আপনি তিন মাথার খুলির সঙ্গে তিন ধরনের আচরণ কেন করলেন? ঈসা আলাইহিস সালাম উত্তর দিলেন- প্রথম মাথার খুলিটি যে লোকটার ছিল ওই লোকটি হেদায়াত পায় নাই। আর দ্বিতীয় যে মাথার খুলিটি ছিল সে হেদায়াত পেয়েছে; কিন্তু ধরে রাখতে পারে নাই। আর তৃতীয় মাথার খুলিটি যার ছিল সে হেদায়াত পেয়েছে এবং ধরে রেখেছে। এখান থেকে বুঝা যায় যে, হেদায়াত পাওয়া এবং না পাওয়ার দিক থেকে মানব জাতি ৩ প্রকার।
হেদায়াত পাওয়া এবং না পাওয়ার দিক থেকে মানুষ ৩ প্রকার।
এক প্রকারের মানুষ মোটেও হেদায়াত পায় না। আর এক প্রকারের মানুষ হেদায়াত পাওয়ার পর ধরে রাখতে পারে না। আর এক প্রকার মানুষ সম্পূণরূপে হেদায়েত পেয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, মূলত এই জগতে যে পরিমাণ একজন মানুষ হেদায়াত পাবে, ওই জগতে ওই পরিমাণে সে নাজাত পাবে।
একই ইবাদতের বিভিন্ন প্রকার সওয়াব
এজন্য হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, কোন ব্যক্তি তার নামাজের সওয়াব পাবে ১০%। কোন ব্যক্তি তার নামাজের সওয়াব পাবে ২০%। কোন ব্যক্তি তার নামাজের সওয়াব পাবে ৩০%। কোন ব্যক্তি তার নামাজের সওয়াব পাবে ৪০%। কোন ব্যক্তি তার নামাজের সওয়াব পাবে ৫০%। কেউ সম্পূর্ণটাই পাবে।
এরূপ হওয়ার কারণ কি? কারণ- যে পরিমাণ হেদায়াত ওই পরিমাণ নাজাত। মনে রাখবেন, হেদায়াত ছাড়া কোন মানুষ কোন আমলের সওয়াব পায় না। প্রতিদান পায় না। এর বড় প্রমাণ হলো- কুখ্যাত মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। সে হেদায়াত পেয়েছে কিন্তু ধরে রাখতে পারে নাই। এবার দেখুন- আপনাদের জিজ্ঞেস করি- শ্রোতাগণ সকলেই বলবেন! এই আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই সে নামায পড়তো কিনা? (শ্রোতাগণ) জি! সে নামাজের সওয়াব পাবে? (শ্রোতাগণ) জি না! অথচ হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন- তোমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যদি একটি নহর প্রবাহিত হয় আর সেখান থেকে একজন মানুষ দৈনিক পাঁচবার তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো ধৌত করেهَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ ‘তার গায়ের মধ্যে কোন ময়লা বাকি থাকে কি?’ সাহাবী বললেন যে,- قَالُوا: لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْء ‘তার গায়ের মধ্যে কোন ময়লা থাকার কথা নয়। তার গায়ের মধ্যে কোন ময়লা থাকে না।’ নবীজি ﷺ বলেন- فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্ত এমন- যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিত আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তার গুনাহগুলো মিটিয়ে দিবেন আর আখেরাতের নাজাতের ব্যবস্থা করে দিবেন।’
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার ইবাদতের প্রতিদান পাবে না কেন?
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কেবল যে নামায পড়তো এমন নয়, নবীজির পিছনে নামায পড়তো, পাঁচ ওয়াক্ত নামায প্রতিদিন নবীজির পেছনে দাঁড়িয়ে আদায় করার পরেও নামাযের এই ভেনিফিড, নামাযের এই সওয়াব সে কি পাবে? না! কেন কিসের অভাবে? হেদায়াতের অভাবে! হেদায়াতের অভাবে নামায তো দূরে থাক (নামায তো মস্ত বড় ইবাদত) একজন মানুষ সুবহানাল্লাহ বলার পরিমাণ সাওয়াবও পায় না।
কোন ব্যক্তির কাছে যদি হেদায়াত না থাকে তার নামায, তার রোযা, তার হজ, তার যাকাত, তার দাড়ি তার টুপি, তার পাগড়ী, তার চিল্লা তার সাল কিছু কাজে আসবে না।
অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট
আর যদি কারো কাছে হেদায়াত থাকে। নবীজী ﷺ বলেন- হেদায়াত যদি তোমার কাছে পরিপূর্ণ মাত্রায় থাকে أَخْلِصْ دِينَكَ يَكْفِكَ الْعَمَلُ الْقَلِيلُ হেদায়াত যদি তোমার কাছে বেশি থাকে আর আমল যদি কম থাকে, আল্লাহ তায়ালা তোমাকে নাজাত দিয়ে দিবেন। কম আমলই তোমার জন্য তোমার নাজাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
হেদায়াতের উপর না থাকার ৬ টি আলামত
তাহলে দেখার বিষয় হল- কারা আমরা হেদায়াতের উপর আছি আর কারা হেদায়াতের উপর নাই। ভূমিকা আর দীর্ঘায়িত না করে আমি এখন এই ৬ টি আলামত বলতে যাচ্ছি। এই আলামতগুলো বলার আগে একটি জিনিস স্মরণ করিয়ে দিই। সেটা হলো, আগেই বলেছি- এই আলামতগুলো অন্যের সাথে মিলানোর চেষ্টা করবেন না; বরং নিজের সাথে মিলিয়ে দেখবেন। আমাদের একটা বদ অভ্যাস আছে যখন কোন দোষের কথা শুনি, নেতিবাচক কথা শুনি, নেগেটিভ কথা শুনি তখন আঙ্গুলটা অন্যের দিকে দেই।
বিজ্ঞ বচন
বিজ্ঞজনরা বলেন- তুমি যখন আঙ্গুলটা অন্যের দিকে দিয়ে রাখো। তখন আঙ্গুল অন্যের দিকে যায় একটা আর তোমার দিকে থাকে কয়টা? কাজেই অন্যের দিকে হাত তুলবেন না; বরং নিজের জিন্দেগীর সাথে মিলাবেন।
এক ব্যক্তি হেদায়াতের উপর নাই। মুফাসসিরীনে কেরাম বলেন- এর সর্ব মোট ছয় আলামত। এখন আলামতগুলো শুনার জন্য আমরা সকলেই মানসিক পস্তুতি গ্রহণ করি।
১ নং আলামত অহংকার এর সাথে গুনাহ করা
এক নম্বর আলামত হল, কোন ব্যক্তি যদি অহংকারের সাথে গুনাহ করে। আলামত হলো- ওই লোকটা হেদায়েতের উপর নাই। একজন মুমিনের গুনাহ হয় আর একজন পথভ্রষ্ট ব্যক্তি অহংকার এর সাথে গুনাহ করে। দুটি এক হলো? নাকি ব্যবধান হলো? ব্যবধান হলো।
আপনি বলতে পারেন, হুজুর এটা আমার মধ্যে নাই। আমি একটা একটা দৃষ্টান্ত পেশ করব আর জিন্দেগীর সাথে মিলাবো। বাকি দৃষ্টান্তগুলো এর সাথে মিলিয়ে দেখব। দেখেন তো আমার আর আপনার মধ্যে এই আলামত আছে কিনা?
দৃষ্টান্ত : মেয়ে বিয়ে
ধরে নিন, আপনার মেয়ের বিয়ে লেগেছে। এর ১৫ দিন আগে আপনার পাশের ঘরের একটা মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ওই ঘরের যে মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল ওই ঘরের লোকদের সাথে আপনার কোন কারণে রেষারেষি হাড্ডাহাড্ডি ঝগড়া-লড়াই আছে। অপরদিকে আপনার ছেলে বিদেশ থেকে ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছে- তার বোনের বিয়ের জন্য, আপনার মেয়ের বিয়ের জন্য। আপনি এবার চিন্তা করলেন- বিয়ে কেমনে দিতে হয় আমাদের প্রতিবেশীকে দেখিয়ে ছাড়বো। এই চিন্তা করে একটা বড় গেটের ব্যবস্থা করলেন। গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করলেন। এই চিন্তা করে আপনার পরিবারের যারা যুবক আছে তারা গান-বাজনার আয়োজন করল। বলেন তো- এই যে গুনাহগুলো করেছে; কেবল কি গুনাহ হয়েছে নাকি অহংকারের সাথে গুনাহ করেছে? অহংকার এর সাথে গুনাহ করেছে!
কোন ব্যক্তি যদি অহংকার এর সাথে গুনাহ করে আলামত হলো- ওই লোকটা হেদায়াতের উপর নাই।
২ নং আলামত : গুনাহ করাকে ইজ্জতের কারণ মনে করা আর নেক কাজ করতে লজ্জাবোধ করা
দুই নাম্বার আলামত হল- কোন ব্যক্তি যদি গুনাহ করাটাকে ইজ্জতের কারণ মনে করে। আর নেক আমল করাটাকে লজ্জার কারণ মনে করে। শরমের কারণ মনে করে। আলামত হলো, ওই লোকটা হেদায়েতের উপর নাই।
দৃষ্টান্ত এক : টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা
যেমন রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন- পুরুষ তার লুঙ্গি পায়জামা প্যান্ট পরবে টাখনুর উপরে। কিন্তু টাখনুর নিচে পুরুষ তার কাপড় পরিধান করে কেন? সাধারণত দুই কারণে-
এক কারণ হলো- আমি টাখনুর উপর কাপড় পরে, টাখনুর উপর প্যান্ট পরে বের হলে মানুষ আমায় কী বলবে? দ্বিতীয় কারণ হলো- অহংকার। অথচ নবীজি ﷺ হাদিস এর মধ্যে বলেন-
إزرَةُ المُسلِمِ إِلى نصْفِ السَّاقِ، وَلاَ حَرَجَ أَوْ لاَ جُنَاحَ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الكَعْبَيْنِ، فَمَا كانَ أَسْفَلَ منَ الكعْبَينِ فَهَوُ في النَّارِ
মুসলমান পুরুষদের পোশাক হবে টাখনুর উপরে আর যদি টাখনুর নিচে যায় তাহলে সে জাহান্নামী। তার ওই অংশ জাহান্নামী। এখন এই পুরুষ টাখনুর উপরে প্যান্টটা উঠাতে পারে; তবে উঠায় নাই কেন? অহংকারের কারণে। টাখনুর উপরে প্যান্টটা উঠতে পারে নাই কেন? মানুষ কী বলবে! এটা আলামত হলো- এই লোকটা হেদায়আতের উপর নাই।
দৃষ্টান্ত দুই : পর্দা না করা
একজন নারী দীর্ঘদিন পর্যন্ত পর্দা করে নাই। এখন যখন ওয়াজ মাহফিলে শুনেছে পর্দাসংক্রান্ত বিধান পর্দা ফরজ। নবীজী বলেন- نِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ কিছু মহিলা পোশাক পরে উলঙ্গ হবে অর্থাৎ এমন টাইট-ফিট পোশাক পরবে; যার কারণে ওই মহিলা উলঙ্গ তো নয়; তবে পোশাক পরেও উলঙ্গ। অথবা এমন পাতলা পোশাক পরবে, যে পাতলা পোশাক পরার কারণে ওই মহিলা উলঙ্গ তো নয়; তবে পোশাক পরেও উলঙ্গ। অথবা এমন শর্টকাট ছোট পোশাক পরবে যার কারণে ওই মহিলার কিছু অংশ দেখা যায় কিছু অংশ দেখা যায় না। এর কারণে এই মহিলা উলঙ্গ তো নয়; তবে পোশাক পরেও উলঙ্গ। নবীজি ﷺ এই জাতীয় মহিলা সম্পর্কে বলেছেন- لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ ولا يَجِدْنَ رِيحَهَا এরা জান্নাতে তো যাবে না; জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।
এই হাদিসটা শোনার পর মহিলার চিন্তা হলো- আমাকে তো পর্দা করা দরকার। ঠিক তখনি তার আরেকটা চিন্তা মাথায় আসলো, যখন এতদিন পর্যন্ত পর্দা করি নাই, এতদিন পর্যন্ত মামাতো ভাই ফুফাতো ভাই দুলাভাইদের সাথে দেখা দিয়েছি, দেবরের সাথে দেখা দিয়েছি , এখন যদি নতুন করে পর্দা শুরু করি তাহলে মানুষ কী বলবে? মানুষ বলবে- বুজুর্গ হয়ে গেছে। সূফি হয়ে গেছে। অর্থা নেক আমল করতে সে লজ্জা করল।
যে ব্যক্তি নেক আমল করতে লজ্জা করে আলামত হলো- ওই লোকটা হেদায়াতের উপর নাই। আশা করি আমাদের বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না যে, আমরা কারা হেদায়োতের উপর আছি আর কারা হেদায়োতের উপর নাই।
৩ নং আলামত : উম্মতের নেককার জামাতের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা
তিন নং আলামত হলো- উম্মতের মধ্যে যারা নেককার তাদের সাথে যারা বিদ্বেষ রাখে, শত্রুতা রাখে, আলামত হলো- ওই লোকটা হেদায়াতের উপর নাই। আপনি বলতে পারেন- হুজুর এই আলামতটা আমার মধ্যে নাই। আমি দেখাচ্ছি, আছে কিনা?
উম্মতের নেককার জামাত কারা?
এই আলামতটা বুঝার আগে আমাদের বুঝতে হবে- উম্মতের নেককার কারা? সব চাইতে নেককার কারা? জিজ্ঞেস করতে হবে আল্লাহকে। দেখি আল্লাহ কী বলেন? আল্লাহ বলেন- قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ‘আপনি বলে দিন, যাদের কাছে ইলম আছে এবং যাদের কাছে ইলম নেই তারা কি সমান?’
ওলামায়ে কেরাম যারা আছেন তারা বুঝবেন, এখানেاستفهام টি হল توبيخ (ধমক এবং নিন্দা জ্ঞাপনার্থে) অর্থাৎ আল্লাহ বুঝাচ্ছেন- যে লোকটা আলেম আর যে লোকটা আলেম নয়, তাকে একমাপে দেখার এক ওজনে দেখার, এককরে দেখার একরকম করে দেখার সাহস তোমাকে কে দিয়েছে? কারণ যে লোকটা আলেম আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা অনেক বেশি। তাহলে বুঝে থাকলে বলুন- উম্মতের মধ্যে সবচাইতে বেশি মর্যাদাবান কারা? আলেম-ওলামা। কোরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-إِنَّمَا يَخْشَى اللَّهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَاءُ ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ওলামায়ে কেরামই কেবল তাঁকে ভয় করে।’ আর অন্য আয়াতে বলেন-إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে সে সবচাইতে বেশি মর্যাদাবান।’
এজন্য কোরআন এবং হাদিসকে সামনে এনে আমরা দেখলে যেটা বুঝতে পারি আমাদের সামনে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয় সেটি হল, উম্মতের সবচাইতে নেককার জামাতের নাম হল-ওলামায়ে কেরামের জামাত। এই কারণেই সাধারণ মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- ওলামায়ে কেরাম যা বলেন তোমরা তা শুনো।
একটি দ্বন্দ্ব ও তার নিরসন
এ কথা বললেই তখন অনেকে প্রশ্ন করে- হুজুর কার কথা শুনবো? এক আলেম বলেন একরকম, তো আরেক হুজুর বলেন আরেক রকম!
এজন্য সামনে ৫ মিনিট আমি যে কথাগুলো বলতে যাচ্ছি সেই কথাগুলো খুব মনোযোগের সাথে শুনার চেষ্টা করবেন। ইনশাআল্লাহ আমি গ্যারান্টি দিয়ে যাচ্ছি এর উপর আমল করতে পারলে মৃত্যু পর্যন্ত আপনি হেদায়াতের উপর থাকতে পারবেন।
হাকীমুল উম্মত এর অভিজ্ঞতা
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত আশরাফ আলী থানবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- যে লোকটা বলে কার কথা শুনব? কোন আলেমের কথা শুনব? তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা হল, এই লোকটা মূলত কোন আলেমের কথা শুনে না। আমার অভিজ্ঞতা হল, এই লোকটা মূলত কোন আলেমের কাছে যায় না।
আলেম ওলামার মতপার্থক্য কেয়ামতের আলামত
মূলত আলেম-ওলামার মাঝে পরস্পর মতবিরোধ থাকা, আলেম ওলামার মাঝে পরস্পর মতপার্থক্য থাকা, একেকজন একেক রকম করে বলা, এটা কেয়ামতের আলামত। বলুন, কিসের আলামত? কেয়ামতের আলামত। এই মতপার্থক্য কমার চিন্তা কখনো করবেন না, কমার আশা করবেন না। কারণ হাদিসের মধ্যে এসেছে, নবী আলাইহিস সালাম বলেন, প্রত্যেক বর্তমান ফিতনা ভবিষ্যতে ফিতনা থেকে ছোট হবে। কিন্তু বর্তমান ফিৎনার লোকজন মনে করবে- এর চাইতে বড় ফেতনা আর নাই।
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়- ওলামায়ে কেরামের মতপার্থক্য থাকা এটা কেয়ামতের আলামত। এই মতপার্থক্য কমবে না। আরো বাড়তে থাকবে। একদিকে ওলামায়ে কেরামের মতপার্থক্য বাড়তে থাকবে। আরেকদিকে আল্লাহ তাআলা এই ইসলামকে, এই দীনকে কেয়ামত পর্যন্ত হেফাজত করবেন ওলামায়ে কেরাম এর মাধ্যমে।
এই দুই কথার সমন্বয় কী?
তাহলে দুই কথার সমন্বয় কী? দুই কথার সমন্বয় হলো, এই ওলামায়ে কেরামের মাঝে পরস্পর মতপার্থক্য থাকার পরেও আলেমগণ একেকজন একেক রকম করে বলা সত্ত্বেও কিছু বিষয়ে এমন হবে যে, সে সব বিষয়ে আলেমগণ একমত হয়ে যাবেন। একেকজন একেক রকম করে বলা সত্ত্বেও কিছু বিষয়ে এমন হবে, যে বিষয় সম্পর্কে সব আলেম এক রকম করে বলবেন। পরস্পর মতপার্থক্য থাকাটা কেয়ামতের আলামত, আর কিছু কিছু বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম একমত হয়ে যাওয়াটা ইসলাম কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার আলামত।
আলেম-ওলামার ঐক্য থেকে সরে যাওয়ার পরিণতি গোমরাহী
আলেমগণ যখন কোন বিষয়ে একমত হয়ে যান তখন কোন সাধারণ মানুষ ওই একমত হয়ে যাওয়া কথাটা থেকে সরে গেলেই তখন সাথে সাথেই সে গোমরাহ হয়ে যায়। পথভ্রষ্ট হয়ে যায়।
আলেম ওলামার: ঐক্য কাদিয়ানীরা কাফের
যদি এই থিওরিক্যাল কথাটা বর্তমান সময়ের সাথে প্র্যাকটিক্যালিটি মিলিয়ে দেয়া হয় তাহলে আমাদের জন্য বুঝতে সুবিধা হবে। যেমন, আলেম ওলামার পরস্পরের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। একেক জন একেক রকম করে কথা বলেন। বলা সত্ত্বেও এই মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একদল তৈরি হয়েছিল, তারা তাদের নাম দিয়েছিল আহমদীয়া মুসলিম জামাত। আলেম-ওলামার মধ্যে মতপার্থক্য থাকার পরেও তারা এই জামাত সম্পর্কে একমত হয়ে তারা বলে দিলেন- আহমদীয়া মুসলিম জামাত ‘মুসলিম’ নয়; এরা অমুসলিম কাদিয়ানী বেইমান। (এটা হল কিয়ামত পর্যন্ত দীন টিকে থাকার আলামত)
আলেম ওলামার ঐক্য: জামাতে ইসলামী ইসলামী দল নয়
আলেম ওলামার মাঝে মতপার্থক্য আছে। মতপার্থক্য থাকার পরও একটা ইসলামী জামাত সম্পর্কে সকল বলে দিয়েছেন যে, এরা ইসলামী নয়। তাদের নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য আপন স্থানে। এটা হল কেয়ামতের আলামত। এই মতপার্থক্য থাকার পরেও তারা বললেন এই জামাতটা ইসলামী নয়। (এটা হল কিয়ামত পর্যন্ত দীন টিকে থাকার আলামত)
আলেম ওলামার ঐক্য: আহলে হাদীসরা হাদীসের অনুসারী নয়
আলেম ওলামার মতপার্থক্য আছে। তাদের নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকার পরও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একদল বের হলো। তারা নাম দিল আমরা হলাম- আহলে হাদিস। আলেম ওলামার মধ্যে মতপার্থক্য থাকার পরও তারা একমত হয়ে বলে দিলেন যে- এই আহলে হাদীস, এরা হাদীসের অনুসারী নয়; বরং হাদিস অনুসরণের নামে হাদিসের উপর মিথ্যারোপ করে যাচ্ছে। এর সাথে ধোঁকাবাজি করে যাচ্ছে।
আলেম ওলামার ঐক্য: সাদ তাবলীগ থেকে বের হয়ে গেছে
আলেম-ওলামারা মাঝে মতপার্থক্য আছে। মতপার্থক্য থাকার পরেও ওলামায়ে কেরাম একমত হয়ে বললেন- দাওয়াত ও তাবলীগের সাথে দীর্ঘদিন ছিল মাওলানা সাদ। তিনি এখন দাওয়াত ও তাবলীগ থেকে বের হয়ে গেছেন। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে বের হয়ে তিনি পথভ্রষ্ট হয়ে গেছেন।
সাদপন্থীদের গোমরাহ বলা উম্মতে মুসলিমার উপর আবশ্যক
যেমনিভাবে আলেম-ওলামা একমত হয়ে আহমদীয়া মুসলিম জামাতকে বেঈমান বলার সাথে সাথে সাধারন মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে তাদেরকে বেইমান বলা। যেমনিভাবে আহলে হাদিস ‘আহলে হাদিস’ নাম ধারণ করার পরেও আলেম-ওলামা একমত হয়ে বলে দিলেন- এই আহলে হাদিস মূলত ফেতনাবাজ গোষ্ঠী। তখন সাধারণ মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে তাদেরকে ফিতনাবাজ বলা। যেমনিভাবে তথাকথিত জামাতে ইসলামী ‘ইসলামী’ আলেম-ওলামা একমত হয়ে বলে দিলেন, এরা ইসলামী নয়। তখন সাধারণ মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে এদেরকে ইসলামী দল না বলা। ঠিক তেমনিভাবে সা’দের অনুসারী যারা- আলেম ওলামা তাদের নিজেদের মাঝে মতপার্থক্য থাকার পরও তার অনুসারীদের সম্পর্কে একমত হয়ে বলেছেন- এরা পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। এরা গোমরাহ হয়ে গেছে। সুতরাং সাধারণ মুসলমানদের উপর ওয়াজিব হয়ে গেছে তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলা।
দলিল
আপনারা বলতে পারেন, আপনি যে এই কথা বলেছেন এই কথার দলিল কী? আপনি যে এই কথা বললেন এ কথার প্রমাণ কী? দলিল হল কোরআন মাজিদোর আয়াত। আল্লাহ তা’আলা বলেন-شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলেন আল্লাহ সাক্ষী দিচ্ছেন- لا اله الا الله সাক্ষী দিচ্ছেন ফেরেশতাগণ لا اله الا الله আর সাক্ষী দিচ্ছেন ওলামায়ে কেরাম- لا اله الا الله
এবার আপনারা বলুন- আল্লাহ যদি কোন কথা বলেন তাহলে কোন মুসলমানের অধিকার আছে এই কথা থেকে সরে যাওয়ার? সবাই বলবেন, এই কথা থেকে সরে যাওয়ার অধিকার কারও আছে? না।
ঠিক অনুরূপভাবে ফেরেশতারা যখন কোন বিষয়ে সাক্ষী দেন তখন কোন মুসলমানের অধিকার আছে ওই সাক্ষ্য থেকে সরে যাওয়ার? না। মুফাসসিরীনে কেরাম বলেন- আল্লাহর সাক্ষীর সামনে বিদ্রোহ করার অধিকার যেমনিভাবে কোন মুসলমানের নাই। বিদ্রোহ করলে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে, গোমরাহ হয়ে যাবে। যেমনিভাবে ফেরেশতাদের সাক্ষীর উপর বিদ্রোহ করার অধিকার কোন মুসলমানের নাই। বিদ্রোহ করলেই ওই লোকটা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। গোমরা হয়ে যাবে। ঠিক তেমনিভাবে ওলামায়ে কেরাম একমত হয়ে যখন কোনো কথা বলবেন, তখন কোন মুসলমানের অধিকার নাই তার ব্যাপারে বিদ্রোহ করার। বিদ্রোহ করলেই ঐ লোকটা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।
মুফাসসিরীনে কেরামের এই কথা থেকে বুঝা গেল- আলেম ওলামার পরস্পর মতপার্থক্য থাকার পরেও যখন তারা একমত হয়ে কোন কথা বলেন, তখন সাধারন মুসলমানদের অধিকার থাকে না সেই একমত হয়ে যাওয়া কথা থেকে সরে যাওয়া।
চলবে…
হেদায়াতের ছয় আলামত : সা’দপন্থীদের গোমরাহ বলা উম্মতের উপর ওয়াজিব কেন? (পর্ব-২)