বালা-মুসিবত, দুঃখ-দুর্দশা: মুক্তির পথ

শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী
অনুবাদ: শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
হামদ ও সালাতের পর!
আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাযি.। বিশিষ্ট ফকিহ সাহাবী। তিনি বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলার কাছে কিংবা কোন ব্যক্তির কাছে যদি কারো কোন প্রয়োজন দেখা দেয় তাহলে সে যেন ভালভাবে ওযু করে। তারপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহ তাআলার প্রশংসাবাণী ও রাসূলুল্লাহ -এর উপর দুরুদ পাঠ করার পর যেন এ দোয়াটি পড়ে–
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ ، سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِين، اللهم إني أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلامَةَ مِنْ كُلّ إِثْمٍ لا تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلا غَفَرْتَهُ وَلا هَمًّا إِلا فَرَّجْتَهُ وَلا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ ঐ নামাজের কথা বলেছেন, যাকে আমাদের পরিভাষায় বলা হয় সালাতুল হাজত। কোন ব্যক্তি যদি কঠিন কোন সমস্যায় কিংবা বিশেষ কোন সংকটে পড়ে অথবা সে এমন কোন কাজ করতে চায় দৃশ্যত যা খুবই কঠিন তাহলে সে যেন সালাতুল হাজত পড়ে। তারপর রাসূল যে দোয়াটি শিক্ষা দিয়েছেন তা পাঠ করে নিজের প্রয়োজন পূরণের দোয়া করে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ যদি ওই কাজের মধ্যে তার জন্য কল্যাণ রাখেন তাহলে অবশ্যই পূরণ হবে। এ কারণেই যেকোনো প্রয়োজন ও সমস্যার সময় সালাতুল হাজত পড়া রাসূলুল্লাহ -এর সুন্নত।
মুসলিম এবং অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য
এ পৃথিবী উপায়-উপকরণের ক্ষেত্র। যেকোন মানুষ যেকোন প্রয়োজনে বাহ্যিক উপায়-উপকরণ অবলম্বন করবে। এটাই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে একজন মুসলিম এবং একজন অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য হল এই, একজন অমুসলিম যখন তার প্রয়োজন পূরণের জন্য কোন উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে তখন সে এর ওপর এতটাই ভরসা করে যে, সে মনে করে, উপায়-উপকরণ যখন ধরেছি তখন আমার কাজটা অবশ্যই হবে।
চাকরির তদবির
যেমন ধরুন, একজন বেকার লোক যার প্রয়োজন একটা ভালো চাকরি। এজন্য সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্ভাব্য সব জায়গাতেই সে দরখাস্ত করছে। পরিচিত কেউ থাকলে তার কাছে সুপারিশের জন্য ছুটে যাচ্ছে। এইসবই বাহ্যিক উপকরণ। কিন্তু এক্ষেত্রে একজন মুসলিম এবং একজন অমুসলিমের মাঝে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। অমুসলিম লোকটি এসব উপকরণের উপর পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। সে মনে করে, আমি চেষ্টা করব, যথাস্থানে আবেদন জানাব, সুপারিশ জোগাড় করবো। চাকরি তো আমার হবেই। এক্ষেত্রে তার দৃষ্টিটা সম্পূর্ণভাবে নিবদ্ধ থাকে গৃহীত উপকরণগুলোর উপর। তার আস্থা ও একমাত্র ভরসা এসব উপকরণের উপর। এটাই একজন অমুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গি।
পক্ষান্তরে একজন মুসলিম উক্ত উপায়-উপকরণ গ্রহণ করে কিন্তু তার দৃষ্টি এসব উপকরণের উপর থাকেনা। সে বিশ্বাস করে আমার এসব তদবির দ্বারা কিছুই হবে না। কোন মাখলুকই মূলত কিছুই করতে পারেনা। চেষ্টা-তদবিরের মাঝে যে শক্তি দৃষ্টিগোচর হয়–এ সবই আল্লাহর মালিকানায়। এসবের মালিক আল্লাহ। সুতরাং তিনি চাইলেই এসবের মাধ্যমে আমার উপকার হবে। আমার উদ্দেশ্য হাসিল হবে। এ কারণে একজন মুসলিম উপায় ধরার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে যে, হে আল্লাহ! প্রকৃত দাতা তো আপনি। আমার কর্তব্য হলো, চেষ্টা তদবির করা। সেটা আমি করেছি। এবার আপনি আমার উদ্দেশ্য পূরণ করে দিন।
অসুস্থ ব্যক্তির চেষ্টা
যেমন ধরুন, এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ল। এখন তাকে সুস্থ হতে হবে। এজন্য বাহ্যিক উপায়-উপকরণ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মতে তাকে ঔষধ সেবন করতে হবে। তার পরামর্শ মেনে চলতে হবে। এসবই বাহ্যিক উপায়-উপকরণ। কিন্তু এখানেও রয়েছে একজন মুসলিম ও একজন অমুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা। এক্ষেত্রে একজন অমুসলিমের পরিপূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকে ডাক্তার ও তার ব্যবস্থাপনার উপর। ভরসা থাকে তার ওষুধের উপর।
পক্ষান্তরে একজন মুমিন মনে করেন, রাসূলুল্লাহ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন চিকিৎসা গ্রহণ করো। তবে ডাক্তারের উপর যেন তোমার বিশ্বাস ভরসা না থাকে; বরং তোমার ভরসা যেন আল্লাহর উপরে থাকে। তিনি সত্যিকারের রোগ নিরাময়কারী। তিনি যদি ওষুধের মধ্যে কাজ করার ক্ষমতা না দেন তাহলে ওষুধ সেবন করেও কোনো কাজ হবে না। তাই দেখা যায়, একই ওষুধে একজন সুস্থ হয়ে যায় কিন্তু আরেকজন হয় না; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, একই ওষুধে একজন সুস্থ হয় অন্য জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটাই প্রমাণ করে যে, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়।
তদবিরের পাশাপাশি দোয়া
তাই রাসূলুল্লাহ -এর শিক্ষা হলো, তোমরা এ দুনিয়াতে মাধ্যম ও উপকরণ অবশ্যই গ্রহণ করবে। তবে এর উপর ভরসা করো না। ভরসা করবে মহান আল্লাহর উপর। উপায় অবলম্বন করার পর বিনয়ের সঙ্গে তার কাছে প্রার্থনা করবে, হে আল্লাহ! বাহ্যত আমার যেটা করার ছিল তা আমি করেছি। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য অর্জন ও প্রয়োজন পূরণ পুরোটাই আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং দয়া করে আমার চেষ্টাকে সফল করে দিন। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ থেকে একটি চমৎকার দোয়া বর্ণিত আছে। দোয়াটি এই–
اللَّهمَّ ! هذا الجَهدُ ، وعليكَ التُّكْلَانُ
হে আল্লাহ আমার সাধ্য যতটুকু ছিল তা আমি অবলম্বন করেছি। তবে ভরসা আপনার ঐ উপর। আপনি আপনার রহমতের উসিলায় আমার উদ্দেশ্য পূরণ করুন।
দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও
এ কথাগুলোই আমাদের ডাক্তার আব্দুল হাই রহ. বলতেন এভাবে যে, দীন মূলত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের নাম। একটু দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও তাহলে দুনিয়া ও দীন হয়ে যাবে। আর দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে দুনিয়া দুনিয়া থাকবে। যেমন, দল-মত নির্বিশেষে সকলেই বলে অসুস্থ হলে চিকিৎসা করো। এটা ইসলামেরও শিক্ষা। এবার দৃষ্টিভঙ্গি এভাবে পাল্টাও যে, চিকিৎসা অবশ্যই গ্রহণ করব তবে ভরসা চিকিৎসার উপর নয় বরং আল্লাহর উপর করব।
প্রেসক্রিপশনে هو الشافي লেখা
একটা সময় ছিল যখন মুসলিম চিকিৎসকগণ তাদের প্রেসক্রিপশনের শুরুতে هو الشافي কথাটা লিখে দিতেন। এটা ছিল ইসলামি জীবনাচারের স্নিগ্ধ নমুনা। সে সময়ে মুসলমানদের প্রতিটি কথা ও কাজে ইসলামী ভাবধারার নমুনা পাওয়া যেত। একজন চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন আর শুরুতে লিখে দিচ্ছেন, সুস্থতা দানকারী আল্লাহ তাআলা। এর অর্থ হল, চিকিৎসক চিকিৎসার শুরুতেই ঘোষণাপত্র দিয়ে দিচ্ছেন যে, আমার এ ব্যবস্থাপত্র সুস্থতা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেনা। সুস্থতা দেওয়ার মূল মালিক আল্লাহ তাআলা। চিকিৎসকের এজাতীয় চিন্তাধারাও নিশ্চয়ই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এভাবে প্রেসক্রিপশন লিখলে সেটাও ইবাদত হবে।
পশ্চিমা সভ্যতার অশুভ প্রভাব
কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার নিয়ন্ত্রনহীন অভিশাপ যেদিন থেকে আমরা গিলতে শুরু করেছি সেদিন থেকে আমাদের জীবনাচার থেকে ইসলামের প্রতীকগুলো বিদায় নেওয়া শুরু করেছে। যে কারণে বর্তমানে মুসলিম চিকিৎসকগণ তাদের ব্যবস্থাপত্রের শুরুতে هو الشافي কথাটি লিখেন না। বিসমিল্লাহও লিখেন না। বরং রোগী দেখে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের নাম লেখা শুরু করেন। আল্লাহর প্রতি ভরসা করার চিন্তাও করেন না। এর মূল কারণ হলো, আমরা আমাদের বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞান পেয়েছি অমুসলিমদের মাধ্যমে। যাদের মন-মানসিকতা আল্লাহর শক্তিতে বিশ্বাসী নয়। উপকরণের উপর তাদের পরিপূর্ণ আস্থা। সম্পূর্ণ বিশ্বাস তাদের বস্তুর উপর। আল্লাহর উপর তাদের কোন ভরসাই নেই।
ডাক্তার হও, তবে মুসলিম ডাক্তার হও
বিজ্ঞান শিক্ষায় আল্লাহ কোন বাঁধা দেননি। তাছাড়া জ্ঞান-বিজ্ঞান কারো পৈত্রিক সম্পদ নয়। বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা ব্যক্তি এর মালিক নয়। মুসলমানরাও বিজ্ঞানের দক্ষতা অর্জন করতে পারে। চাইলে তারাও পারে এ বিষয়ে পারদর্শিতা লাভ করতে। ইসলামের পক্ষ থেকে এতে কোনো বাধা নেই। তবে শর্ত আছে অবশ্যই। শর্ত হলো, নিজের দীন ও ঈমানকে হেফাজত করতে হবে। বিজ্ঞানচর্চায় ঈমান বিকাশের স্বাক্ষর রাখতে হবে। এমন তো নয় যে, চিকিৎসক হলে هو الشافي তথা আল্লাহ সুস্থতা দানকারী লেখাটা তার জন্য হারাম হয়ে যাবে! একজন চিকিৎসাবিজ্ঞান অর্জন করে তার ঈমান-বিশ্বাসের বিকাশ হিসেবে এইটুকু করতে পারবে না– এমন তো নয়। কিংবা তাকে সেকেলে বলা হবে– এমনটিও নয়। সুতরাং ডাক্তার হও; কোনো বাধা নেই। তবে মুসলিম ডাক্তার হও। নিজের ঈমানের বিকাশ ঘটাও। নিজের ব্যবস্থাপত্র এর স্বাক্ষর রাখো।
দৈব ঘটনা
বড় বড় চিকিৎসা বিজ্ঞানীও অনেক সময় আল্লাহর ক্ষমতা সরাসরি দেখেন। তারা দেখেন অনেক ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা ব্যর্থ হয়। অকার্যকর হয় তাদের যাবতীয় চেষ্টা-তদবির। তখন তারা বলে, আমাদের বাহ্যিক বিজ্ঞান ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তারা এরূপ ঘটনাকে আল্লাহর কুদরত না বলে বরং বলে,  এটা এক দৈব ঘটনা।
কোন কাজ দৈবক্রমে হয়না
আব্বাজান মুফতী শফী রহ. বলতেন, বর্তমানের মানুষ সাধারণ যুক্তিবিরোধী ঘটনাকে বলে দৈব ঘটনা। অথচ দৈব ঘটনা বলতে কিছু নেই। এ পৃথিবীর সব কিছুই ঘটে একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায়। তার ক্ষমতা বলে সবকিছু হয়। কারণ ছাড়া কোন কিছু ঘটলেই কিংবা কোন ঘটনার পেছনে যুক্তি খুঁজে না পেলে তা দৈবক্রমে হয়েছে বলা উচিত নয়। কারণ পৃথিবীর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ঘটনা সঞ্চালিত হয় আল্লাহর ইচ্ছায়। সুতরাং বলতে হবে, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এমনটি হয়েছে। এই যে ধরুন, ওষুধের মাঝে কাজ করার ক্ষমতা তো আল্লাহই দেন। সুতরাং ওষুধে কাজ না হলে এটা আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। এক্ষেত্রে মানুষের কোন হাত নেই। সবকিছু তো আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে।
সকল উপায়-উপকরণ তাঁরই অধীনে
এই জন্যই বলি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন মূল বিষয়। একজন বিশ্বাসী বান্দার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই আসল। একজন বিশ্বাসী বান্দার দৃষ্টিভঙ্গি হবে–উপায়-উপকরণ নয় বরং মূলত সব কিছু করেন আল্লাহ তাআলা। সবকিছু চলে তাঁরই মালিকানায়। তবে তিনি আমাদেরকে উপায়-উপকরণ গ্রহণের শুধু অনুমতিই নয় বরং নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ আমাদের জন্যই তিনি পার্থিব জগতের সব উপায়-উপকরণ সৃষ্টি করেছেন। তবে আমাদের জন্য এখানে তিনি একটি পরীক্ষার বিষয় রেখে দিয়েছেন যে, আমাদের দৃষ্টি কি এসব উপায়-উপকরণের উপর পড়ে থাকে কি-না, এগুলো অতিক্রম করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি মহান আল্লাহর উপর? আল্লাহর রাসূল মূলত সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনই সাধন করেছিলেন। তিনি  এই বিশ্বাস তাদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিয়েছিলেন যে, তোমাদের দৃষ্টি থাকবে উপায়-উপকরণের প্রতি নয় বরং এগুলোর স্রষ্টা মহান আল্লাহর প্রতি। তাই সাহাবায়ে কেরামও উপায়-উপকরণ গ্রহণ করতেন আল্লাহর নির্দেশেই। তাঁরা এটা করতেন আর পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতেন আল্লাহর উপর। বান্দা যখন উপায়-উপকরণ উপর নির্ভরশীল না হয়ে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হয় তখনই আল্লাহ তাআলা বান্দার হাতে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটান।
হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালিদ রাযি.-এর বিষপানের ঘটনা
বিখ্যাত সাহাবী হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাযি. সিরিয়ার একটি কেল্লা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। দীর্ঘ অবরোধের পর কেল্লাবাসী দিশেহারা হয়ে পড়ল। তারা সন্ধির প্রস্তাব দিল। এজন্য তারা নিজেদের দলপতিকে খালিদ রাযি.-এর কাছে পাঠাল। দলপতি যখন খালিদ রাযি.-এর কাছে এলো। তখন তিনি লক্ষ্য করলেন, দলপতির হাতে ছোট্ট একটি শিশি। জিজ্ঞেস করলেন, এই শিশির মধ্যে কি? কেন এনেছো এটি? সে জানালো, এটা বিষের শিশি। এজন্য নিয়ে এসেছি যে, যদি সন্ধি-আলোচনায় সফল হই তাহলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু যদি ব্যর্থ হই তাহলে আমারে ব্যর্থ-মুখ নিজের জাতিকে দেখাবো না বরং বিষপান করে আত্মহত্যা করব।
দীনি দাওয়াত ছিল সাহাবায়ে কেরামের আসল কাজ। হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাযি. তাই মুহূর্তের মধ্যে মেনে নিলেন যে, দীনের দাওয়াত পেশ করার এইতো মোক্ষম সময়! এই ভেবে তিনি দলপতিকে বললেন, একজন মানুষ এ বিষ পান করার সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে; এটাই তো তোমার বিশ্বাস। দলপতি বলল, অবশ্যই। আমার একশতভাগ বিশ্বাস–এর বিন্দু পরিমাণ যদি কেউ পান করে সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে। কারণ এই বিষ সম্পর্কে চিকিৎসক বলেছেন, আজ পর্যন্ত এর স্বাদের বিবরণ কেউ দিতে পারেনি। কারণ এটির বিন্দু পরিমাণ পান করার পর সে সঙ্গে সঙ্গে মারা গিয়েছে। এর স্বাদটা কেমন তা বলে যাওয়ার অবকাশ পায় নি। তাই আমি শিওর যে, এটা পান করলে সঙ্গে সঙ্গে আমি মারা যাব।
খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রাযি. দলপতিকে বললেন, আচ্ছা! যে বিষয়ের উপর তোমার এত অগাধ বিশ্বাস তা একটু আমাকে দাও তো! দলপতি শিশিটি খালিদ রাযি.-এর হাতে দিল। তিনি সেটি নিয়ে বললেন, দেখো, আসলে জগতের কোনো কিছুতেই কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহ যখন কোন কিছুর মধ্যে কোন ক্ষমতা দান করেন তখন সে ক্রিয়াশীল হতে পারে। এর পূর্বে নয়। আমি আল্লাহতালার নামে এই দোয়া পড়ে–
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ.
তোমার এই বিষের শিশি পুরোটাই পান করছি। দেখো তো আমার মৃত্যু হয় কিনা!
দলপতি বলল, দেখুন, আপনি কিন্তু নিজের উপর অবিচার করছেন। এটা খুবই মারাত্মক বিষ। এর এক ফোঁটাও যদি কারো জিহ্বায় পড়ে তাহলে নির্ঘাত সে মারা যাবে। কাজেই আপনি যা করার ভেবেচিন্তে করুন।
খালিদ রাযি. বললেন, ইনশাআল্লাহ, আমার কিছু হবেনা। এই বলে তিনি দোয়াটি পড়ে পুরো এক শিশি বিষ পান করে ফেললেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর কুদরতের ক্যারিশমা দেখিয়ে দিলেন। দলপতি বিস্ময়ঝরা দৃষ্টিতে দেখল খালিদ রাযি.-এর কিছুই হলো না। তাই সে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে গেল।
সকল কাজ আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে
সারকথা, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে চলে। এ বিশ্বাস সাহাবায়ে কেরামের হৃদয়ে বদ্ধমূল ছিল। তার ইচ্ছা ছাড়া পৃথিবীর কোন কিছুই অণু পরিমাণ সঞ্চালিত হয় না–এই বিশ্বাসে তারা এতটাই উজ্জীবিত ছিলেন, তারা মনে করতেন, এসব উপায়-উপকরণ মূলত ক্ষমতাহীন। এগুলোর নিজস্ব কোন শক্তি নাই। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
প্রকৃতপক্ষে একজন মানুষ যখন এ বিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে তখন ঐ আল্লাহ তার কুদরতের কারিশমা দেখান। আল্লাহর স্বভাব হল, বান্দা উপায়-উপকরণের সঙ্গে যত বেশি জড়াবে আল্লাহ তাকে তত বেশি এগুলোর উপর নির্ভরশীল করে দেন। আর যত বেশি আল্লাহর উপর ভরসা করবে তত বেশি তিনি উপায়-উপকরণ থেকে তাকে অমুখাপেক্ষী করে দেন। রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের প্রতিটি পদক্ষেপেই এ বিষয়টি দেদীপ্যমান ছিল।
নবীজির ঘটনা
নবীজি একবার কোন এক যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন। পথে তাঁবু ফেললেন। তিনি একা একটি গাছের নিচে শুয়ে পড়লেন। তাঁর জন্য পাহারার কোন ব্যবস্থা ছিল না। আর এটাকেই এক কাফের মহাসুযোগ হিসাবে লুফে নিল। উন্মুক্ত তরবারি নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে গেল প্রিয় নবীর একেবারে মাথার কাছে। ফলে প্রিয় নবীজির ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি বিস্মিত দৃষ্টিতে লক্ষ করলেন, তাঁরই মাথার পাশে দাঁড়িয়ে আছে একজন কাফের খোলা তরবারি নিয়ে। তাঁর চোখ খোলামাত্র কাফের লোকটি বলে উঠল, হে মোহাম্মদ! এমুহুর্তে আমার হাত থেকে তোমাকে বাঁচাবে কে? লোকটি ভেবেছিল, নবীজি একাকী আশেপাশে পাহারাদার নেই সুতরাং তিনি ভয় পেয়ে যাবেন। নিজেকে রক্ষা করার জন্য অস্থির হয়ে উঠবেন। কিন্তু সে আশ্চর্যজনক ভাবে লক্ষ্য করলো, নবীজি এর মাঝে আত্মরক্ষার কোনো ব্যাকুলতা নেই। অস্থিরতার কোনো ছাপ নেই। বরং তিনি শান্ত ও দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিলেন, আল্লাহ।
নবীজির অঙ্গভঙ্গিতে দৃঢ়তার ঝলক দেখে সে নিজেই এবার ঘাবড়ে গেল। তাঁর দেহ মন কেঁপে উঠলো। কাঁপা হাত থেকে তার তরবারিটি ছিটকে পড়ল। প্রিয় নবী উঠে শান্তভাবে তরবারিটি তুলে নিলেন এবং বললেন, এবার তোমাকে বাঁচাবে কে?
মূলত এই মুহূর্তে এটাই ছিল দাওয়াতের পদ্ধতি। নবীজি বলতে চেয়েছেন, দেখো, তোমার আস্থা ও নির্ভরতা ছিল তরবারিটার উপর। তরবারির স্রষ্টার উপর নয়। পক্ষান্তরে আমার ভরসা ছিল, তরবারির উপর নয় বরং তরবারির স্রষ্টার উপর।
এটাই ছিল নবীজি ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের আদর্শ। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে আদর্শের ওপরে গড়ে তুলেছিলেন। এর ফলে দেখা গেছে সাহাবায়ে কেরাম উপায়-উপকরণ অবলম্বন করতেন কিন্তু এর উপর ভরসা করতেন না। তাঁদের ভরসা ও নির্ভরতা হত একমাত্র আল্লাহর উপর।
প্রথমে উপায়-উপকরণ তারপর তাওয়াক্কুল
এক সাহাবীর ঘটনা। নবীজি -এর খেদমতে এলেন এবং সবিনয় আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন রাখাল। অনেক সময় উট নিয়ে মাঠে যাই। নামাজের সময় হয়ে যায়। আমি যখন নামাজ পড়তে দাঁড়াবো তখন উট কী করব? বেঁধে নিব না আল্লাহর উপর ভরসা করে ছেড়ে রেখে নামাজে দাঁড়াবো?
রাসুলুল্লাহ জবাব দিলেন,  إعْقِلْ ساقها و تَوَكَّل প্রথমে উটের পায়ে রশি লাগাও তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করো।
এখানে রাসুলুল্লাহ ভরসা করতে বলেছেন উটকে ছেড়ে রেখে নয় বরং বেঁধে রেখে। কারণ বেঁধে রাখার পর উটের রশিটা ছিড়ে যেতে পারে কিংবা রশিটা তুমি ভুলভাবেও বাঁধতে পার। তাই এর উপর ভরসা করো না। ভরসা কর আল্লাহর উপর। এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মুমিন উপায়-উপকরণ গ্রহণ করলেও ভরসা করে মহান আল্লাহর উপর। এটাই রাসূলুল্লাহ -এর শিক্ষা। প্রথমে উপায়-উপকরণ গ্রহণ কর, তারপর বল–
اللَّهمَّ ! هذا الجَهدُ ، وعليكَ التُّكْلَانُ
হে আল্লাহ আমি আমার চেষ্টা সম্পাদন করেছি। ভরসা তো আপনারই উপর।
মাওলানা রুমি রহ. আলোচ্য হাদিসটি একটি চরণের মাধ্যমে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষায়–
بہ توکل پایہ اشتر پیند
প্রথমে উটের পায়ে দড়ি বাঁধো, তারপর তাওয়াক্কুল কর।
কাজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি যদি একেবারে নিশ্চিত হয়
হযরত থানবী রহ. বলেছেন, মানুষ মনে করে, যেখানে উপায়-উপকরণের মাধ্যমে কাজ হওয়া না হওয়ার উভয় সম্ভাবনা থাকে;  শুধু সেক্ষেত্রে তাওয়াক্কুল করা উচিত এবং উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। কিন্তু যেখানে কাজ হয়ে যাওয়ার কেবল সম্ভাবনা নয়; বরং নিশ্চিয়তা থাকে–সেখানে তাওয়াক্কুল করা ও আল্লাহর কাছে চাওয়ার বিশেষ কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন, দস্তরখানে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। পেটে ক্ষুধা আছে। ইচ্ছা করলেই খেতে পারি। এখানে তাওয়াক্কুল কিংবা দোয়া করার প্রয়োজন নেই।
এটাই তাওয়াক্কুলের প্রকৃত ক্ষেত্র
হযরত থানবী রহ. বলেন, অথচ এটাই তাওয়াক্কুলের মূল ক্ষেত্র। এটাই আল্লাহর কাছে দোয়া কর আর আসল স্থান। কারণ, বাহ্যিক দৃষ্টিতে যা ঘটা সুনিশ্চিত, এমন ক্ষেত্রে যদি কেউ আল্লাহর কাছে দোয়া করে তখন এর অর্থ হবে, আমার সামনে উপস্থিত এসব বাহ্যিক উপায়-উপকরণের উপর আমার কোন ভরসা নেই। বরং হে আল্লাহ! আপনারই উপর আমার ভরসা। আপনার দেয়া রিজিক, আপনার সৃষ্টি, আপনার দেওয়া শক্তি ও আপনারই অনুগ্রহের উপর আমি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
সুতরাং খাবার সামনে এলেই দোয়া করবে, হে আল্লাহ! এই খাবার আমাকে পরিপূর্ণ কল্যাণের সাথে গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন। কেননা, যদিও খাবার সামনে উপস্থিত, হাত বাড়ালে নেওয়া যাবে। কিন্তু ভুলে যেও না যে, আল্লাহ যদি চান তাহলে পাতা খাবারও তিনি কেড়ে নিতে পারেন। পৃথিবীতে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যে, খাবার সামনে আনা হয়েছে। শুধু হাত বাড়াতে দেরি। এরই মধ্যে এমন কিছু ঘটেছে যার ফলে হাতের লোকমাটি পড়ে গেছে। যেমন খাবার তেমনি পড়ে আছে। সুতরাং খাবার সামনে থাকা অবস্থায়ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা চাই– হে আল্লাহ! খাবার গ্রহণের তাওফিক আমাকে দান করুন।
উভয় ক্ষেত্রেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে
আলোচনার শুরুতে যে হাদীসটি আপনাদের সামনে পেশ করা হয়েছে, তাতে রাসূলুল্লাহ এই শিক্ষাই দিয়েছেন যে, যদি তোমাদের কারো আল্লাহর কাছে কিংবা কোন ব্যক্তির কাছে কোন প্রয়োজন দেখা দেয়। এখানে রাসুলুল্লাহ দুটি কথা বলেছেন। কেননা, কিছু কাজ আছে এমন যেখানে মানুষের হাত থাকে। আবার কিছু কাজ আছে যেখানে মানুষের কোন হাত থাকে না বরং তা সরাসরি আল্লাহ দান করেন। যেমন, সন্তান।সন্তানদানে মানুষের কোন হাত নেই। সুতরাং কোন মানুষ কিংবা উপায়-উপকরণের কাছে সন্তান লাভের দোয়া করা যায় না। বরং সন্তান চাইলে সরাসরি আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। আবার কিছু কাজ আছে এমন যেগুলো আল্লাহ তা’আলা মানুষের মাধ্যমে পূরণ করেন। যেমন, চাকরি-বাকরি ইত্যাদি। এই উভয় ক্ষেত্রে ভরসা করা উচিত আল্লাহর উপর। তাঁর কাছেই দোয়া করা উচিত। কেননা তিনিই প্রকৃত দাতা।
ভালভাবে ওযু করবে
সারকথা হলো, এখন যদি তোমার হাতে সময় থাকে আর তোমার প্রয়োজনীয় কাজটিও এক্ষুণি জরুরী হয় তাহলে এর জন্য সালাতুল হাজাত পড়। সালাতুল হাজতের নিয়ম আল্লাহর রাসূল আলোচ্য হাদীসে উল্লেখ করেছেন এভাবে– প্রথমে ভালভাবে ওযু করবে। কোন রকম নয় বরং গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের সূচনা করতে যাচ্ছ এই ভাবনা মাথায় রেখে উত্তমরূপে ওযু করবে। ওযুর সকল সুন্নত ও আদবের প্রতি লক্ষ্য রাখবে । আমরা তো সব সময় ওযু করি। কিন্তু এক্ষেত্রে খুব তাড়াহুড়ো করে ফেলি। ফলে ওযু অবশ্য আদায় হয়ে যায় কিন্তু ওযুর জন্য যে বরকত রয়েছে তা থেকে বঞ্চিত থাকি।
ওযুর মাধ্যমে গুনাহগুলো ধোয়া হয়ে যায়
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ বলেছেন, যখন কোন বান্দা ওযু করে এবং এ উদ্দেশ্যে মুখ ধোয় তখন তার চেহারার গুনাহগুলো পানির সঙ্গে ঝরে পড়ে। যখন সে ডান হাত ধোয় তখন তার ডান হাতের গুনাহগুলো এবং যখন সে বাম হাত ধোয় তখন বাম হাতের গুনাহগুলোও ওযুর পানির সঙ্গে ঝরে পড়ে যায়। এভাবে ওযু করার সময় যতগুলো অঙ্গ ধোয়া হয় ততগুলো অঙ্গ দ্বারা কৃত গুনাহগুলো ঝরে পড়ে যায়। এজন্য খুব গুরুত্বসহ আদব ও সুন্নতগুলোর প্রতি যত্ন নিয়ে ওযু করা চাই।
আমাদের ডাক্তার আব্দুল হাই রহ. বলতেন, ওযু করার সময় ভাববে, যেমন চেহারা ধোয়ার সময় এটা ভাববে যে, রাসূলুল্লাহ -এর সুসংবাদ মতে আমার চেহারা দ্বারা কৃত গুনাহগুলো ধোয়া হয়ে যাচ্ছে। এখন হাত ধুচ্ছি আর হাত দ্বারা কৃত গুনাহগুলো ধোয়া হয়ে যাচ্ছে। পা ধোয়ার সময়ে একই ভাবনা কর। এ ধরনের ভাবনা যে ওযুতে থাকবে সেই ওযু এবং এরূপ ভাবনা যে অজুতে থাকবে না সেই ওযুর মাঝে আসমান-জমিন পার্থক্য রয়েছে । এরূপ ভাবনাসমৃদ্ধ ওযুর মধ্যে রয়েছে অন্যরকম এক অনুভূতি।
ওযু করার দোয়া
ওযুর ক্ষেত্রে কিছু সুন্নত ও আদব রয়েছে। যেমন, ওযু করার সময় কেবলামুখী হয়ে বসা। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া। ওযুর মাছনুন দোয়াগুলো পড়া। যেমন, এই দোয়া পড়া–

اللَّهمَّ اغفِرْ لي ذَنْبي، ووسِّعْ لي في داري، وبارِكْ لي في رِزقي

কালিমায়ে শাহাদাত পড়া–
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
এবং ওযুর শেষে দোয়া পড়া–
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ التَّوَّابِينَ ، وَاجْعَلْنِي مِنْ الْمُتَطَهِّرِينَ
সালাতুল হাজতের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই

সারকথা হলো, সালাতুল হাজতের উদ্দেশ্যে মনোযোগসহ ওযু করবে। এ নামাজ পড়ার জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। সাধারণভাবে অন্যান্য নামাজ যেভাবে পড়া হয় এটাও ওইভাবেই পড়বে। অনেকে বিভিন্ন নামাজের জন্য বিভিন্ন নিয়ম বানিয়ে রেখেছে। যেমন, অমুক নামাজে প্রথম রাকাতে এই সূরা এবং দ্বিতীয় রাকাতে ওই সূরা পড়া ইত্যাদি। এসব নিয়ম মনগড়া ও ভিত্তিহীন। সালাতুল হাজতের নামাজও এরকমই। রাসূলুল্লাহ সালাতুল হাজত পড়ার যে নিয়ম বলেছেন তাতে এ ধরনের বিশেষ কোনো নিয়মের বিবরণ পাওয়া যায় না।। কোন কোন বুযুর্গ, যেমন ডাক্তার আব্দুল হাই বলতেন, সালাতুল হাজতের প্রথম রাকাতে সূরা আলাম নাশরাহ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা নাছর পড়তে পার। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দুটি সূরা দিয়ে পড়লে অনেক কাজ হয়। সুতরাং এটাকে সুন্নত মনে করা যাবে না। সুন্নত মনে করলে এটাও বেদআত হয়ে যাবে। বুযুর্গদের অভিজ্ঞতা মনে করে বরকতের জন্য এরূপ আমল করা যাবে। সুন্নত মনে করে নয়।

নামাজের নিয়ত
এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি। তা হল, আজকাল মানুষ প্রত্যেক নামাযের জন্য আলাদা আলাদা নিয়ত খুঁজে থাকে। তারা মনে করে, ওই নিয়তটা উচ্চারণ না করলে নামাজই হবে না। এ কারণে এসে তারা বারবার প্রশ্ন করে, অমুক নামাজের নিয়ত কিভাবে হবে?
মনে রাখবেন, নিয়ত কোন শব্দের নাম নয়। নিয়ত অর্থ অন্তরের সংকল্প। সুতরাং আপনি যখন ঘর থেকে জোহর নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছেন তখন আপনার ঐ সংকল্পটাই নিয়ত। এখানে মুখে আলাদা করে নিয়ত উচ্চারণ করা জরুরি নয়।
দোয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা
ভালভাবে ওযু করে দু’রাকাত নামাজ পড়ার পর আল্লাহর কাছে দোয়া করবে। দোয়া কিভাবে করবে এটাও রাসুলুল্লাহ বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলে দিয়েছেন, সালাম ফিরানোর সাথে সাথে দোয়া শুরু করবে না। বরং এর আগে আল্লাহর প্রশংসা করবে। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। তারপর সবিনয়ে দোয়া করবে।
হামদ কেন প্রয়োজন?
প্রশ্ন হল, দোয়ার আগে আল্লাহর প্রশংসা কেন করতে হয়? এখানে এর কগ দরকার? ওলামায়ে কেরাম এর কারণ হিসেবে বলেছেন, এ দুনিয়াতে মানুষ যখন রাজা-বাদশাহর কাছে নিজের কোন প্রয়োজন নিয়ে উপস্থিত হয় তখন সে প্রয়োজনীয় বস্তুটি চাওয়ার পূর্বে রাজা-বাদশাহর সম্মানে কিছু কথা বলে। যেন বাদশাহ তার কথায় খুশি হয়ে তার মনের আশা পূর্ণ করে দেন। সুতরাং দুনিয়ার একজন সাধারণ বাদশাহর দরবারের রীতি যদি এমন হয় যে, তার কাছে কিছু চাইতে হলে এর পূর্বে তার প্রশংসা করতে হয় তাহলে যিনি সকল বাদশাহরও বাদশাহ, তাঁর কাছেও কিছু চাইতে হলে এর পূর্বে তাঁর প্রশংসা ও তাঁর প্রতি গভীর শুকরিয়া পেশ করা উচিত। যেন তিনি সন্তুষ্ট হয়ে আমার প্রার্থনাকে মঞ্জুর করে নেন।
দুঃখ-বেদনাও আল্লাহর নেয়ামত
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. একবার নিজের মজলিসে বলছিলেন, মানুষের জীবনে যেসব দুঃখ-কষ্ট বিপদ আসে, গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, মূলত এগুলোও আল্লাহ তাআলার নিয়ামত। অন্তর চক্ষু যাদের আছে তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন।
প্রশ্ন হলো, এগুলো কিভাবে আল্লাহ তাআলার নেয়ামত হয়? এর জবাব হলো, হাদীস শরীফে এসেছে, যারা দুঃখ-দুর্দশায় সবর করে আখেরাতের জীবনে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এর বিনিময় দান করবেন মহাপুরস্কার। এ কারণে এ পৃথিবীতে যারা খুব একটা বিপর্যয়ে পড়েনি আখেরাতে তারা আফসোস করবে। বলবে, আহা! পৃথিবীতে যদি আমরা কঠিন বিপদে পড়তাম। আমাদের গায়ের চামড়া যদি কাঁচি দিয়ে কুটিকুটি করে ফেলা হতো তারপর সবর করতে পারতাম তাহলে আজ ধৈর্যশীলদের মত আমরা বিপুল পুরস্কার পেতাম।
হাজী সাহেব রহ.-এর বিস্ময়কর দোয়া
হযরত হাজী সাহেব যখন এ বিষয়ে আলোকপাত করছিলেন, ঠিক তখনই এক ব্যক্তি এল। লোকটি নানা রোগ-শোকে জর্জরিত ছিল। সে এসে হাজী সাহেবকে বলল, হযরত! আমার জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ যেন এতসব মুসিবত থেকে আমাকে নিস্কৃতি দান করেন। মজলিসে হযরত থানবীও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা উপস্থিতরা তখন কৌতুহল বোধ করছিলাম যে, হযরত এখন কী করেন। কারণ হযরত তো এইমাত্র বললেন, বালা-মুসিবতও আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। আর এই ব্যক্তি দোয়া চাইছে যেন তার বালা-মুসিবত দূর হয়। এখন হাজী সাহেব যদি লোকটির কথামতো দোয়া করেন এর অর্থ হবে, আল্লাহর নেয়ামত ছিনিয়ে নেয়ার দোয়া তিনি করলেন। আর যদি দুঃখ-ব্যথা বহাল থাকার জন্য দোয়া করেন তবে তো লোকটি দোয়া চাইতে এসে আরো বেশি বিপদে পড়ল!
হযরত হাজী সাহেব সঙ্গে সঙ্গে হাত উঠালেন, দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! বিপদ-আপদ দুঃখ-বেদনা এসবই প্রকৃতপক্ষে আপনারই নেয়ামত। কিন্তু আল্লাহ গো! আমরা তো দুর্বল। তাই আমাদের দুর্বলতার দিকে লক্ষ্য করে দুঃখ-বেদনা নামক এই নেয়ামতকে সুস্থতার নেয়ামত তারা পরিবর্তন করে দিন।
বিপদের সময় নেয়ামতের কথা মনে রাখা চাই
মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন সে ভুলে যায়, তার প্রতি আল্লাহর কত দয়া ও অনুগ্রহ রয়েছে। যেমন, যার পেটে ব্যথা, সে একেই সবচেয়ে বড় বিপদ মনে করে। সে একথা ভাবে না, আল্লাহ তো আমাকে জিহ্বা দিয়েছেন, সেটা তো সুস্থ। আমার দাঁতগুলোতে তো কোনো ব্যথা নেই। আমার সারা শরীর তো অসুস্থ। ব্যথা তো শুধু পেটে। এখন পেটের পীড়ার জন্য অবশ্যই দোয়া করতে হবে। পাশাপাশি আল্লাহ যে আমাকে আরো অনেকগুলো নিয়ামত দিয়েছেন, এর জন্যও দোয়া করতে হবে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
হযরত মিয়া সাহেব এবং নেয়ামতের শুকরিয়া
আব্বাজানের একজন বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন মিয়া আসগর হুসাইন রহ.। জন্মগত বুজুর্গ ছিলেন তিনি। তার বুজুর্গি ছিল বিস্ময়কর। আব্বাজান বলেন, একবার সংবাদ পেলাম আমার এ ওস্তাদ অসুস্থ। জ্বরে ভুগছেন। আমি দেখতে গেলাম। গায়ে হাত দিয়ে দেখি, গা যেন পুড়ে যাচ্ছে। তাকে খুবই বিপর্যস্ত মনে হচ্ছিল। আমি সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, হযরত! কেমন বোধ করছেন? তিনি উত্তর দিলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমার চোখগুলো সুস্থ। কান দু’টিও রোগমুক্ত। জবানটাও কাজ করছি ঠিক মতো। এভাবে তিনি শরীরের প্রতিটি সুস্থ অঙ্গের নাম ধরে ধরে এর বিনিময়ে আলহামদুলিল্লাহ বললেন। সবশেষে বললেন, শরীরের জ্বরটা শুধু একটু জ্বালাচ্ছে। আল্লাহ যেন সুস্থ করে দেন এই দোয়া কর। একেই বলে কৃতজ্ঞ বান্দা। কষ্টে জর্জরিত অবস্থায়ও আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ করে। যে কারণে কঠিন সমস্যার মধ্যেও নিজের মাঝে স্বস্তি বোধ করে।
এজন্যই রাসুলুল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন, দোয়ার পূর্বে আল্লাহর প্রশংসা করবে। তাঁর কাছে দোয়া করার পূর্বে, নিজের অভাব পূরণের কথা বলার পূর্বে বর্তমান নিয়ামতগুলোর কথা মনে রাখবে এবং এর জন্য তাঁর শোকর আদায় করবে।
আল্লাহর প্রশংসার পর দুরুদ শরীফ কেন?
রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলার প্রশংসার পর আমার উপর দুরুদ পাঠাবে। প্রশ্ন হল, দোয়ার সময় দুরুদ কেন? আসল কথা হল, রাসুল উম্মতের জন্য ছিলেন সীমাহীন দয়াবান। তিনি চাইতেন, উম্মতের দেওয়া যেন কোন অবস্থাতেই বৃথা না যায়। আর দুরুদবিহীন দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে কোন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু দুরুদসমৃদ্ধ দোয়া কবুল হওয়ার গ্যারান্টি আছে। আমরা যখন দুরুদ পড়ি–
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ وعَلَى آلِه وَسَلِّمْ تَسْلِيمًا
তখন এর অর্থ দাঁড়ায়, আমরা বলি, হে আল্লাহ! মোহাম্মদ ও তার পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করুন।
এটা এমন এক প্রার্থনা, যা কখনো ব্যর্থ হয় না। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর প্রতি তো এমনিতেই রহমত নাযিল হতে থাকে। কিন্তু তিনি চেয়েছেন, আমার উম্মত যেন দোয়া করার পূর্বে আমার প্রতি দুরুদ পড়ে। কেননা দূরুদ তো নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। সেই সাথে বান্দার প্রার্থনাকেও প্রত্যাখ্যান করেন না। কেননা, আল্লাহর মতো মহান দয়াবানের ক্ষেত্রে এটা ভাবা যায় না যে, তিনি দোয়ার একাংশ কবুল করবেন এবং অন্য অংশ প্রত্যাখ্যান করবেন।
রাসুলুল্লাহ এবং হাদিয়ার বিনিময়
ডাক্তার আব্দুল হাই রহ. এর দ্বিতীয় কারণ হিসাবে বলতেন, হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূল -এর উপর যখনই যে কোন দরুদ পাঠ করা হয় তখনই ফেরেশতাগণ তা তাঁর কাছে নিয়ে যায় এবং আবেদন করে, আপনার অমুক উম্মত হাদিয়া স্বরূপ আপনার প্রতি এ দুরুদখানা পাঠিয়েছে। রাসূল যখন জীবিত ছিলেন তখন তাঁর স্বভাব ছিল, তাকে কেউ কোনো কিছু হাদিয়া দিলে তিনি হাদিয়াদাতাকে বিনিময় স্বরূপ অবশ্যই কিছু হাদিয়া দিতেন।
উক্ত দু’টি বিষয়কে সামনে রাখলে বোঝা যায়, রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর খেদমতে দুরুদ পাঠানোর পর তিনি এর বিনিময় দিবেন না–এটা কখনো হতে পারে না; বরং তিনি অবশ্যই এর বিনিময় দিবেন। আর সেই বিনিময়টা হবে এই–তিনি ঐ উম্মতের জন্য দোয়া করবেন যে, হে আল্লাহ! তার সমস্যার সমাধান করে দিন। আর এর বরকতে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ উম্মতের প্রার্থনা কবুল করে নিবেন। সুতরাং দোয়া করার পূর্বে দরুদ শরীফ পাঠ কর।
সালাতুল হাজতের দোয়া
রাসুলুল্লাহ বলেছেন, তারপর দোয়ার এ শব্দগুলো বলবে–
لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ     
এখানে আল্লাহ তায়ালার কয়েকটি গুণবাচক নাম নেওয়া হয়েছে। এ বরকতময় নামগুলোর বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। জানেন আমাদের নবীজিও। সুতরাং রাসুলুল্লাহ যখন আমাদেরকে এ শব্দগুলো বলতে বলেছেন তখন আমরা এর শব্দগুলোই বলবো। আমরা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারবোনা। এ শব্দগুলোর মধ্যে অবশ্যই কোন রহস্য আছে। যে কারণে আমাদের প্রয়োজন পূরণ হবে। শব্দগুলোর অর্থ হলো, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি ধৈর্যশীল ও দানশীল। ধৈর্য ও দান আল্লাহ তাআলার বিশেষ দু’টি গুণ। নসরুল্লাহ সম্ভবত এর দু’টি বিশেষ গুণ এজন্য বলেছেন, বান্দা যেন শুরুতেই এ কথা স্বীকার করে নেয়, হে আল্লাহ! আমি তো এই উপযুক্ত নয় যে, আমার দোয়া কবুল করবেন। আমার গুনাহর শেষ নেই। কিন্তু আপনি যেহেতু মহান ধৈর্যশীল সেহেতু আবেগ আপনাকে তাড়িত করতে পারেনা। আপনি ফয়সালা করেন আপনার মহান ধৈর্যগুণের ভিত্তিতেই। আমি আপনার সেই গুণের উসিলায় দোয়া করছি। আশা করি আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। উপরন্তু রহমতও দান করবেন।
তারপর বলেছেন,
سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
আল্লাহ পবিত্র। মহান আরশের মালিক।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِين
সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের প্রতিপালক।
اللهم إني أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ
হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে এমন সব জিনিস প্রার্থনা করছি যেগুলোর কারণে আপনি দয়া করেন।
وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ
আমি আপনার নিশ্চিত ক্ষমা চাই।
وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ
আমি প্রার্থনা করছি, যেন সকল কল্যাণ থেকে একটি অংশ আমিও পাই।
وَالسَّلامَةَ مِنْ كُلّ إِثْمٍ
সকল গুনাহ থেকে নিরাপত্তা চাই।
لا تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلا غَفَرْتَهُ
আমার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিন।
وَلا هَمًّا إِلا فَرَّجْتَهُ
আমার সকল অস্থিরতা ও দুর্দশা দূর করে দিন।
وَلا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ
হে সারা জাহানের অধিপতি! আপনার মর্জি মতো আমার সব প্রয়োজন পূর্ণ করে দিন।
উক্ত দোয়াটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য মুখস্ত রাখা জরুরী। এ দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আশা করি তিনি কবুল করে নিবেন।
প্রত্যেক প্রয়োজনকালে সালাতুল হাজত পড়বে
হাদীস শরীফে এসেছে, নবীজির অভ্যাস ছিল,
كان النَّبيُّ إذا حزَبَه أمرٌ صلَّى
যেকোনো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হলে তিনি প্রথমে নামাজ পড়তেন। তারপর আল্লাহর কাছে বিপদমুক্তির জন্য দোয়া করতেন। তাই এটা হওয়া উচিত একজন মুসলমানের আদর্শ। এটাই নবীজির তরীকা।
সময় হাতে না থাকলে শুধু দোয়া করবে
আলোচ্য বিশদ বিবরণ তখন প্রযোজ্য হবে যখন দু’রাকাত নামাজ পড়ার মতো সময় হাতে থাকবে। কিন্তু বিপদকালে যদি এতোটুকু সময় না পাওয়া যায় তাহলে নামাজ না পড়ে শুধু দোয়ার উক্ত শব্দগুলো বলে নিজের প্রয়োজন পূরণের দোয়া করবে। প্রতিটি প্রয়োজন আল্লাহর কাছেই পেশ করা উচিত। হাদীস শরীফে এসেছে, এমনকি জুতার একটি ফিতার প্রয়োজন হলেও আল্লাহর কাছে চাইবে। মূলত ছোট প্রয়োজন কিংবা বড় প্রয়োজন তো আমাদের দৃষ্টিকোণে। আল্লাহর কাছে কোন ছোট বড় নেই। জুতার ফিতা খোয়া যাওয়া কিংবা রাজত্ব চলে যাওয়া তাঁর কাছে এক সমান। তিনি সব প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ তিনি সবকিছুর উপর শক্তি ও ক্ষমতা রাখেন। তাঁর ক্ষমতা প্রতিটি জিনিসের উপর সমান। তাঁর কাছে কোন জিনিসই কঠিন নয়। তাই বড় হোক ছোট হোক প্রতিটি বিষয় আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করবে।
বালা-মুসিবত এবং আমাদের অবস্থা
বর্তমানে সবাই অস্থির। জান-মাল আজ নিরাপদ নয়। শঙ্কা ভিত্তি অস্থিরতা ও অশান্তি আজ সকলকেই তেড়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা কতজনই-বা আছি যে, সালাতুল হাজত পড়ে সংকট থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। ভুল স্বীকার করে এবার আল্লাহর দিকে ফিরে আসুন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
واخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين
Uncategorized