বাবা মায়ের ভরণপোষণে মেয়েদের দায়িত্ব কতটুকু?

জিজ্ঞাসা–৬৭১: আসসালামু আলাইকুম। পিতা মাতার প্রতি তার মেয়েদের কি রকম দায়িত্ব থাকে? যদি তাদের কোন ছেলে সন্তান না থাকে, তাহলে বাবা মায়ের ভরণপোষণ এর দায়িত্ব মেয়েদের উপর কতখানি বর্তায়? যেহেতু মুসলমান মেয়েদের ঘরের বাইরে যাওয়া বা চাকরি করার প্রতি কিছুটা নিষেধাজ্ঞা আছে, আবার বাবা মায়ের প্রতিও অনেক দায়িত্ব কর্তব্য আছে, সেক্ষেত্রে একজন মেয়ের কি করণীয় তা ইসলামের আলোকে আলোচনার মাধ্যমে সাহায্য করলে উপকৃত হব।–Tahsina Jannat

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

এক- প্রিয় বোন, ইসলাম নারীর উপর কোনো ধরণের ভরণপোষণের দায়িত্ব অর্পণ করে নি। নারীকে এই সকল দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শুধুমাত্র তা পুরুষের ওপরই অর্পণ করা হয়েছে। এজন্যই জীবনের সবচে’ কঠিন কাজ জীবিকার জন্য ঘাম ঝরানো এবং উপার্জনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করা এবং যাবতীয় অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব থেকে তাকে সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দান করা হয়েছে এবং তা পুরুষের কাঁধে অর্পণ করেছে। এটা কন্যা হিসাবে, স্ত্রী হিসাবে এবং সন্তানের মা হিসাবে বাবার কাছে, স্বামীর কাছে এবং সন্তানের পিতার কাছে নারীর অধিকার ও প্রাপ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاء بِمَا فَضَّلَ اللّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُواْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ
পুরুষেরা নারীদের উপর কৃর্তত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। (সূরা নিসা ৩৪)
দুই- তবে নিজের মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণ- যার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ তাঁর বহু হাদিসে দিয়েছেন। উক্ত নির্দেশ ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক-উভয়ের প্রতি। কেননা ‘সন্তান’ বলতে ‘ছেলে-মেয়ে’ উভয়কেই বুঝানো হয়েছে। আর মা-বাবার জন্য সামর্থ্য অনুপাতে খরচ করা, তাঁদের খেদমত করা একপ্রকার ‘সদাচারণ’। সুতরাং মা-বাবা যদি এমন দরিদ্র হয় যে তাঁরা নিজের মালিকানার সম্পদে চলতে অক্ষম এবং অপরদিকে মেয়ে যদি সামর্থ্যবান ও বিত্তবান হয়, তাহলে তার ওপর মা-বাবার ভরণপোষণ ওয়াজিব। এক্ষেত্রে যদি তার সচ্ছল অন্য ভাইবোন থাকে তবে তাদের ওপরেও ভরণপোষণ সমানভাবে ওয়াজিব। সমর্থ থাকা সত্ত্বেও অভাবগ্রস্ত মা-বাবার খরচ না দিলে গুনাহগার হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/৫৬৪)
কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদব্যবহার কর। (সূরা ইসরা ২৩)
অন্যত্র তিনি বলেন,
يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُونَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ
তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কী তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে বস্তুই তোমরা ব্যয় কর, তা হবে পিতা-মাতার জন্যে,আত্নীয়-আপন জনের জন্যে…। (সূরা বাকারা ২১৫)
ইবন মুনযির রহ. বলেন,
أجمع أهل العلم على أن نفقة الوالدين الفقيرين اللذين لا كسب لهما ولا مال واجبة في مال الولد
ওলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত যে, সন্তান যদি সামর্থ্যবান হয় এবং মা-বাবা যদি গরিব হয় তাহলে তাঁদের জন্য খরচ করা সন্তানের ওপর ওয়াজিব। (আল মুগনি ১১/৩৭৫)
আর যদি আর পিতামাতা সচ্ছল হয় কিংবা সন্তান-সন্ততি সামর্থ্যবান না হয় তাহলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। যদিও এ ক্ষেত্রে উত্তম হলো, কষ্ট হলেও যথাসাধ্য মা-বাবারও ভরণ-পোষণের খরচ চালিয়ে যাওয়া। (তাবঈনুল হাকায়েক ৩/৬৪, রদ্দুল মুহতার ২/৬৭৮)

তিন- সুতরাং উল্লেখিত জিজ্ঞাসার আলোকে মেয়ে/মেয়েদের প্রতি সংক্ষেপে ইসলামের নির্দেশ হল–

১- সর্বাবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণ এবং তাঁদের যথাসাধ্য খেদমত করবে। তাঁদের খোঁজখবর নিবে। তাঁদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখবে। তাঁদের শরীয়তসম্মত আদেশ মেনে চলবে। যথাযথভাবে খেয়াল রাখবে তাঁরা যেন কষ্ট না পায়।

২- সামর্থ্যবান হলে নিজের মোহর থেকে অথবা নিজ মালিকানাধীন অন্য সম্পদ থেকে বাবা-মায়ের জন্য খরচ করবে।

৩- সামর্থ্যবান না হলে মা-বাবার ভরণ-পোষণ দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে এক্ষেত্রে মেয়ে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পিতামাতাকে সাহায্য করার চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে মেয়েরা ঘরোয়া পরিবেশে শিক্ষকতা করে বা কোন হস্তশিল্প (যেমন সেলাই এর কাজ) বা হাঁস মুরগী পালন করে তাদের সহযোগিতা করতে পারে। স্বামীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে শরীয়তের সীমায় বৈধ হয় এমন যে কোন কর্ম সংস্থানে যোগ দিয়ে উপার্জন করতে পারে।

৩-  সন্তান হিসেবে মেয়ে তার বাবা-মাকে যাকাত/সাদকা দিতে পারবে না। তবে নিজ স্বামীকে মহব্বতের সঙ্গে শশুর/শাশুড়ির খেদমত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এমনকি তার যাকাত/সাদকা থেকে হলেও। কিন্তু স্বামীর অগোচরে তার সম্পদ থেকে পিতামাতাকে কিছু দেওয়া জায়েয হবে না। তবে স্বামীর সন্তুষ্টির সাথে হলে কোন সমস্যা নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − thirteen =