জিজ্ঞাসা–৪৪৭: বদ নজর দূর করার উপায় কি?–Dr.Shahidul islam qasmi
জবাব: বদ নজরে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা হল,
১- কোন ব্যক্তির নজর লেগেছে তা যদি জানা যায়, তবে তাকে ওযু করতে বলতে হবে। অতঃপর উক্ত অযুর পানি দ্বারা বদ নজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল করাতে হবে।
আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, كَانَ يُؤْمَرُ الْعَائِنُ فَيَتَوَضَّأُ ثُمَّ يَغْتَسِلُ مِنْهُ الْمَعِينُ যে ব্যক্তির বদ নজর অন্যের উপর লাগতো, তাকে অযু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতো। এরপর ঐ পানি দিয়ে তাকে গোসল করানো হতো, যার উপর বদ নজর লাগতো। (আবু দাউদ ৩৮৪০)
২- হাদীসে বর্ণিত দোয়াগুলো পাঠ করে আক্রান্ত রোগীর উপর ঝাড়-ফুঁক করতে হবে। যেমন,
আবু সাঈদ রাযি.থেকে বর্ণিত, জিবরীল আ. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেন,
بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
অর্থাৎ, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি, সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (মুসলিম ৫৫১২)
সুতরাং দোয়াটি পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বার বার ফুঁ দিন। ইনশা-আল্লাহ, ধীরে ধীরে বদ নজর কেটে যাবে।
৩- রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইন রাযি.-কে এই বাক্যগুলো দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেন,
أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
অর্থাৎ, আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহ্র কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সব ধরনের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরনের বদ-নজর হতে।
(দোয়াটি এক সন্তানের জন্য পড়লে ‘উয়ীযুকা’, দুইজনের জন্য ‘উয়ীযুকুমা’ আর দুইয়ের অধিক হলে ‘উয়ীযুকুম’ বলতে হবে।) (বুখারী ৩৩৭১)
আক্রান্ত ব্যক্তিকে উক্ত দোয়া তিন বা ততোধিক বার পড়ে ফুঁ দিবেন। ইনশা-আল্লাহ, ধীরে ধীরে রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে।
৪- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে পড়ে অথবা অন্যকে দিয়ে পড়িয়ে ফুঁ দিবেন।
আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَتَعَوَّذُ مِنَ الجَانِّ، وَعَيْنِ الإِنْسَانِ، حَتَّى نَزَلَتْ المُعَوِّذَتَانِ، فَلَمَّا نَزَلَتَا، أَخَذَ بِهِمَا وَتَرَكَ مَا سِوَاهُمَا
‘রাসূলুল্লাহ ﷺ (সূরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন। (তিরমিযী ২০৫৮)
৫- সূরা কলমের শেষের দুটি আয়াত এবং যে দোয়াগুলো উল্লেখ করলাম এ দোয়াগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিবেন। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে। আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে প্রয়োজনমত একবার বা একাধিক বার গোসল করবে। তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় রোগী আরোগ্য লাভ করবে। আলেমগণ এ আমলটির কথাও উল্লেখ করেছেন।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন– ☞ যাদু কাটানোর আমল ☞ বদ নজর বা নজর লাগা কি? এটা কি কোন কুসংস্কার? ☞ ☞ মনের সাহস বাড়ানোর আমল ☞ মনের ভয় কিভাবে দূর করবেন? ☞ শুচিবায়ু থেকে মুক্তির উপায় কী? ☞ পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী এবং স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার আমল ☞ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার দোয়া ও আমল ☞ ঋণ পরিশোধের দোয়া ☞ গর্ভবতী মায়ের আমল ও দোয়া