চাচাত বোনের প্রতি চাচাত বোনের হিংসা; এর চিকিৎসা কী?

জিজ্ঞাসা–৬৬৯: আমার এক চাচাত বোন, ওকে ছোটবেলা থেকেই আমার পছন্দ না। হয়ত আমার মা আমার চেয়েও ওকে বেশী পছন্দ করতেন সবসময়ই, তাই। বয়সে আমার ছোট। বড় ধরনের কোনো কারন ছাড়াই আমার ওকে পছন্দ না। হয়ত হিংসে ছিলো কিন্তু এখন তাও বোধ হয় না। ওর সাথে কথা বলতে গেলে বা দেখা হলে কেমন একটা অতুস্টি ভাব হয়। ঝগড়া হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু এই মনোভাব থেকে বের হতে পারছি না। আমি যদি এখন ওকে এড়িয়ে চলি তাহলে কি আত্মীয়তা নষ্ট করা হবে? আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনোভাবেই ওকে মানতে পারিনা।–অহনা।

জবাব: প্রিয় বোন, বস্তুত আপনি আপনার চাচাত বোনের প্রতি এখনও হিংসাই লালন করছেন। তবে এই অনুভূতির প্রতি কিছুটা হলেও সচেতন হয়েছেন;  এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কেননা, রোগের চিকিৎসার আগে রোগ নিরূপণ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আপনি তা কিছুটা হলেও করতে সক্ষম হয়েছেন। আরবি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, الحاسد يحترق بنار الحسد অর্থাৎ হিংসুক হিংসার আগুনে জ্বলে। আপনি নিজে যে উক্ত প্রবাদের চাক্ষুষ প্রমাণ; আশা করি, তাও বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।

যাই হোক, আপনার উক্ত রোগের চিকিৎসা নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতিতে হতে পারে–

০১. হিংসার পরিণতি সম্পর্কে ভাবুন। নিজেকে মনে করিয়ে দিন হিংসার ক্ষতিকর দিকগুলো। যেমন, নবীজি বলেছেন, 

إِيّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النّارُ الْحَطَبَ أَوْ قَالَ الْعُشْبَ.

তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থেকো। কারণ হিংসা নেক আমলসমূহকে গ্রাস করে নেয়, যেভাবে আগুন গ্রাস করে লাকড়ি (অথবা ঘাস)। (আবু দাউদ ৪৯০৫)

০২. হিংসা মনের মধ্যে থাকলে সাধারণত আচরণে ফুটে ওঠে । সুতরাং আপনি যদি তাকে এড়িয়ে চলেন তাহলে আপনি যেন সবার সামনে তুলে ধরছেন যে, আপনি নিজের চাচাত বোনকে কতখানি হিংসা করেন। তখন এটা হবে আপনার হিংসারই বহিঃপ্রকাশ। এটাও এক প্রকার আত্মীয়তার বন্ধন নষ্ট করা। আর এতে কিন্তু আপনি তার তুলনায় কতটা তুচ্ছ এবং হীনমন্য , সবাই টের পাচ্ছে । সুতরাং এসব অপরিপক্বতা বন্ধ করে মনের বিপরীতে হলেও উদার হওয়ার চেষ্টা করুন এবং নিমোক্ত হাদিসটির ওপর আমল করুন। রাসুলুল্লাহ বলেছেন, 

لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِئِ وَلَكِنْ هُوَ الَّذِي إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী সে ব্যক্তি নয় যে ব্যক্তি অন্যে সম্পর্ক রক্ষা করলে সম্পর্ক রক্ষা করে। বরং ঐ ব্যক্তি হল আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকারী যার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা হলেও সে সম্পর্ক রক্ষা করে। (সহিহ বুখারী ৫৯৯১)

০৩. হিংসাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগান । চাচাত বোনের যে বিষয়টি নিয়ে হিংসা করছেন তা যেন তার মধ্যে আরও বৃদ্ধি পায়; মনের বিপরীতে এই দোয়া করুন এবং আপনিও সেটি অর্জন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন। রাসুলুল্লাহ বলেছেন, 

دَعْوةُ المرءِ المُسْلِمِ لأَخيهِ بِظَهْرِ الغَيْبِ مُسْتَجَابةٌ، عِنْد رأْسِهِ ملَكٌ مُوكَّلٌ كلَّمَا دَعَا لأَخِيهِ بخيرٍ قَال المَلَكُ المُوكَّلُ بِهِ: آمِينَ، ولَكَ بمِثْلٍ

মুসলিম ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করলে তা কবুল করা হয়। দোয়াকারীর মাথার কাছে একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা থাকে। যখনই তার ভাইয়ের জন্য কল্যাণের দোয়া করে, দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা তার দোয়া শুনে ‘আমীন’ বলতে থাকে এবং বলে তুমি যে কল্যাণের জন্য দোয়া করলে আল্লাহ অনুরূপ কল্যাণ তোমাকেও দান করুন। (মুসলিম ২৭৩৩)

০৪. এছাড়া নিম্নোক্ত দোয়া পড়ুন। এটি আল্লাহ উম্মতে মুহাম্মাদীকে শিখিয়ে দিয়েছেন,

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيْمَانِ وَلاَ تَجْعَلْ فِيْ قُلُوْبِنَا غِلاَّ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوْفٌ رَحِيْمٌ

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ও আমাদের সেইসব ভাইকে তুমি ক্ষমা কর। যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর তুমি আমাদের অন্তরে মুমিনদের বিরুদ্ধে কোনরূপ বিদ্বেষ সঞ্চার করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয়ই তুমি স্নেহশীল ও দয়াবান। (হাশর ১০)

০৫. মনকে হিংসামুক্ত রাখার জন্যে প্রিয় নবীজী উম্মতকে এই দোয়াটিও শিক্ষা দিয়েছেন,

رَبِّ تَقَبّلْ تَوْبَتِى وَاغْسِلْ حَوْبَتِى وَأَجِبْ دَعْوَتِى وَثَبِّتْ حُجّتِى وَاهْدِ قَلْبِى وَسَدِّدْ لِسَانِى وَاسْلُلْ سَخِيمَةَ قَلْبِى

প্রভু আমার! আপনি আমার তওবা কবুল করুন, আমার পাপরাশি ধুয়ে দিন, আমার ডাকে সাড়া দিন, আমার দলিল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করুন, আমার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার যবানকে সঠিক রাখুন আর আপনি আমার অন্তরের যাবতীয় কলুষতা দূর করে দিন। (আবু দাউদ ১৫১২)

আমরা আপনার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আপনার মনকে প্রশান্ত করে দেন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
আরো পড়ুন–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − 6 =