জিজ্ঞাসা–১০৫৫: কেউ যদি ব্যাংকে চাকরি করে সেই বেতনের টাকা দিয়ে বাড়ি করে তাহলে সেই বাড়ি থেকে যে বাড়ি ভাড়া এর টাকা পাওয়া যাবে সেইটা কি হালাল হবে নাকি হারাম? আর সেই বাড়ি ভাড়ার টাকায় কাউকে খাওয়ালে বা অতিথি অ্যাপায়ন করলে যে খাবে তার জন্য সেই খাবার খাওয়া কি জায়েজ হবে? উত্তরগুলো জানা খুবই জরুরী। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন । আমিন।–আব্দুল্লাহ ইসলাম।
জবাব:
এক. নিঃসন্দেহে উক্ত ব্যক্তি সুদী ব্যাংকে চাকুরী করে যা উপার্জন করেছেন তা হারাম।। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ ذَرُوْا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِیْنَ فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا فَاْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَ رَسُوْلِهٖ.
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো। যদি তোমরা মুমিন হও। যদি তা না কর তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের সংবাদ জেনে নাও। (সূরা বাকারা ২৭৮-২৭৯)
হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের রাযি. বলেন,
لَعَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ آكِلَ الرِّبَا، وَمُؤْكِلَهُ، وَكَاتِبَهُ، وَشَاهِدَيْهِ، وَقَالَ: هُمْ سَوَاءٌ
‘রাসূলুল্লাহ ﷺ সুদ ভক্ষণকারী, সুদ প্রদানকারী, সুদের লেখক এবং সাক্ষীগণকে অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, (গুনাহের ক্ষেত্রে) তারা সবাই বরাবর।’ (মুসলিম ১৫৯৮)
সুতরাং উক্ত উপার্জনের টাকা দিয়ে যে বাড়ি করেছেন তা ব্যবহার করা ও তা দ্বারা উপকৃত হওয়া নাজায়েয। এখন যদি উক্ত ব্যক্তি এগুলো থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চান, তবে যে পরিমাণ টাকা দ্বারা বাড়ি করেছেন সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সে পরিমাণ টাকা গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিলে তিনি উক্ত বাড়ির মালিক হয়ে যাবেন। তখন এ থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয হবে। ক্রয়মূল্য সদকা করার আগ পর্যন্ত ঐ সম্পদ হালাল হবে না এবং এর থেকে কোনো প্রকার উপকৃত হওয়াও তার জন্য বৈধ হবে না। এমনকি ক্রয়মূল্য সদকা করার পূর্বে বাড়ি ভাড়া থেকে যা আয় হবে তাও সদকা করে দিতে হবে। আর পিছনের জীবনে হারাম উপার্জন ও তার ভোগব্যবহারের কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তিগফারও করতে হবে। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৬১৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ৬/১৫০; হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৮/২৫৮)
দুই. বাকি কথা হল, উক্ত ব্যক্তির দাওয়াত গ্রহণ বা তার হাদিয়া গ্রহণ প্রসঙ্গে। এক্ষেত্রে শরিয়তের মূলনীতি হল, হারাম উপার্জনকারীর যদি হালাল-হারাম উভয় ধরনের সম্পদ থাকে এবং সে তার হারাম সম্পদ থেকে হাদিয়া দিয়ে থাকে তাহলে তা গ্রহণ করাও হারাম। আর যদি হালাল সম্পদ থেকে হাদিয়া দিয়ে থাকে তাহলে তা গ্রহণ করাও হালাল হবে।
তবে কোন সম্পদ থেকে দিয়েছে তা যদি জানা সম্ভব না হয়, তাহলে দেখতে হবে তার অধিকাংশ সম্পদ হালাল না হারাম। যদি অধিকাংশ সম্পদ হালাল হয়, তাহলে হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ। আর যদি অধিকাংশ সম্পদ হারাম হয়, তাহলে হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ হবে না।
আর যে সকল ক্ষেত্রে কিছুই জানা যাবে না, সে সকল ক্ষেত্রে হাদিয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার মাঝেই সতর্কতা রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন- জিজ্ঞাসা নং-৩৪৪ ও জিজ্ঞাসা নং–৪৩৮।
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী