কবরের চার পার্শ্বে দেয়াল দেয়া এবং নেমপ্লেট লাগানোর হুকুম

জিজ্ঞাসা–১০৬১: কবরের চার পার্শ্বে দেয়াল দেওয়া যাবে কিনা? মৃত্যুের নামে কবরের সাথে দেওয়ালে কোন ফলকে তার নাম লেখা যাবে কিনা?– মোহাম্মদ রুহুল আমীন।

জবাব:

এক. আরববিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতা-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, যদি কবরস্থানে গবাদিপশু ঢুকে ঘোরাঘুরি করে তাহলে করণীয় কী? তারা উত্তরে লিখেছেন,

مرور المواشي عليها حرامٌ، وأصحابها آثمون لانتهاكهم حُرمة الأموات، ويَجبُ على أهل القرية أن يُسوِّروها محافظةً على الأموات ورعاية لحرمتهم

কবরস্থানে গবাদিপশু ঢুকে ঘোরাঘুরি করা হারাম। যেহেতু এর কারণে মৃতদের সম্মানহানি হয়, তাই যাদের কারণে এমনটি হয় তারা গুনাহগার হবে। মহল্লাবাসীর জন্য ওয়াজিব হল, মৃতদেরকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এবং তাদের সম্মান রক্ষার উদ্দেশ্যে চারিদিক দেয়াল দ্বারা ঘেরাও করে দেয়া। ( ফাতাওয়া আল-লাজনাতুদ্দায়িমা ৯/১২৬)

তবে কবরের উপর কোন ধরনের ভবন নির্মাণ করা যাবে না। কেননা, জাবের রাযি. বলেন,

نهى رسولُ الله ﷺ أن تُجصَّصَ القُبورُ، وأن يُكتَبَ عليها، وأن يُبنَى عليها، وأن تُوطأَ

‘রাসুলুল্লাহ ﷺ কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করা থেকে নিষেধ করেছেন।’  (জামে তিরমিযী ১০৫২)

দুই. কবর চেনার জন্য নাম-ঠিকানা সম্বলিত ফলক লাগিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে চিহ্ন দেওয়ার অবকাশ রয়েছে। শুধু কবর শনাক্ত করে রাখার প্রয়োজনে এমনটি করা নিষেধ নয়। সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত হয়েছে,

‘উসমান ইবনে মাযউন রাযি. ইন্তেকালের পর তাঁর দাফন শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ একজনকে একটি পাথর নিয়ে আসার আদেশ দেন। কিন্তু সেই সাহাবী তা বহন করে আনতে সক্ষম হননি। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ পাথরটি নিজ হাতেই বহন করে উসমান ইবনে মাযউন রাযি.-এর মাথার কাছে এনে রাখেন এবং বলেন, أَتَعَلَّمُ بِهَا قَبْرَ أَخِي ، وَأَدْفِنُ إِلَيْهِ مَنْ مَاتَ مِنْ أَهْلِي এর দ্বারা আমার (দুধ) ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করে রাখলাম এবং পরবর্তীতে আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে এর কাছাকাছি দাফন করব।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২০৬; আততালখীসুল হাবীর, ইবনে হাজার, ২/২৬৭)

এজন্য ইবনু কুদামা রহ. বলেন,

ولا بأس بتعليم القبر بحجر أو خشبة ، وقد علَّم النبي ﷺ قبرَ عثمان بن مظعون

‘কবরকে পাথর কিংবা কাঠ দ্বারা শনাক্ত করে রাখা নিষেধ নয়। ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন,  কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ উসমান ইবনে মাযউন রাযি.-এর কবর চিহ্নিত করে রেখেছিলেন।’ (আলমুগনি ২/১৯১)

তবে প্রয়োজন পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বা নাম-ঠিকানা ব্যতীত অন্য কিছু, যেমন কুরআনের আয়াত বা বড় বড় কবিতা কিংবা প্রশংসা-স্তুতিমূলক বাক্য ইত্যাদি লিখে রাখা নিষেধ। কেননা,’রাসুলুল্লাহ ﷺ কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করা থেকে নিষেধ করেছেন।’  (জামে তিরমিযী ১০৫২)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − fourteen =