মৃত্যুযন্ত্রণা কমানোর কোনো উপায় আছে কি?

জিজ্ঞাসা–৭৭১: মৃত্যুযন্ত্রণা কমানোর কোনো উপায় আছে কি?–Md Mahbub Alom

জবাব:

এক. হাদিস শরিফে এসেছে, আবূ কতাদাহ ইবনু রিবঈ রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ -এর কাছ দিয়ে একটা জানাযা বয়ে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘مُسْتَرِيحٌ وَمُسْتَرَاحٌ مِنْهُ ‘মুসতারীহুন’ ‘ওয়া মুসতারাহুন মিনহু’ (অর্থাৎ- সে শান্তিলাভকারী এবং তার প্রস্থানে শান্তি লাভ হয়)। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! ‘মুসতারীহুন’ ‘ওয়া মুসতারাহুন মিনহু’ এর মানে কি? রাসূলুল্লাহ বললেন, الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَالْعَبْدُ الْفَاجِرُ يَسْتَرِيحُ مِنْهُ الْعِبَادُ وَالْبِلاَدُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَابُّ ঈমানদার বান্দা হলে এ ব্যক্তি দুনিয়ার কষ্ট-মুসিবত থেকে নিস্কৃতি লাভ করবে। আর গুনাহগার বান্দা হলে এ ব্যক্তি থেকে আল্লাহর বান্দারা, অত্র অঞ্চল, বৃক্ষরাজি ও পশু-পাখি সবাই পরিত্রাণ লাভ করবে। (বুখারি ৬১৪৭)

হাফেজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. উক্ত হাদিসের ব্যখ্যায় লিখেছেন,

الْمَيِّت لَا يَعْدُو أَحَدَ الْقِسْمَيْنِ: إِمَّا مُسْتَرِيحٌ وَإِمَّا مُسْتَرَاحٌ مِنْهُ، وَكُلٌّ مِنْهُمَا يَجُوزُ أَنْ يُشَدَّدَ عَلَيْهِ عِنْدَ الْمَوْتِ، وَأَنْ يُخَفَّفَ، وَالْأَوَّلُ هُوَ الَّذِي يَحْصُلُ لَهُ سَكَرَاتُ الْمَوْتِ وَلَا يَتَعَلَّقُ ذَلِكَ بِتَقْوَاهُ وَلَا بِفُجُورِهِ، بَلْ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ التَّقْوَى ازْدَادَ ثَوَابًا، وَإِلَّا فَيُكَفَّرُ عَنْهُ بِقَدْرِ ذَلِكَ، ثُمَّ يَسْتَرِيحُ مِنْ أَذَى الدُّنْيَا الَّذِي هَذَا خَاتِمَتُهُ، وَقَدْ قَالَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ: مَا أُحِبُّ أَنْ يُهَوَّنَ عَلَيَّ سَكَرَاتُ الْمَوْتِ، إِنَّهُ لَآخِرُ مَا يُكَفَّرُ بِهِ عَنِ الْمُؤْمِنِ. وَمَعَ ذَلِكَ فَالَّذِي يَحْصُلُ لِلْمُؤْمِنِ مِنَ الْبُشْرَى، وَمَسَرَّةِ الْمَلَائِكَةِ بِلِقَائِهِ، وَرِفْقِهِمْ بِهِ، وَفَرَحِهِ بِلِقَاءِ رَبِّهِ: يُهَوِّنُ عَلَيْهِ كُلَّ مَا يَحْصُلُ لَهُ مِنْ أَلَمِ الْمَوْتِ، حَتَّى يَصِيرَ كَأَنَّهُ لَا يُحِسُّ بِشَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ
মৃতব্যক্তি হয় ‘মুসতারীহুন’ হবে কিংবা ‘মুসতারাহুন মিনহু’ হবে। উভয় শ্রেণীরই মৃত্যুযন্ত্রণা হতে পারে এবং নাও হতে পারে। প্রথম শ্রেণীর জন্য মৃত্যুযন্ত্রণা যদি হয় তাহলে এটা তাঁর তাকওয়া কিংবা গুনাহর আলামত নয়। বরং যদি তিনি মুত্তাকি হন তাহলে মৃত্যুযন্ত্রণার কারণে তাঁর সাওয়াব বৃদ্ধি পাবে কিংবা তাঁর গুনাহ অনুপাতে কাফফারা হয়ে যাবে। তারপর তিনি দুনিয়ার কষ্ট থেকে প্রশান্তি লাভ করবেন। এটাই তাঁর জীবনের অবসান। এজন্য উমর ইবনু আব্দুল আযীয রহ বলতেন, ‘আমার উপর মৃত্যুযন্ত্রণা হালকা হোক, এটা আমি চাই না। কেননা এটা মুমিনের গুনাহর সর্বশেষ কাফফারা।’ তবে উক্ত কষ্টের মাঝেও মুমিন যে সুসংবাদ পাবে, ফেরশতাদের সঙ্গে যে আনন্দময় সাক্ষাৎ হবে এবং তাঁদের যে বিনম্র আচরণ দেখবে, সর্বোপরি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের যে মহান আহ্লাদে সে আপ্লূত হবে তা তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণাকে হালকা করে দিবে, এমনকি তাঁর কাছে মনে হবে তিনি কিছুই অনুভব করেন নি। (ফাতহুল বারী ১১/৩৬৫)
সুতরাং প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মূল বিষয় হল, ঈমান-আমল ও তাকওয়া তথা গুনাহমুক্ত থাকার প্রতি যত্নশীল হওয়া। এটাই ‘ইনশা-আল্লাহ’ মৃত্যুযন্ত্রণাকে হালকা করে দিবে কিংবা বাস্তবে হালকা না হলেও হালকা অনুভূত হবে।
দুই. তবে হাদিস শরিফে এসেছে, শাহাদাতের মৃত্যুতে কোনো কষ্ট হয় না। যেমন আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেন,
مَا يَجِدُ الشَّهِيدُ مِنْ مَسِّ الْقَتْلِ، إِلَّا كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمْ مَسِّ الْقَرْصَةِ
তোমাদের কাউকে একবার চিমটি কাটায় যতটুকু ব্যাথা পাও শহীদ তার কতলের সময় ততটুকুই কষ্ট পায়। (তিরমিযি ১৬৬৮)

অনুরূপভাবে মরণাপন্ন ব্যক্তির সামনে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হলে তাঁর মৃত্যুযন্ত্রণা হালকা হয়। যেমন এই মর্মে ইমাম আহমদ রহ. একটি রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

عن صَفْوَان قال : حَدَّثَنِي الْمَشْيَخَةُ أَنَّهُمْ حَضَرُوا غُضَيْفَ بْنَ الْحَارِثِ الثُّمَالِيَّ (صحابي) حِينَ اشْتَدَّ سَوْقُهُ ، فَقَالَ : هَلْ مِنْكُمْ أَحَدٌ يَقْرَأُ يس ؟ قَالَ : فَقَرَأَهَا صَالِحُ بْنُ شُرَيْحٍ السَّكُونِيُّ ، فَلَمَّا بَلَغَ أَرْبَعِينَ مِنْهَا قُبِضَ . قَالَ : فَكَانَ الْمَشْيَخَةُ يَقُولُونَ : إِذَا قُرِئَتْ عِنْدَ الْمَيِّتِ خُفِّفَ عَنْهُ بِهَا . قَالَ صَفْوَانُ : وَقَرَأَهَا عِيسَى بْنُ الْمُعْتَمِرِ عِنْدَ ابْنِ مَعْبَدٍ

ছাফওয়ান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট শায়খগণ বর্ণনা করেন যে, গুযাইফ বিন হারেছ আছ-ছুমালী রাযি. যখন মরণাপন্ন হলেন তখন তাঁরা তার নিকট হাযির হলেন। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে? ছালেহ বিন শুরাইহ আস-সাকূনী তা তেলাওয়াত করলেন। চল্লিশ আয়াত তেলাওয়াত না করতেই তার জান কবয করা হল। আর শায়খগণ বলতেন, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করা হলে এর মাধ্যমে মৃত্যুর যন্ত্রণা হালকা করা হয়। বর্ণনাকারী ছাফওয়ান বলেন, ঈসা বিন মু‘তামির ইবনু মা‘বাদের নিকট সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করেছিলেন। ( মুসনাদে আহমাদ ১৬৫২১)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–
যিনি বাবার মৃত্যুর পর তাঁর সঙ্গে কৃত বেয়াদবির কারণে লজ্জিত…
রুহ বা আত্মার মৃত্যু হয় কিনা?
জন্মদিন বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা যাবে কি?
অলসতা, উদ্যমহীনতা ও উদাসীনতার চিকিৎসা
মৃত ব্যক্তির কাফনের কাপড় ছোট হলে এটা কি খারাপ কিছু?
ছেলে বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে অক্ষম হলে তাঁর আত্মা কষ্ট পাবে কি?
‘মরণের পর যা হওয়ার হোক’ এ কথা বলা…
তাওহীদ বাস্তবায়িত হয় কিভাবে এবং বাস্তবায়নকারী কী পুরস্কার পাবে?
শুধু ঈমানের উপর কি জান্নাতের সুসংবাদ; যদিও ব্যক্তি কবিরা গুনাহ করে?
স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর করণীয়
অপঘাতে মারা গেলে আখেরাতে ক্ষমা পাবে কিনা?
মৃতব্যক্তির কাফনের কাপড়ের উপর আহাদনামা লেখা যাবে কি?
সদকা মৃত-ব্যক্তির উপকারে আসে কি?
চিরকাল জান্নাতে এবং চিরকাল জাহান্নামে বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
 জান্নাত লাভের দশ আমল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven − 1 =